\s ভূমিকা । যোহন বাপ্তিস্মদাতার জন্ম ও তাঁর আগমনের সংবাদ।
\p
\v 1 প্রথম থেকে যাঁরা নিজের চোখে দেখেছেন, এবং বাক্যের (ঈশ্বরের সুসমাচারের) সেবা করে আসছেন, তাঁরা আমাদের যেমন সমর্পণ করেছেন,
\v 2 সেই অনুসারে অনেকেই আমাদের মধ্যে সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য বিষয়গুলোর বিবরণ লেখার পরিকল্পনা নিয়েছেন ।
\v 3 সে জন্য আমি নিজেও প্রথম থেকে সমস্ত বিষয়ে ভালোভাবে অনুসন্ধান করেছি বলে, মাননীয় থিয়ফিল, আপনাকেও সেই ঘটনা গুলোর বিস্তারিত বিবরণ লেখা ভালো মনে করলাম ।
\v 4 যেন, আপনি যেসব বিষয়ে শিক্ষা পেয়েছেন, সেসকল বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেন ।
\s5
\v 5 যিহূদিয়ার রাজা হেরোদের সময়ে অবিয়ের দলের মধ্যে সখরিয় নামে এক জন যাজক ছিলেন; তাঁর স্ত্রী হারোণ বংশের, তাঁর নাম ইলীশাবেৎ ।
\v 6 তাঁরা দু'জনেই ঈশ্বরের কাছে ধার্মিক ছিলেন, প্রভুর সমস্ত আদেশ ও নিয়ম মেনে নিখুঁতভাবে চলতেন ।
\v 7 তাঁদের সন্তান ছিল না, কারণ ইলীশাবেৎ বন্ধ্যা ছিলেন এবং দু'জনেরই অনেক বয়স হয়েছিল ।
\s5
\v 8 একদিন যখন সখরিয় নিজের পালা অনুসারে ঈশ্বরের সামনে যাজকীয় কাজ করছিলেন,
\v 9 তখন যাজকীয় কাজের নিয়ম অনুসারে গুলিবাঁটের মাধ্যমে তাঁকে প্রভুর মন্দিরে ধূপ জ্বালানোর জন্য মনোনীত করা হল ।
\v 10 ঐ ধূপ জ্বালানোর সময়ে সমস্ত লোক বাইরে প্রার্থনা করছিল ।
\s5
\v 11 তখন প্রভুর এক দূত তাঁকে দেখা দিলেন যিনি ধূপবেদির ডানদিকে দাঁড়িয়েছিলেন ।
\v 12 তাঁকে দেখে সখরিয় প্রচণ্ড ভয় পেলেন এবং ভয় তাঁকে গ্রাস করল ।
\v 13 কিন্তু দূত তাঁকে বললেন, "সখরিয়, ভয় পেও না, কারণ তোমার প্রার্থনা গ্রহণ করা হয়েছে, তোমার স্ত্রী ইলীশাবেৎ তোমার জন্য পুত্র সন্তানের জন্ম দেবেন ও তুমি তার নাম যোহন রাখবে ।
\s5
\v 14 আর তুমি আনন্দিত ও খুশি হবে এবং তার জন্মে অনেকে আনন্দিত হবে ।
\v 15 কারণ তিনি প্রভুর কাছে মহান হবেন এবং আঙ্গুর-রস বা মদ জাতীয় কোনও কিছুই পান করবেন না; আর তিনি মায়ের গর্ভ থেকেই পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হবেন;
\s5
\v 16 এবং ইস্রায়েল সন্তানদের মধ্যে অনেককে তাদের ঈশ্বর প্রভুর কাছে ফিরিয়ে আনবেন ।
\v 17 তিনি তাঁর সামনে এলিয়ের আত্মায় ও শক্তিতে চলবেন, যেন পিতাদের হৃদয় সন্তানদের দিকে ও আজ্ঞাবহ নয় তাদের ধার্মিকদের বিজ্ঞতায় পরিচালনা করতে পারেন । তিনি এসব করবেন যেন প্রভুর জন্য এক সুশৃঙ্খল প্রজা মণ্ডলী প্রস্তুত করতে পারেন ।"
\s5
\v 18 তখন সখরিয় দূতকে বললেন, "কীভাবে তা জানব ? কারণ আমি বুড়ো হয়েছি এবং আমার স্ত্রীরও অনেক বয়স হয়েছে ।"
\v 19 এর উত্তরে দূত তাঁকে বললেন, "আমি গাব্রিয়েল, ঈশ্বরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি, তোমার সঙ্গে কথা বলতে ও তোমাকে এ-সমস্ত বিষয়ের সুসমাচার দেওয়ার জন্য আমাকে পাঠানো হয়েছে ।
\v 20 আর দেখ, এসব যেদিন ঘটবে, সেদিন পর্যন্ত তুমি নীরব থাকবে, কথা বলতে পারবে না, কারণ আমার সমস্ত কথাই ঠিক সময়ে সম্পূর্ণ হবে, কিন্তু তুমি আমার কথায় বিশ্বাস করলে না ।"
\s5
\v 21 এদিকে লোকেরা সখরিয়ের জন্য অপেক্ষা করছিল এবং মন্দিরের মধ্যে তাঁর দেরি হচ্ছে দেখে তারা অবাক হতে লাগলেন ।
\v 22 পরে তিনি বাইরে এসে তাদের কাছে কথা বলতে পারলেন না, তখন তারা বুঝল যে, মন্দিরের মধ্যে তিনি নিশ্চয় কোনও দর্শন পেয়েছেন, আর তিনি তাদের কাছে বিভিন্ন ইশারা করতে থাকলেন এবং বোবা হয়ে রইলেন ।
\v 23 পরে তাঁর উপাসনার সময় শেষ হলে তিনি নিজের বাড়িতে চলে গেলেন ।
\s5
\v 24 এর পরে তাঁর স্ত্রী ইলীশাবেৎ গর্ভবতী হলেন এবং তিনি পাঁচ মাস পর্যন্ত নিজেকে গোপনে রাখলেন, বললেন,
\v 25 "লোকদের মধ্যে থেকে আমার লজ্জা মুছে দেওয়ার জন্য প্রভু এ সময়ে আমাকে দয়া করে এমন ব্যবহার করেছেন ।"
\v 26 ইলীশাবেৎ যখন ছয় মাসের গর্ভবতী তখন ঈশ্বর গাব্রিয়েল দূতকে গালীল দেশের নাসরৎ শহরে একটি কুমারীর কাছে পাঠালেন,
\v 27 তিনি দায়ূদ-বংশের যোষেফ নামে এক ব্যক্তির বাগদত্তা ছিলেন, সেই কুমারীর নাম মরিয়ম ।
\v 28 দূত তাঁর বাড়ীতে গিয়ে তাঁকে বললেন হে অনুগ্রহের পাত্রী, "এই বাড়ির মঙ্গল হোক; প্রভু তোমার সঙ্গে আছেন ।"
\v 29 কিন্তু তিনি এই কথাতে খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলেন এবং এই কথায় তাঁর মন তোলপাড় হতে লাগল, এ কেমন শুভেচ্ছা ?
\s5
\v 30 দূত তাঁকে বললেন, "মরিয়ম, ভয় পেয়ও না, কারণ তুমি ঈশ্বরের কাছে অনুগ্রহ পেয়েছ ।
\v 31 আর দেখ, তুমি গর্ভবতী হয়ে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেবে ও তাঁর নাম যীশু রাখবে ।
\v 32 তিনি মহান হবেন ও তাঁকে মহান ঈশ্বরের পুত্র বলা হবে এবং প্রভু ঈশ্বর তাঁর পিতা দায়ূদের সিংহাসন তাঁকে দেবেন;
\v 33 তিনি যাকোবের বংশের উপরে চিরকাল রাজত্ব করবেন ও তাঁর রাজত্ব কখনো শেষ হবে না ।"
\s5
\v 34 তখন মরিয়ম দূতকে বললেন, "এ কি করে সম্ভব ? কারণ আমি তো কুমারী ।"
\v 35 উত্তরে দূত তাঁকে বললেন, "পবিত্র আত্মা তোমার উপরে আসবেন এবং মহান ঈশ্বরের শক্তি তোমার উপরে ছায়া করবে; এ কারণে যে পবিত্র সন্তান জন্মাবেন, তাঁকে ঈশ্বরর পুত্র বলা হবে ।"
\s5
\v 36 আর শোন, "তোমার আত্মীয়া যে ইলীশাবেৎ, তিনিও বৃদ্ধা বয়সে পুত্রসন্তান গর্ভে ধারণ করেছেন; এখন তিনি ছ'মাসের গর্ভবতী ।
\v 37 কারণ ঈশ্বরের কোনও কথাই বিফল হবে না ।"
\v 38 তখন মরিয়ম বললেন, "দেখুন, আমি প্রভুর দাসী; আপনার কথা মতো সমস্তই আমার প্রতি ঘটুক।" পরে দূত তাঁর কাছ থেকে চলে গেলেন ।
\s5
\v 39 তারপর মরিয়ম প্রস্তুত হয়ে পাহাড়ী অঞ্চলে অবস্থিত যিহূদার একটা শহরে গেলেন,
\v 40 এবং সখরিয়ের বাড়িতে গিয়ে ইলীশাবেৎকে শুভেচ্ছা জানালেন ।
\v 41 যখন ইলীশাবেৎ মরিয়মের শুভেচ্ছা শুনলেন, তখনই তাঁর গর্ভের শিশুটি নেচে উঠল ও ইলীশাবেৎ পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হলেন,
\s5
\v 42 এবং তিনি চেঁচিয়ে বলতে লাগলেন, "নারীদের মধ্যে তুমি ধন্যা এবং ধন্য তোমার গর্ভের ফল ।
\v 43 আর আমার প্রভুর মা আমার কাছে আসবেন, এমন সৌভাগ্য আমার কি করে হল ?
\v 44 কারণ দেখ, তোমার কাছ থেকে শুভেচ্ছা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমার গর্ভের শিশুটি আনন্দে নেচে উঠল ।
\v 45 আর ধন্যা যিনি বিশ্বাস করলেন, কারণ প্রভুর কাছ থেকে যা কিছু তাঁর সমন্ধে বলা হয়েছে, সে - সমস্তই সফল হবে ।"
\v 47 আমার আত্মা আমার ত্রাণকর্তা ঈশ্বরে আনন্দিত হয়েছে ।
\s5
\v 48 কারণ তিনি আমার মতো তুচ্ছ দাসীকে অনুগ্রহ করেছেন; আর এখন থেকে পুরুষ পরম্পরায় সবাই আমাকে ধন্যা বলবে ।
\v 49 কারণ যিনি সর্বশক্তিমান, তিনি আমার জন্য মহান মহান কাজ করেছেন এবং তাঁর নাম পবিত্র ।
\s5
\v 50 আর যারা তাঁকে ভয় করে, তাঁর দয়া তাদের উপরে বংশ-পরম্পরায় থাকবে ।
\v 51 তিনি তাঁর বাহু দিয়ে শক্তিশালী কাজ করেছেন, যারা নিজেদের হৃদয়ের কল্পনায় অহংকারী, তাদের ছিন্নভিন্ন করেছেন ।
\s5
\v 52 তিনি শক্তিশালী লোকদের সিংহাসন থেকে নামিয়ে দিয়েছেন ও নম্র লোকদের উন্নত করেছেন,
\v 53 তিনি ক্ষুধার্তদের উত্তম উত্তম জিনিস দিয়ে পরিপূর্ণ করেছেন এবং ধনীদের খালি হাতে বিদায় করেছেন ।
\s5
\v 54 তিনি তাঁর দাস ইস্রায়েলের উপকার করেছেন, যেন আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে করা প্রতিজ্ঞা ও নিজের করা প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী,
\v 55 অব্রাহাম ও তাঁর বংশের জন্য তাঁর করুনা চিরকাল মনে রাখেন ।"
\s5
\v 56 আর মরিয়ম প্রায় তিন মাস ইলীশাবেতের কাছে থাকলেন, পরে নিজের বাড়িতে ফিরে গেলেন ।
\s যোহনের জন্ম।
\p
\v 57 এরপর ইলীশাবেতের প্রসবের সময় সম্পূর্ণ হলে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিলেন ।
\v 58 তখন, তাঁর প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনেরা শুনতে পেল যে, প্রভু তাঁর প্রতি মহা দয়া করেছেন, আর তারাও তাঁর সঙ্গে আনন্দ করল ।
\s5
\v 59 এরপরে তারা আট দিনের দিন শিশুটির ত্বকছেদ করতে এলো, আর তার পিতার নাম অনুসারে তার নাম সখরিয় রাখতে চাইল ।
\v 60 কিন্তু তাঁর মা উত্তরে বললেন, "না, এর নাম হবে যোহন ।"
\v 61 তারা তাঁকে বলল, "আপনার বংশের মধ্যে এ নামে তো কাউকেই ডাকা হয়নি ।"
\s5
\v 62 পরে তারা তাঁর পিতাকে ইশারাতে জিজ্ঞাসা করল, "আপনার ইচ্ছা কী ? এর কী নাম রাখা হবে ?"
\v 63 তিনি একটি লেখার জিনিস চেয়ে নিয়ে তাতে লিখলেন, ওঁর নাম যোহন । তাতে সবাই খুবই আশ্চর্য হল।
\s5
\v 64 আর তখনই তাঁর মুখ ও তাঁর জিভ খুলে গেল, আর তিনি কথা বললেন ও ঈশ্বরের ধন্যবাদ করতে লাগলেন ।
\v 65 এরফলে আশেপাশের প্রতিবেশীরা সবাই খুব ভয় পেল, ও যিহূদিয়ার পাহাড়ী অঞ্চলের সমস্ত জায়গায় লোকেরা এইসব কথা বলাবলি করতে লাগল ।
\v 66 আর যত লোক শুনল, তারা নিজেদের মনে মনে চিন্তা করতে লাগল, আর বলল "এই শিশুটি বড় হয়ে তবে কী হবে ?" কারণ প্রভুর হাত তাঁর উপরে বিশেষ ভাবে ছিল ।
\s5
\v 67 তখন তাঁর বাবা সখরিয় পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হলেন এবং ভাববাণী বললেন, তিনি বললেন,
\v 68 "ধন্য প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর কারণ তিনি আমাদের যত্ন নিয়েছেন ও নিজের প্রজাদের জন্য মুক্তি সাধন করেছেন,
\s5
\v 69 আর আমাদের জন্য নিজের দাস দায়ূদের বংশে এক মহান উদ্ধারকর্তা দিয়েছেন,
\v 70 যেমন তিনি প্রথম থেকেই তাঁর সেই পবিত্র ভাববাদীদের মাধ্যমে বলে আসছেন,
\v 71 আমাদের শত্রুদের হাত থেকে ও যারা আমাদের ঘৃণা করে, তাদের সকলের হাত থেকে উদ্ধার করেছেন ।
\s5
\v 72 আমাদের পূর্বপুরুষদের উপরে দয়া করার জন্য, তিনি নিজের পবিত্র প্রতিজ্ঞা স্মরণ করার জন্য ।
\v 73 এ সেই প্রতিজ্ঞা, যা তিনি আমাদের পূর্বপুরুষ অব্রাহামের কাছে শপথ করেছিলেন,
\v 74 আমাদের এই আশীর্বাদ করেছেন যেন, আমরা শত্রুদের হাত থেকে উদ্ধার পেয়ে, নির্ভয়ে পবিত্রতায় ও ধার্মিকতায় তাঁর আরাধনা করতে পারব,
\v 75 তাঁর দৃষ্টিতে সারা জীবন করতে পারব।
\s5
\v 76 আর, হে আমার সন্তান, তুমি মহান ঈশ্বরের ভাববাদী বলে পরিচিত হবে, কারণ তাঁর পথ প্রস্তুত করার জন্য, তুমি প্রভুর আগে আগে চলবে,
\v 77 তাঁর লোকেদের পাপ ক্ষমার জন্য তাদের পাপ থেকে মুক্তির জ্ঞান দেওয়ার জন্য ।
\s5
\v 78 এ সবই আমাদের ঈশ্বরের সেই দয়া ও ভালবাসার জন্যই হবে এবং এই দয়া অনুযায়ী, মুক্তিদাতা যিনি প্রভাতের সূর্যের মত স্বর্গ থেকে এসে আমাদের পরিচর্যা করবেন,
\v 79 যারা অন্ধকারে ও মৃত্যুর ছায়ায় বসে আছে, তাদের উপরে আলো দেওয়ার জন্য ও আমাদের শান্তির পথে চালানোর জন্য ।"
\s5
\v 80 পরে শিশুটি বড় হয়ে উঠতে লাগল এবং আত্মায় শক্তিশালী হতে লাগল আর সে ইস্রায়েলের কাছে প্রকাশিত হওয়ার আগে পর্যন্ত মরুভূমিতে জীবনযাপন করছিল ।
\s5
\c 2
\s যীশু খ্রীষ্টের জন্ম ও শৈশব ।
\p
\v 1 সেই সময়ে আগস্ত কৈসর এই আদেশ দিলেন যেন, সমস্ত রোম সাম্রাজ্যে লোক গণনা করা হয় ।
\v 2 সিরিয়ার শাসনকর্তা কুরীনিয়ের সময়ে এই প্রথম নাম লেখানো হয় ।
\v 3 এজন্য সবাই নাম লিখে দেওয়ার জন্য নিজের নিজের শহরে চলে গেলেন ।
\s5
\v 4 আর যোষেফও গালীলের নাসরৎ শহর থেকে যিহুদিয়ায় বেৎলেহম নামে দায়ূদের শহরে গেলেন, কারণ তিনি দায়ূদ বংশের লোক ছিলেন,
\v 5 সে নিজের বিবাহ বন্ধনে চুক্তিবদ্ধ স্ত্রী মরিয়মকেও সঙ্গে নিয়ে নাম লেখানোর জন্য গেলেন, সে সময় তিনি গর্ভবতী ছিলেন ।
\s5
\v 6 তাঁরা যখন সেই জায়গাতে আছেন, তখন মরিয়মের প্রসব ব্যথা উঠলো ।
\v 7 ও সে নিজের প্রথম সন্তান জন্ম দিলেন এবং তাঁকে কাপড়ে জড়িয়ে যাবপাত্রে শুইয়ে রাখলেন, কারণ অতিথিশালায় তাঁদের জন্য কোনও জায়গা ছিল না ।
\s5
\v 8 ঐ অঞ্চলে মেষপালকেরা মাঠে ছিল এবং রাতে নিজেদের মেষপাল পাহারা দিচ্ছিল ।
\v 9 আর প্রভুর এক দূত এসে তাদের সামনে দাঁড়ালেন এবং প্রভুর প্রতাপ তাদের চারিদিকে উজ্জ্বল আলোর মত ছড়িয়ে পড়ল; আর তারা খুবই ভয় পেল ।
\s5
\v 10 তখন দূত তাদের বললেন, "ভয় পেয়ও না, কারণ দেখ, আমি তোমাদের এক মহা আনন্দের সুসমাচার জানাতে এসেছি, সেই সংবাদ সমস্ত মানুষের জন্য আনন্দের কারণ হবে,
\v 11 কারণ আজ দায়ূদের শহরে তোমাদের জন্য মুক্তিদাতা জন্ম গ্রহণ করেছেন, তিনি খ্রীষ্ট প্রভু।
\v 12 আর তোমাদের জন্য এটাই চিহ্ন, তোমরা দেখতে পাবে, একটি শিশু কাপড়ে জড়ানো ও যাবপাত্রে শোয়ানো আছে।"
\s5
\v 13 পরে হঠাৎ স্বর্গীয় বাহিনীর একটি বড় দল সেই দূতের সঙ্গী হয়ে এবং ঈশ্বরের স্তবগান করতে করতে বললেন,
\v 14 "স্বর্গে ঈশ্বরের মহিমা, পৃথিবীতে তাঁর প্রিয়জনদের মধ্যে শান্তি হোক।"
\s5
\v 15 দূতেরা তাদের কাছ থেকে স্বর্গে চলে যাওয়ার পর মেষপালকেরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বলল, "চলো, আমরা একবার বেৎলেহমে যাই এবং এই যে ঘটনা প্রভু আমাদের জানালেন, তা গিয়ে দেখি।"
\v 16 পরে তারা তাড়াতাড়ি সেই জায়গায় পৌঁছালো এবং মরিয়ম, যোষেফ ও সেই যাবপাত্রে শোয়ান শিশুটিকে দেখতে পেল ।
\s5
\v 17 আর শিশুটীর বিষয়ে যে সব কথা তাদের বলা হয়েছিল, তারা সেগুলো লোকেদের জানাল ।
\v 18 এবং যত লোক মেষপালকদের মুখে ঐ সব কথা শুনলো, সবাই খুবই আশ্চর্য বোধ করলো ।
\v 19 কিন্তু মরিয়ম এসব কথা মনে মনে চিন্তা করতে লাগলেন এবং নিজের হৃদয়ে সেগুলো সঞ্চয় করে রাখলেন ।
\v 20 আর মেষপালকদের যেমন যেমন বলা হয়েছিল, তারা তেমনই সমস্ত কিছু দেখতে পেয়ে ঈশ্বরের প্রশংসা ও স্তবগান করতে করতে ফিরে গেল ।
\s5
\v 21 এবং আট দিন পরে যখন শিশুটির ত্বকছেদের সময় পূর্ণ হল, তখন তাঁর নাম যীশু রাখা হল; এই নাম তাঁর গর্ভস্থ হবার আগেই দূতের দ্বারা এই নাম রাখা হয়েছিল ।
\v 22 পরে যখন মোশির ব্যবস্থা অনুযায়ী তাঁদের পবিত্র হবার সময় পূর্ণ হলো, তখন তাঁরা তাঁকে জিরুশালেমে নিয়ে গেলেন, যেন তাঁকে প্রভুর কাছে উপস্থিত করতে পারেন,
\v 23 যেমন প্রভুর ব্যবস্থায় লেখা আছে, 'গর্ভের প্রথম পুরুষ সন্তান প্রভুর হবে এবং সে প্রভুর উদ্দেশ্যে পবিত্র হবে',
\v 24 আর যেন বলি উৎসর্গ করেন, যেমন প্রভুর ব্যবস্থায় লেখা আছে, 'এক জোড়া ঘুঘু কিংবা দুটো পায়রা শাবক ।'
\s5
\v 25 আর দেখ, শিমিয়োন নামে এক ব্যক্তি জেরুশালেমে ছিলেন, তিনি ধার্ম্মিক ও ঈশ্বর ভক্ত, ইস্রায়েলের সান্ত্বনার (বা মশীহের) অপেক্ষাতে থাকতেন এবং পবিত্র আত্মা তাঁর উপরে ছিলেন ।
\v 26 আর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে তাঁর কাছে প্রকাশ করা হয়েছিল যে, তিনি প্রভুর খ্রীষ্টকে (মশীহকে) দেখতে না পেলে তাঁর মৃত্যু হবে না ।
\s5
\v 27 তিনি সেই আত্মার বশে ঈশ্বরের মন্দিরে আসলেন এবং শিশু যীশুর মা বাবা যখন তাঁর জন্য ব্যবস্থার রীতি অনুযায়ী কাজ করবার জন্য তাঁকে ভিতরে আনলেন,
\v 28 তখন তিনি তাঁকে কোলে নিলেন, আর ঈশ্বরের ধন্যবাদ করলেন ও বললেন,
\v 29 "হে আমার প্রভু, এখন তোমার প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী তুমি তোমার দাসকে শান্তিতে বিদায় কর,
\s5
\v 30 কারণ আমি নিজের চোখে তোমার পরিত্রান দেখতে পেলাম,
\v 31 যা তুমি সকল জাতির সম্মুখে প্রস্তুত করেছ,
\v 32 অন্য জাতির লোকেদের কাছে সত্য প্রকাশ করবার জন্য আলো ও তোমার প্রজা ইস্রায়েলের গৌরব হবে ।"
\s5
\v 33 তাঁর বিষয়ে যা বলা হলো, সেসব শুনে তাঁর মা বাবা আশ্চর্য হতে লাগলেন ।
\v 34 আর শিমিয়োন তাঁদের আশীর্বাদ করলেন এবং তাঁর মা মরিয়মকে বললেন, "দেখ, ইনি ইস্রায়েলের মধ্যে অনেকের পতন ও উত্থানের জন্য এবং যার বিরুদ্ধে কথা বলা হবে, এমন চিহ্ন হবার জন্য স্থাপিত,
\v 35 আর তোমার নিজের প্রাণও তলোয়ারে বিদ্ধ হবে (বা তুমি অনেক দুঃখ পাবে), যেন অনেকের হৃদয়ের চিন্তা প্রকাশ হয় ।"
\s5
\v 36 আর হান্না নামে একজন ভাববাদিনী ছিলেন, তিনি পনুয়েলের মেয়ে, আশের বংশে তার জন্ম, তাঁর অনেক বয়স হয়েছিল, তিনি বিয়ের পর সাত বছর স্বামীর সঙ্গে বসবাস করেন,
\v 37 আর চুরাশী বছর পর্যন্ত বিধবা হয়ে ছিলেন, তিনি ঈশ্বরের মন্দিরে সবসময় থাকতেন এবং উপবাস ও প্রার্থনার মাধ্যমে রাত দিন উপাসনা করতেন ।
\v 38 তিনিও সেই মুহুর্তে উপস্থিত হয়ে ঈশ্বরের ধন্যবাদ করলেন এবং যত লোক জেরুশালেমের মুক্তির অপেক্ষো করছিল, তাদের যীশুর কথা বলতে লাগলেন ।
\s5
\v 39 আর প্রভুর ব্যবস্থা অনুযায়ী সব কাজ শেষ করার পর তাঁরা গালীলে তাঁদের শহর নাসরতে, ফিরে গেলেন ।
\s বালক যীশুর যিরুশালেমে যাত্রা ।
\p
\v 40 পরে শিশুটি বড় হয়ে উঠতে ও শক্তিশালী হতে লাগলেন, জ্ঞানে পূর্ণ হতে থাকলেন, আর ঈশ্বরের অনুগ্রহ তাঁর উপরে ছিল ।
\s5
\v 41 তাঁর মা বাবা প্রতি বছর নিস্তারপর্বের সময়ে জেরুশালেমে যেতেন ।
\v 42 তাঁর বারো বছর বয়স হলে, তাঁরা পর্বের রীতি অনুসারে জেরুশালেমে গেলেন;
\v 43 এবং পর্ব্ব শেষ করে যখন তাঁরা ফিরে আসছিলেন, তখন বালক যীশু জেরুশালেমে থেকে গেলেন, আর তার মা বাবা সেটা জানতে পারলেন না,
\v 44 কিন্তু তিনি সহযাত্রীদের সঙ্গে আছেন, মনে করে তাঁরা এক দিনের পথ গেলেন, পরে তাঁরা আত্মীয়স্বজন ও পরিচিত লোকদের মধ্যে তাঁর খোঁজ করতে লাগলেন,
\s5
\v 45 আর তাঁকে না পেয়ে তাঁর খোঁজ করতে করতে জেরুশালেমে ফিরে গেলেন ।
\v 46 তিন দিন পরে তাঁরা তাঁকে ঈশ্বরের মন্দিরে পেলেন; তিনি ধর্মগুরুদের মধ্যে বসে তাঁদের কথা শুনছিলেন ও তাঁদের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছিলেন;
\v 47 আর যারা তাঁর কথা শুনছিল, তাঁরা সবাই তাঁর বুদ্ধি ও উত্তরে খুবই আশ্চর্য বোধ করলো।
\s5
\v 48 তাঁকে দেখে তাঁরা খুবই অবাক হলেন এবং তাঁর মা তাঁকে বললেন, "পুত্র, আমাদের সঙ্গে এমন ব্যবহার কেন করলে ? দেখ, তোমার বাবা এবং আমি খুবই চিন্তিত হয়ে তোমার খোঁজ করছিলাম ।"
\v 49 তিনি তাঁদের বললেন, "কেন আমার খোঁজ করলে ? আমার পিতার বাড়িতেই আমাকে থাকতে হবে, এটা কি জানতে না ?"
\v 50 কিন্তু তিনি তাঁদের যে কথা বললেন, তা তাঁরা বুঝতে পারলেন না ।
\s5
\v 51 পরে তিনি তাঁদের সঙ্গে নাসরতে চলে গেলেন ও তাঁদের বাধ্য হয়ে থাকলেন । আর তাঁর মা এ সমস্ত কথা নিজের হৃদয়ে সঞ্চয় করে রাখলেন ।
\v 52 পরে যীশু জ্ঞানে ও বয়সে এবং ঈশ্বরের ও মানুষের কাছে অনুগ্রহে বৃদ্ধি পেতে থাকলেন ।
\s5
\c 3
\s বাপ্তিস্মদাতা যোহনের কাজ ও যীশুর বাপ্তিস্ম।
\p
\v 1 তিবিরিয় কৈসরের রাজত্বের পনেরো বছরে যখন পন্তীয় পীলাত যিহুদিয়ার শাসনকর্তা, হেরোদ গালীলের রাজা, তাঁর ভাই ফিলিপ যিতূরিয়া ও ত্রাখোনীতিয়া অঞ্চলের রাজা এবং লূষানিয় অবিলীনির রাজা,
\v 2 তখন হানন ও কায়াফার মহাযাজকদের সময় ঈশ্বরের এই বাণী মরুভূমিতে সখরিয়ের পুত্র যোহনের কাছে উপস্থিত হল ।
\s5
\v 3 তাতে তিনি যর্দনের কাছাকাছি সমস্ত অঞ্চলে গিয়ে পাপ ক্ষমার জন্য মন ফেরানোর বাপ্তিস্ম প্রচার করতে লাগলেন;
\s5
\v 4 যেমন যিশাইয় ভাববাদীর পুস্তকে লেখা আছে, "মরুভূমিতে একজনের কন্ঠস্বর, সে ঘোষণা করছে, তোমরা প্রভুর রাস্তা তৈরি কর, তাঁর রাজপথ সোজা কর।
\s5
\v 5 প্রত্যেক উপত্যকা পরিপূর্ণ হবে, প্রত্যেক পর্বত ও উপপর্বত সমান করা হবে, আঁকা বাঁকা রাস্তা সমান করা হবে, যা কিছু অসমান, সেসমস্তই সমান করা হবে,
\v 6 এবং সমস্ত মানুষ ঈশ্বরের পরিত্রান দেখবে ।"
\s5
\v 7 অতএব, যে সকল লোক তাঁর কাছে বাপ্তিস্ম নিতে বের হয়ে আসল, তিনি তাদের বললেন, "হে সাপের বংশরা, আগামী শাস্তির হাত থেকে পালাতে তোমাদেরকে কে সতর্ক করল ?
\s5
\v 8 অতএব মন পরিবর্তনের উপযুক্ত ফলে ফলবান হও এবং মনে মনে বলতে আরম্ভ করো না যে, অব্রাহাম আমাদের পিতা; কেননা আমি তোমাদের বলছি, ঈশ্বর এ-সব পাথর থেকেও অব্রাহামের জন্য সন্তান উৎপন্ন করতে পারেন ।
\s5
\v 9 আর এখন সমস্ত গাছের মূলে কুড়াল লাগান আছে; অতএব যে গাছে ভাল ফল ধরবে না, তা কেটে আগুনে ফেলে দেওয়া হবে।"
\s5
\v 10 তখন লোকেরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, "তবে আমাদের কী করতে হবে?"
\v 11 তিনি এর উত্তরে তাদেরকে বললেন, "যার দুটি জামা আছে, সে, যার নেই, তাকে একটি দিক; আর যার কাছে খাবার আছে, সেও তেমন করুক ।"
\s5
\v 12 আর কর আদায়কারীরাও বাপ্তিস্ম নিতে আসল এবং তাঁকে বলল, "গুরু আমাদের কী করতে হবে ?"
\v 13 তিনি তাদের বললেন, "তোমাদের যতটা কর আদায় করতে বলা হয়েছে, তার বেশি কর আদায় করও না ।"
\s5
\v 14 আর সৈনিকেরাও তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, "আমাদেরই বা কী করতে হবে ?" তিনি তাদের বললেন, "কাউকে অত্যাচার করও না, অন্যায় ভাবে কিছু আদায়ও করো না এবং তোমাদের বেতনে সন্তুষ্ট থাকো ।"
\s5
\v 15 আর যেমন লোকেরা খ্রীষ্টের অপেক্ষায় ছিল এবং যোহনের বিষয়ে সকলে মনে মনে এই তর্ক বিতর্ক করছিল, কি জানি, হয়ত ইনিই সেই খীষ্ট,
\v 16 তখন যোহন তাদের বললেন, "আমি তোমাদেরকে জলে বাপ্তিস্ম দিচ্ছি, কিন্তু এমন এক জন আসছেন, যিনি আমার থেকেও শক্তিমান, যাঁর পায়ের জুতোর ফিতে খোলার যোগ্যতাও আমার নেই ; তিনি তোমাদের পবিত্র আত্মা ও আগুনে বাপ্তিস্ম দেবেন ।
\s5
\v 17 তাঁর কুলো তাঁর হাতে আছে; তিনি নিজের খামার (শস্য ঝাড়ার জায়গা) পরিস্কার করবেন ও গম নিজের গোলায় সংগ্রহ করবেন, কিন্তু তূষ যে আগুন কখনো নেভে না তাতে পুড়িয়ে ফেলবেন ।"
\v 1 যীশু পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হয়ে, যর্দন নদী থেকে ফিরে এলেন এবং চল্লিশ দিন পর্যন্ত সেই আত্মার অবেশে মরুভূমিতে পরিচালিত হলেন,
\v 2 আর সে-সময় শয়তান দ্বারা পরীক্ষিত হলেন, সেই চল্লিশ দিন তিনি কিছুই আহার করেননি; পরে সেই চল্লিশ দিন শেষ হলে তাঁর খিদে পেল ।
\s5
\v 3 তখন শয়তান তাঁকে বলল, "তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও, তবে এই পাথরটিকে বল, যেন এটা রুটি হয়ে যায় ।"
\v 4 যীশু তাকে বললেন, "লেখা আছে, মানুষ কেবল রুটিতে বাঁচবে না ।"
\s5
\v 5 পরে শয়তান তাঁকে উপরে নিয়ে গেলেন এবং এক মুহূর্তের মধ্যে তাঁকে জগতের সমস্ত রাজ্য দেখাল ।
\v 6 আর শয়তান তাঁকে বলল, "তোমাকে আমি এই সমস্ত রাজ্যর উপর কর্তৃত্ব ও এই সমস্তর প্রতাপ দেব; কেননা এগুলোর উপর কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা আমাকে দেওয়া হয়েছে, আর আমার যাকে ইচ্ছা তাকে দান করতে পারি;
\v 7 অতএব এখন তুমি যদি আমার সামনে হাঁটু পেতে প্রণাম কর, তবে এ সমস্তই তোমার হবে ।"
\s5
\v 8 যীশু এর উত্তরে তাকে বললেন, "লেখা আছে, তোমার ঈশ্বর প্রভুকেই প্রণাম করবে, কেবল তাঁরই আরাধনা করবে ।"
\s5
\v 9 আর সে তাঁকে জেরুশালেমে নিয়ে গেল ও ঈশ্বরের মন্দিরের চূড়ার উপরে দাঁড় করাল এবং তাঁকে বলল, "তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও, তবে এখান থেকে নীচে লাফিয়ে পড়;
\v 10 কেননা লেখা আছে, তিনি নিজের দূতদের তোমার জন্য আদেশ দেবেন, যেন তাঁরা তোমাকে রক্ষা করেন;
\v 11 আর, তোমাকে হাতে করে তুলে নেবেন, পাছে তোমার চরণে পাথরের আঘাত লাগে ।"
\v 14 তখন যীশু আত্মার পরাক্রমে গালীলে ফিরে গেলেন এবং তাঁর কীর্তি সমস্ত অঞ্চলের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল ।
\v 15 আর তিনি তাদের সমাজগৃহে উপদেশ দিলেন এবং সবাই তাঁর খুবই প্রশংসা করতে লাগল ।
\s5
\v 16 আর তিনি যেখানে বড় হয়েছিলেন, সেই নাসরতে উপস্থিত হলেন এবং তিনি নিজের রীতি অনুসারে বিশ্রামবারে সমাজগৃহে প্রবেশ করলেন ও শাস্ত্র পাঠ করতে দাঁড়ালেন ।
\v 17 তখন যিশাইয় ভাববাদীর পুস্তক তাঁর হাতে দেওয়া হল, আর পুস্তকটি খুলে তিনি সেই অংশটি পেলেন, যেখানে লেখা আছে,
\s5
\v 18 "প্রভুর আত্মা আমার মধ্যে আছেন, কারণ তিনি আমাকে অভিষেক করেছেন, দরিদ্রের কাছে সুসমাচার প্রচার করার জন্য; তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, বন্দিদের কাছে মুক্তি প্রচার করার জন্য, অন্ধদের কাছে দৃষ্টি-দানের প্রচার করার জন্য, নির্যাতিতদের উদ্ধার করার জন্য,
\v 19 প্রভুর অনুগ্রহের বছর ঘোষণা করার জন্য।"
\s5
\v 20 পরে তিনি পুস্তকটিকে বন্ধ করে পরিচারিকার হাতে দিয়ে বসলেন । তাতে সমাজগৃহের সবাই একভাবে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকল ।
\v 21 আর তিনি তাদের বললেন, "আজই শাস্ত্রের এই বাণী তোমাদের শোনার মাধ্যমে পূর্ণ হল ।"
\v 22 তাতে সবাই তাঁর বিষয়ে সাক্ষ্য দিল ও তাঁর মুখের সুন্দর কথায় তারা আশ্চর্য হল, আর বলল, "এ কি যোষেফের ছেলে না ?"
\s5
\v 23 তিনি তাদের বললেন, "তোমরা আমাকে অবশ্যই এই প্রবাদবাক্য বলবে, ডাক্তার আগে নিজেকে সুস্থ কর; কফরনাহূমে তুমি যা যা করেছ আমরা শুনেছি, সেসব এখানে নিজের দেশেও কর ।"
\v 24 তিনি আরও বললেন, "আমি তোমাদের সত্যি বলছি, কোনও ভাববাদী তাঁর নিজের দেশে গ্রহণযোগ্য হয় না ।"
\s5
\v 25 আর আমি তোমাদের সত্যি বলছি, এলিয়ের সময় যখন তিন বছর ছয় মাস পর্যন্ত বৃষ্টি হয়নি ও সারা দেশে কঠিন দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, তখন ইস্রায়েলের মধ্যে অনেক বিধবা ছিল;
\v 26 কিন্তু এলিয়কে তাদের কারও কাছে পাঠানো হয়নি, কেবল সীদোন দেশের সারিফতে এক বিধবা মহিলার কাছে পাঠানো হয়েছিল ।
\v 27 আর ইলীশায় ভাববাদীর সময়ে ইস্রায়েলের মধ্যে অনেকে কুষ্ঠ রোগী ছিল, কিন্তু তাদের কেউই শুচীকৃত হয় নি, কেবল সুরীয় দেশের নামান হয়ে ছিল ।
\s5
\v 28 এই কথা শুনে সমাজগৃহের লোকেরা সবাই রাগে পূর্ণ হল;
\v 29 আর তারা উঠে তাঁকে শহরের বাইরে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে চলল এবং যে পর্বতে তাদের শহর তৈরি হয়েছিল, তার শেষ প্রান্তে নিয়ে গেল, যেন তাঁকে নীচে ফেলে দিতে পারে ।
\p
\v 30 কিন্তু তিনি তাদের মধ্য দিয়ে হেঁটে চলে গেলেন ।
\v 31 পরে তিনি গালীলের কফরনাহূম শহরে নেমে গেলেন । আর তিনি বিশ্রামবারে লোকদের উপদেশ দিতে লাগলেন;
\v 32 এবং লোকেরা তাঁর উপদেশে আশ্চর্য হল; কারণ তিনি ক্ষমতার সঙ্গে কথা বলতেন ।
\s5
\v 33 তখন ঐ সমাজগৃহে এক ব্যক্তি ছিল, তাকে ভূত ও মন্দ আত্মায় ধরেছিল;
\v 34 সে চিত্কার করে চেঁচিয়ে বলল, "হে নাসরতীয় যীশু, আপনার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কী ? আপনি কি আমাদেরকে বিনাশ করতে এসেছেন ? আমি জানি, আপনি কে, ঈশ্বরের সেই পবিত্র ব্যক্তি ।"
\s5
\v 35 তখন যীশু তাকে ধমকিয়ে বললেন, "চুপ কর এবং এর মধ্যে থেকে বেরিয়ে যাও," তখন সেই ভূত তাকে সবার মাঝখানে ফেলে দিয়ে তার মধ্যে দিয়ে বের হয়ে গেল, তার কোনও ক্ষতি করল না ।
\v 36 তখন সবাই খুবই আশ্চর্য হল এবং নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে লাগল, এ কেমন কথা ? ইনি ক্ষমতায় ও পরাক্রমে মন্দ আত্মাদের আদেশ করেন, আর তারা বের হয়ে যায় ।
\v 37 আর আশেপাশের অঞ্চলের সব জায়গায় তাঁর কীর্তি ছড়িয়ে পড়ল ।
\s5
\v 38 পরে তিনি সমাজগৃহ থেকে বের হয়ে শিমোনের বাড়িতে প্রবেশ করলেন; তখন শিমোনের শাশুড়ী ভীষণ জ্বরে কষ্ট পাচ্ছিলেন, তাই তাঁরা তাঁর সুস্থতার জন্য যীশুকে অনুরোধ করলেন ।
\v 39 তখন তিনি তাঁর কাছে দাঁড়িয়ে জ্বরকে ধমক দিলেন, তাতে তাঁর জ্বর ছেড়ে গেল; আর তিনি সঙ্গে সঙ্গে উঠে তাদের সেবা করতে লাগলেন ।
\s5
\v 40 পরে সূর্য অস্ত যাবার সময়ে, বিভিন্ন রোগে অসুস্থ রুগীদের লোকেরা, তাঁর কাছে আনল; আর তিনি প্রত্যেক জনের উপরে হাত রেখে তাদের সুস্থ করলেন ।
\p
\v 41 আর অনেক লোকের মধ্যে থেকে ভূত বের হল, ভূতেরা চীৎকার করে বলল, "আপনি ঈশ্বরের পুত্র", কিন্তু তিনি তাদের ধমক দিয়ে কথা বলতে দিলেন না, কারণ ভূতেরা জানত যে তিনিই সেই খ্রীষ্ট ।
\s5
\v 42 পরে সকাল হলে তিনি সেই জায়গা থেকে একটি নির্জন জায়গায় চলে গেলেন; আর লোকেরা তাঁর খোঁজ করল এবং তাঁর কাছে এসে তাঁকে বারণ করল, যেন তিনি তাদের কাছ থেকে চলে না যান ।
\v 43 কিন্তু তিনি তাদের বললেন, "আরও অনেক শহরে আমাকে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করতে হবে; কারণ সেই জন্য আমাকে পাঠানো হয়েছে ।"
\v 44 পরে তিনি যিহুদিয়ার বিভিন্ন সমাজগৃহে প্রচার করতে লাগলেন ।
\s5
\c 5
\s জালে অনেক মাছ ধরা পড়ল ।
\p
\v 1 একদিন যখন লোকেরা তাঁর চারিদিকে প্রচণ্ড ভিড় করে ঈশ্বরের বাক্য শুনছিল, তখন তিনি গিনেষরৎ হ্রদের কূলে দাঁড়িয়ে ছিলেন,
\v 2 আর তিনি দেখতে পেলেন, হ্রদের কাছে দুটো নৌকা আছে, কিন্তু জেলেরা নৌকা থেকে নেমে জাল ধুচ্ছিল ।
\v 3 তাতে তিনি ঐ দুটো নৌকার মধ্যে একটিতে, শিমোনের নৌকাতে, উঠে স্থল থেকে একটু দূরে যেতে তাঁকে অনুরোধ করলেন; আর তিনি নৌকায় বসে লোকদের উপদেশ দিতে লাগলেন ।
\s5
\v 4 পরে কথা শেষ করে তিনি শিমোনকে বললেন, "তুমি গভীর জলে নৌকা নিয়ে চল, আর মাছ ধরবার জন্য তোমাদের জাল ফেল ।"
\v 5 শিমোন এর উত্তরে বললেন, "হে প্রভু, আমরা সারা রাত পরিশ্রম করেও কিছু পাইনি, কিন্তু আপনার কথায় আমি জাল ফেলব ।"
\v 6 তাঁরা সেমত করায়, তখন মাছের বড় ঝাঁক ধরা পড়ল ও তাঁদের জাল ছিঁড়তে লাগল; তাতে তাঁদের যে অংশীদারেরা অন্য নৌকায় ছিলেন, তাঁদের তাঁরা সংকেত দিলেন, যেন তাঁরা এসে তাঁদের সাহায্য করেন ।
\v 7 তাঁরা দুটো নৌকা মাছে এমন পূর্ণ করলেন যে, নৌকা দুটো ডুবতে লাগল ।
\s5
\v 8 এসব দেখে শিমোন পিতর যীশুর হাঁটুর উপরে পড়ে বললেন, "আমার কাছ থেকে চলে যান, কারণ, হে প্রভু, আমি পাপী ।"
\v 9 কারণ জালে এত মাছ ধরা পড়েছিল বলে তিনি ও যাঁরা তাঁর সঙ্গে ছিলেন, সবাই প্রচণ্ড আশ্চর্য হয়েছিলেন;
\v 10 আর সিবদিয়ের পুত্র যাকোব ও যোহন, যাঁরা শিমোনের অংশীদার ছিলেন, তাঁরাও তেমনই আশ্চর্য হয়েছিলেন । তখন যীশু শিমোনকে বললেন, "ভয় করও না, এখন থেকে তুমি মানুষ ধরবে ।"
\v 11 পরে তাঁরা নৌকা পাড়ে এনে সমস্ত ত্যাগ করে তাঁর অনুগামী হলেন ।
\s যীশু এক জন কুষ্ঠ ও এক জন অসার লোককে সুস্থ করেন।
\v 12 একবার তিনি কোনও এক শহরে ছিলেন এবং সেখানে এক জনের সমস্ত শরীরে কুষ্ঠ ছিল; সে যীশুকে দেখে উপুড় হয়ে পড়ে অনুরোধ করে বলল, "প্রভু, যদি আপনার ইচ্ছা হয়, তবে আমাকে শুচি করতে পারেন ।"
\v 13 তখন তিনি হাত বাড়িয়ে তাকে স্পর্শ করলেন এবং বললেন, "আমার ইচ্ছা, তুমি শুচি হও; আর তখনই তার কুষ্ঠ ভালো হয়ে গেল ।"
\s5
\v 14 পরে তিনি তাকে আদেশ দিয়ে বললেন, "এই কথা কাউকে বোলো না, কিন্তু যাজকের কাছে গিয়ে নিজেকে দেখাও এবং লোকদের কাছে সাক্ষ্য দেবার জন্য তোমার শুচিকরণ সম্বন্ধে মোশির আদেশ অনুযায়ী বলি উৎসর্গ কর ।
\s5
\v 15 কিন্তু তাঁর বিষয়ে নানা খবর আরও বেশি করে ছড়াতে লাগল; আর কথা শুনবার জন্য এবং নিজেদের রোগ থেকে সুস্থ হবার জন্য অনেক লোক তাঁর কাছে আসতে লাগল ।
\v 16 কিন্তু তিনি প্রায়ই কোন-না-কোন নির্জন স্থানে গিয়ে প্রার্থনা করতেন ।
\s5
\v 17 আর এক দিন তিনি উপদেশ দিচ্ছিলেন এবং ফরীশীরা ও ব্যবস্থা গুরুরা কাছেই বসে ছিল; তারা গালীল ও যিহুদিয়ার সমস্ত গ্রাম এবং জিরুশালেম থেকে এসেছিল; আর তাঁর সঙ্গে প্রভুর শক্তি উপস্থিত ছিল, যেন তিনি সুস্থ করেন ।
\s5
\v 18 আর দেখ, কিছু লোক খাটে করে এক জন অবশ রুগীকে আনল, তারা তাকে ভিতরে তাঁর কাছে নিয়ে যেতে চেষ্টা করল ।
\v 19 কিন্তু ভিড়ের জন্য ভিতরে যাবার রাস্তা না পাওয়াতে তারা ঘরের ছাদে উঠল, এবং টালি সরিয়ে তারমধ্য দিয়ে বিছানা শুদ্ধ তাকে মাঝখানে যীশুর কাছে নামিয়ে দিল ।
\s5
\v 20 তাদের বিশ্বাস দেখে তিনি বললেন, "হে বন্ধু, তোমার সমস্ত পাপ ক্ষমা হল ।"
\v 21 তখন ব্যবস্থার শিক্ষকেরা ও ফরীশীরা এই তর্ক করতে লাগল, এ কে যে ঈশ্বরনিন্দা করছে ? কেবল ঈশ্বর ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করতে পারে ?
\s5
\v 22 যীশু তাদের তর্ক বুঝতে পেরে তাদের বললেন, "তোমরা মনে মনে কেন তর্ক করছ ?"
\v 23 কোনটা বলা সহজ, 'তোমার পাপ ক্ষমা হল' বলা, না 'তুমি উঠে হেঁটে বেড়াও' বলা ?
\v 24 কিন্তু পৃথিবীতে পাপ ক্ষমা করার ক্ষমতা মনুষ্যপুত্রের আছে, এটা যেন তোমরা জানতে পার, এই জন্য- তিনি সেই অবশ রুগীকে বললেন, তোমাকে বলছি, ওঠ, তোমার বিছানা তুলে নিয়ে তোমার ঘরে যাও ।
\s5
\v 25 তাতে সে তখনই তাদের সামনে উঠে দাঁড়াল এবং নিজের বিছানা তুলে নিয়ে ঈশ্বরের গৌরব করতে করতে নিজের বাড়ি চলে গেল ।
\v 26 তখন সবাই খুবই আশ্চর্য হল, আর তারা ঈশ্বরের গৌরব করতে লাগল এবং ভয়ে পরিপূর্ণ হয়ে বলতে লাগল, আজ আমরা অতিআশ্চর্য ব্যাপার দেখলাম ।
\v 27 এই ঘটনার পরে সেখান থেকে তিনি চলে গেলেন এবং দেখলেন, লেবি নামে এক জন কর আদায়কারী কর জমা নেওয়ার জায়গায় বসে আছেন; তিনি তাঁকে বললেন, "আমাকে অনুসরণ কর ।"
\v 28 তাতে তিনি সমস্ত কিছু ত্যাগ করে উঠে তাঁর সঙ্গে চলে গেলেন ।
\s5
\v 29 পরে লেবি নিজের বাড়িতে তাঁর জন্য সুন্দর এক ভোজের আয়োজন করলেন এবং অনেক কর আদায়কারীরা ও আরো অন্য লোকেরাও তাঁদের সঙ্গে ভোজনে বসেছিল ।
\v 30 তখন ফরীশীরা ও ব্যবস্থার শিক্ষকেরা তাঁর শিষ্যদের কাছে অভিযোগ করে বলতে লাগল, "তোমরা কেন কর আদায়কারী ও পাপীদের সঙ্গে ভোজন পান করছ ?"
\v 31 যীশু এর উত্তরে তাদের বললেন, "সুস্থ লোকদের চিকিৎসার প্রয়োজন নেই, কিন্তু অসুস্থ লোকদেরই প্রয়োজন আছে ।
\v 32 আমি ধার্মিকদের নয়, কিন্তু পাপীদেরকেই ডাকতে এসেছি, যেন তারা মন ফেরায় ।"
\s5
\v 33 পরে তারা তাঁকে বলল, "যোহনের শিষ্যরা প্রায়ই উপবাস করে ও প্রার্থনা করে, ফরীশীদের শিষ্যরাও সেরকম করে; কিন্তু তোমার শিষ্যেরা ভোজন পান করে থাকে ।"
\v 34 যীশু তাদের বললেন, "বর সঙ্গে থাকতে তোমারা কি বাসর-ঘরের লোকদের উপবাস করাতে পার ?
\v 35 কিন্তু সময় আসবে; আর যখন তাদের কাছ থেকে বরকে নিয়ে নেওয়া হবে, তখন তারা উপবাস করবে ।"
\s5
\v 36 আরও তিনি তাদের একটি উদাহরণ দিলেন, তা এমন, কেউ নতুন কাপড় থেকে টুকরো ছিঁড়ে পুরনো কাপড়ে লাগায় না; সেটা করলে নতুনটাও ছিঁড়তে হয় এবং পুরানো কাপড়েও সেই নতুন কাপড়ের তাপ্পি মিলবে না ।
\s5
\v 37 আর কেউ পুরনো চামড়ার থলিতে টাটকা আঙ্গুরের রস রাখে না; রাখলে টাটকা আঙ্গুরের রসে চামড়ার থলিগুলো ফেটে যাবে, তাতে আঙ্গুরের রসও পড়ে যাবে এবং চামড়ার থলিগুলোও নষ্ট হবে ।
\v 38 কিন্তু টাটকা আঙ্গুরের রস নতুন চামড়ার থলিতেই রাখতে হবে ।
\v 39 আর পুরনো আঙ্গুরের রস পান করার পর কেউ টাটকা চায় না, কারণ সে বলে, পুরনোই ভাল ।
\s5
\c 6
\s বিশ্রামবার সমন্ধে শিক্ষা।
\p
\v 1 এক দিন বিশ্রামবারে যীশু ও তাঁর শিষ্যরা শস্যর ক্ষেত দিয়ে যাচ্ছিলেন, এমন সময়ে তাঁর শিষ্যরা শীষ ছিঁড়ে ছিঁড়ে হাতে ডলে খাচ্ছিলেন ।
\v 2 তাতে কয়েকজন ফরীশী বলল, "বিশ্রামবারে যা করা উচিত নয়, তোমরা কেন তাই করছ ?"
\s5
\v 3 যীশু উত্তরে তাদের বললেন, "দায়ূদ ও তাঁর সঙ্গীদের খিদে পেলে তিনি কি করেছিলেন, সেটা কি তোমরা পড়নি ?
\v 4 তিনি ঈশ্বরের বাড়িতে প্রবেশ করে, যে দর্শন-রুটি কেবল যাজক ছাড়া আর কারও খাওয়া উচিত নয়, সেই রুটি নিয়ে নিজেও খেয়েছিলেন এবং তাঁর সঙ্গীদেরও দিয়েছিলেন ।"
\v 5 পরে তিনি তাদের বললেন, "মনুষ্যপুত্র বিশ্রামবারের কর্তা।"
\s5
\v 6 আর এক বিশ্রামবারে তিনি সমাজগৃঘে প্রবেশ করে উপদেশ দিলেন; সেখানে একটি লোক ছিল, তার ডান হাত শুকিয়ে গিয়েছিল ।
\v 7 আর ব্যবস্থার শিক্ষকেরা ও ফরীশীরা, তিনি বিশ্রামবারে সুস্থ করেন কি না, দেখবার জন্য তাঁর দিকে নজর রাখল, যেন তাঁকে দোষারোপ করার কারণ খুঁজে পায়।
\v 8 কিন্তু তিনি তাদের চিন্তা জানতেন, আর সেই ব্যক্তি যার হাত শুকিয়ে গিয়েছিল তাকে বললেন, "ওঠ, সবার মাঝখানে দাঁড়াও। তাতে সে উঠে দাঁড়াল।"
\s5
\v 9 পরে যীশু তাদের বললেন, "তোমাদের জিজ্ঞাসা করি, বিশ্রামবারে কী করা উচিত ? ভাল করা না মন্দ করা ? প্রাণ রক্ষা করা না হত্যা করা ?"
\v 10 পরে তিনি চারিদিকে তাদের সবার দিকে তাকিয়ে সেই লোকটিকে বললেন, "তোমার হাত বাড়িয়ে দাও ।" সে তাই করল, আর তার হাত সুস্থ হল।
\v 11 কিন্তু তারা প্রচণ্ড রেগে গেল, আর যীশুর প্রতি কী করবে, তাই তাদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল।
\v 12 সেই সময়ে তিনি এক দিন প্রার্থনা করার জন্য পর্বতে গেলেন, আর ঈশ্বরের কাছে সমস্ত রাত ধরে প্রার্থনায় সময় কাটালেন ।
\v 13 পরে যখন সকাল হল, তিনি তাঁর শিষ্যদের ডাকলেন এবং তাঁদের মধ্য থেকে বারো জনকে মনোনীত করলেন, আর তাঁদের ‘প্রেরিত’ নাম দিলেন;-
\s5
\v 14 শিমোন, যাঁকে তিনি পিতর নামও দিলেন ও তাঁর ভাই আন্দ্রিয় এবং যাকোব ও যোহন এবং ফিলিপ ও বর্থলময়
\v 15 এবং মথি ও থোমা এবং আলফেয়ের [পুত্র] যাকোব ও শিমোন যাকে জীলট্ উদযোগী অর্থাৎ আগ্রহে পূর্ণ বলা হত, যাকোবের [পুত্র] যিহুদা ।
\v 16 এবং ঈস্করিয়োতীয় যিহুদা, যে তাঁকে শত্রুর হাতে সমর্পণ করেছিল।
\s5
\v 17-18 পরে তিনি তাঁদের সঙ্গে পাহাড় থেকে নেমে এক সমান ভূমির উপরে গিয়ে দাঁড়ালেন; আর তাঁর অনেক শিষ্য এবং সমস্ত যিহুদিয়া ও জিরুশালেম এবং সোর ও সীদোনের সমুদ্র উপকূল থেকে অনেক লোক এসে উপস্থিত হল। 18 তারা তাঁর কথা শুনবার ও নিজেদের অশুচি আত্মার অত্যাচার ও রোগ থেকে সুস্থ হবার জন্য তাঁর কাছে এসেছিল।
\v 19 আর, সমস্ত লোক তাঁকে স্পর্শ করতে চেষ্টা করল, কারণ তাঁর মধ্যে দিয়ে শক্তি বের হয়ে সবাইকে সুস্থ করছিল ।
\s5
\v 20 পরে তিনি তাঁর শিষ্যদের দিকে তাকিয়ে তাঁদের বললেন, "ধন্য যারা দরিদ্র, কারণ ঈশ্বরের রাজ্য তাদেরই।
\v 21 ধন্য তোমরা, যারা এখন ক্ষুধিত, কারণ তোমরা পরিতৃপ্ত হবে । ধন্য তোমরা, যারা এখন কাঁদছে কারণ তোমরা হাসবে ।
\s5
\v 22 ধন্য তোমরা, যখন লোকে মনুষ্যপুত্রের জন্য তোমাদের ঘৃণা করে, আর যখন তোমাদের তাদের সমাজ থেকে আলাদা করে দেয় ও নিন্দা করে এবং তোমাদের নামে মন্দ কথা বলে দূর করে দেয় ।
\v 23 সে দিন আনন্দ কর ও নাচ, কারণ দেখ, স্বর্গে তোমাদের অনেক পুরস্কার আছে; কারণ তাদের বংশধরেরাও ভাববাদীদের প্রতি তাই করত ।
\s5
\v 24 কিন্তু ধনবানেরা ধিক তোমাদের, কারণ তোমারা তোমাদের সান্ত্বনা পেয়েছ ।
\v 25 ধিক তোমাদের, যারা এখন পরিতৃপ্ত, কারণ তোমরা ক্ষুধিত হবে; ধিক তোমাদের, যারা হাসে, কারণ তোমারা দুঃখ করবে ও কাঁদবে ।
\s5
\v 26 ধিক তোমাদের, যখন সবাই তোমাদের বিষয়ে ভালো বলে, কারণ তোমাদের বংশধরেরা ভাক্ত ভাববাদীদের প্রতি তাই করত ।
\s5
\v 27 কিন্তু তোমরা যারা শুনছ, আমি তোমাদের বলি, তোমরা নিজের নিজের শত্রুদের ভালোবাসো, যারা তোমাকে ঘৃণা করে, তাদের ভালো কর;
\v 28 যারা তোমাদের অভিশাপ দেয়, তাদের আশীর্বাদ কর; যারা তোমাদের নিন্দা করে, তাদের জন্য প্রার্থনা কর।
\s5
\v 29 যে তোমার এক গালে চড় মারে, তার দিকে অন্য এক গালও পেতে দাও এবং যে তোমার পোশাক জোর করে খুলে নিতে চায়, তাকে তোমার অন্তর্বাসও দিয়ে দাও, বারণ করও না।
\v 30 যে কেউ তোমার কাছে কিছু চায়, তাকে সেটা দিও এবং যে তোমার জিনিস জোর করে নিয়ে নেয়, তার কাছে সেটা আর চেও না।
\s5
\v 31 আর তোমরা যেমন ইচ্ছা কর যে, লোকে তোমাদের জন্য করুক তোমরাও তাদের প্রতি তেমনই কর।
\v 32 আর যারা তোমাদের ভালবাসে, যদি শুধু তাদেরই ভালবাসো তবে তাতে প্রশংসার কী আছে ? কেননা পাপীরাও, যারা তাদের ভালবাসে, তারাও তাদেরই ভালবাসে।
\v 33 আর যারা তোমাদের উপকার করে, যদি তাদের উপকার কর, তবে তোমরা কী করে প্রশংসা পেতে পার ? পাপীরাও তাই করে ।
\v 34 আর যাদের কাছে পাবার আশা আছে, যদি তাদেরই ধার দাও, তবে তোমরা কেমন করে প্রশংসা পেতে পার ? পাপীরাও পাপীদেরই ধার দেয়, যেন সেই পরিমাণে পুনরায় পায় ।
\s5
\v 35 কিন্তু তোমরা নিজের নিজের শত্রুদেরও ভালোবাস, তাদের ভালো কর এবং কখনও নিরাশ না হয়ে ধার দিও, যদি তোমরা এমন কর তোমরা অনেক পুরস্কার পাবে এবং তোমরা মহান ঈশ্বরের সন্তান হবে, কারণ তিনি অকৃতজ্ঞ ও মন্দ লোকেদেরও দয়া করেন ।
\v 36 তোমার পিতা যেমন দয়ালু, তোমরাও তেমন দয়ালু হও ।
\s5
\v 37 আর তোমরা বিচার করও না, তাতে বিচারিত হবে না । আর কাউকে দোষ দিও না, তাতে তোমাদেরও দোষ ধরা হবে না । তোমরা ক্ষমা কর, তাতে তোমাদেরও ক্ষমা করা হবে ।
\s5
\v 38 দাও, তাতে তোমাদেরও দেওয়া যাবে; লোকে আরো বেশি পরিমাণে চেপে চেপে ঝাঁকিয়ে উপচিয়ে তোমাদের কোলে দেবে; কারণ তোমরা যে পরিমাণে পরিমাণ কর, সেই পরিমাণে তোমাদের জন্যও পরিমাণ করা হবে ।"
\s5
\v 39 আর তিনি তাদের একটি উদাহরণ দিলেন, অন্ধ কী অন্ধকে পথ দেখাতে পারে ? দুজনেই কী গর্তে পড়বে না ?
\v 40 শিষ্য গুরুর থেকে বড় নয়, কিন্তু যে কেউ পোরিপ্ক্ব হয়, সে তার গুরুর তুল্য হবে ।
\s5
\v 41 আর তোমার ভাইয়ের চোখে যে ছোট খড়ের টুকরো আছে, সেটা কেন দেখছ, অথচ তোমার নিজের চোখে যে তক্তা আছে, সেটা কেন দেখছ না ?
\v 42 তোমার চোখে যে তক্তা আছে, সেটা যখন দেখতে পাচ্ছ না, তখন তুমি কেমন করে নিজের ভাইকে বলতে পার, ভাই, এসো, আমি তোমার চোখ থেকে খড়ের কুটোটা বের করে দিই ? তোমার নিজের চোখে যে তক্তা আছে, সেটা তো তুমি দেখছ না ! হে ভণ্ড, আগে নিজের চোখ থেকে তক্তা বার কর, তার পর তোমার ভাইয়ের চোখে যে কুটো আছে, তা বার করার জন্য স্পষ্ট দেখতে পাবে ।
\s5
\v 43 কারণ এমন ভালো গাছ নেই, যাতে খারাপ ফল ধরে এবং এমন খারাপ গাছও নেই, যাতে ভালো ফল ধরে ।
\v 44 নিজের নিজের ফল দ্বারাই প্রত্যেক গাছকে চেনা যায়; লোকে কাঁটাবন থেকে ডুমুর সংগ্রহ করে না এবং বুনো ঝোপ থেকে আঙ্গুর সংগ্রহ করে না ।
\s5
\v 45 ভালো মানুষ নিজের হৃদয়ের ভালো ভাণ্ডার থেকে ভালো জিনিসই বের করে এবং মন্দ লোক মন্দ ভাণ্ডার থেকে মন্দ জিনিসই বের করে; কারণ তার হৃদয়ে যা থাকে সে মুখেও তাই বলে ।
\s5
\v 46 আর তোমরা কেন আমাকে হে প্রভু, হে প্রভু বলে ডাক, অথচ আমি যা যা বলি, তা করও না ?
\v 47 যে কেউ আমার কাছে এসে আমার কথা শুনে পালন করে, সে কার মতো তা আমি তোমাদের জানাচ্ছি ।
\v 48 সে এমন এক ব্যক্তির মতো, যে বাড়ি তৈরির সময় খুঁড়ল, খুঁড়ে গভীর করল ও পাথরের উপরে বাড়ির ভিত গাঁথল ; পরে বন্যা হলে সেই বাড়ি জলের প্রবল স্রোতের মধ্যে পড়ল, কিন্তু বাড়িটিকে হেলাতে পারল না, কারণ বাড়িটিকে ভালোভাবে তৈরি করা হয়েছিল ।
\s5
\v 49 কিন্তু যে শুনে পালন না করে, সে এমন এক ব্যক্তির মতো, যে মাটির উপরে, বিনা ভিতে, বাড়ি তৈরি করল; পরে প্রচণ্ড জলের স্রোত এসে সেই বাড়িতে লাগল, আর অমনি তা পড়ে গেল এবং সেই বাড়ি সম্পূর্ণ ভাবে ধ্বংস হল। "
\s5
\c 7
\s যীশু অসুস্থকে সুস্থ করেন ও মৃতকে জীবন দেন ।
\p
\v 1 লোকদের কাছে নিজের সমস্ত কথা শেষ করে তিনি কফরনাহূমে প্রবেশ করলেন ।
\s5
\v 2 সেখানে এক জন শতপতির একটি ক্রীতদাস ছিল যে অসুস্থ হয়ে মরবার মত হয়েছিল, সে তাঁর খুবই প্রিয় ছিল ।
\v 3 তিনি যীশুর সংবাদ শুনে যিহুদিদের কয়েকজন নেতাকে (প্রাচীন)তাঁর কাছে অনুরোধ করার জন্য পাঠালেন, যেন তিনি এসে তাঁর দাসকে বাঁচান ।
\v 4 তাঁরা যীশুর কাছে গিয়ে বিশেষভাবে অনুরোধ করে বলতে লাগলেন, "আপনি যেন তাঁর জন্য এই কাজ করেন, তিনি এর যোগ্য,"
\v 5 কারণ তিনি আমাদের জাতিকে ভালোবাসেন, আর আমাদের সমাজগৃহ তিনি তৈরি করে দিয়েছেন ।
\s5
\v 6 যীশু তাঁদের সঙ্গে গেলেন, আর তিনি বাড়ির কাছাকাছি আসতেই শতপতি কয়েক জন বন্ধুদের দিয়ে তাঁকে বলে পাঠালেন, "প্রভু, নিজেকে কষ্ট দেবেন না; কারণ আমি এমন যোগ্য নই যে, আপনি আমার ছাদের নীচে আসেন;
\v 7 সে জন্য আমাকেও আপনার কাছে আসার যোগ্য বলে মনে হলো না; আপনি শুধু মুখে বলুন, তাতেই আমার দাস সুস্থ হবে।
\v 8 কারণ আমিও অন্যের কর্তৃত্বের অধীনে নিযুক্ত লোক, আবার সেনাগণ আমার অধীনে; আর আমি তাদের এক জনকে, ‘যাও’ বললে সে যায় এবং অন্যকে ‘এসো’ বললে সে আসে, আর আমার দাসকে ‘এই কাজ কর’ বললে সে তা করে।"
\s5
\v 9 এ সমস্ত কথা শুনে যীশু তাঁর বিষয়ে আশ্চর্য হলেন এবং যে লোকেরা তাঁর পিছনে আসছিল, তিনি তাদের দিকে ফিরে বললেন, "আমি তোমাদের বলছি, ইস্রায়েলের মধ্যে এত বড় বিশ্বাস কখনো দেখতে পাইনি ।"
\v 10 পরে যাঁদের পাঠান হয়েছিল, তাঁরা বাড়ি ফিরে গিয়ে সেই দাসকে সুস্থ দেখতে পেলেন ।
\s5
\v 11 কিছু দিন পরে তিনি নায়িন নামে এক শহরে গেলেন এবং তাঁর শিষ্যেরা ও অনেক লোক তাঁর সঙ্গে যাচ্ছিল ।
\v 12 যখন তিনি সেই শহরের ফটকের (নগরদ্বার) কাছে এলেন, তখন দেখতে পেলেন, লোকেরা একটি মৃত মানুষকে বয়ে বাইরে নিয়ে যাচ্ছিল; সে তার মায়ের একমাত্র ছেলে এবং সেই মা বিধবা ছিলেন; আর শহরের অনেক লোক তার সঙ্গে ছিল ।
\v 13 তাকে দেখে প্রভুর খুবই দয়া হল এবং তাকে বললেন, "কেঁদো না ।"
\v 14 পরে তিনি কাছে গিয়ে খাট স্পর্শ করলেন; আর যারা বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল তারা দাঁড়াল । তিনি বললেন, "হে যুবক, তোমাকে বলছি ওঠো ।"
\v 15 তাতে সেই মরা মানুষটি উঠে বসলো এবং কথা বলতে লাগলো; পরে তিনি তাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলেন ।
\s5
\v 16 তখন সবাই ভয় পেল এবং ঈশ্বরের গৌরব করে বলতে লাগল, 'আমাদের মধ্যে এক জন মহান ভাববাদী এসেছেন,' আর 'ঈশ্বর নিজের প্রজাদের সাহায্য করেছেন।'
\v 17 পরে সমস্ত যিহুদিয়াতে এবং আশেপাশের সমস্ত অঞ্চলে যীশুর বিষয়ে এই কথা ছড়িয়ে পড়ল ।
\v 18 আর যোহনের শিষ্যরা তাঁকে এই সমস্ত বিষয়ে সংবাদ দিল ।
\v 19 তাতে যোহন নিজের দুজন শিষ্যকে ডাকলেন ও তাদের প্রভুর কাছে জিজ্ঞাসা করতে পাঠালেন, 'যাঁর আগমন হবে, সেই ব্যক্তি কি আপনি ? না, আমরা অন্য কারও অপেক্ষায় থাকব ?'
\v 20 পরে সেই দুই ব্যক্তি তাঁর কাছে এসে বলল, "বাপ্তিস্মদাতা যোহন আমাদের আপনার কাছে এই কথা বলে পাঠিয়েছেন, যাঁর আগমন হবে, সেই ব্যক্তি কী আপনি ? না, আমরা অন্য কারও অপেক্ষায় থাকব ?"
\s5
\v 21 সে সময় তিনি অনেক লোককে রোগ, ব্যাধি ও মন্দ আত্মা থেকে সুস্থ করলেন এবং অনেক অন্ধের চোখ ভাল করে দিলেন ।
\v 22 পরে তিনি সেই দুই জনকে এই উত্তর দিলেন, "তোমরা যাও এবং যা দেখলে ও শুনলে, তার সংবাদ যোহনকে দেও; অন্ধরা দেখতে পাচ্ছে, খোঁড়ারা হাঁটছে, কুষ্ঠ রুগীরা সুস্থ হচ্ছে, বধিরেরা শুনতে পাচ্ছে, মৃতেরা জীবিত হচ্ছে, দরিদ্রদের কাছে সুসমাচার প্রচার করা হচ্ছে;
\v 23 আর ধন্য সেই ব্যক্তি, যে আমার কাজ দেখে সন্দেহ না করে ।"
\s5
\v 24 যোহনের দূতেরা চলে যাওয়ার পর তিনি লোকেদের যোহনের বিষয়ে বলতে লাগলেন, "তোমরা মরুভূমিতে কী দেখতে গিয়েছিলে ?
\v 25 কী একটি নল (ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ) বাতাসে দুলছে ? তবে কী দেখতে গিয়েছিলে ? কী সুন্দর পোশাক পরা কোনও লোককে ? দেখ, যারা দামী পোষাক পরে এবং ভোগ বিলাসে জীবন যাপন করে, তারা রাজবাড়িতে থাকে ।
\v 26 তবে কী দেখতে গিয়েছিলে ? কী এক জন ভাববাদীকে ? হ্যাঁ, আমি তোমাদের বলছি ভাববাদীর থেকেও মহান ব্যক্তিকে ।
\s5
\v 27 ইনি সেই ব্যক্তি," যাঁর বিষয়ে লেখা আছে, "দেখ আমি আমার দূতকে তোমার আগে পাঠাব, সে তোমার আগে তোমার জন্য রাস্তা তৈরি করবে ।
\v 28 আমি তোমাদের বলছি, স্ত্রীলোকের গর্ভজাতদের মধ্যে যোহনের থেকে মহান কেউ নেই; তবুও ঈশ্বরের রাজ্যে সবথেকে ছোট (যে ব্যক্তি) যে ব্যক্তি, সে তাঁর থেকেও মহান ।"
\s5
\v 29 আর সমস্ত লোক ও কর আদায়কারীরা যারা যোহনের বাপ্তিস্মে বাপ্তাইজিত হয়েছে এই কথা শুনে তারা ঈশ্বরকে ধার্মিক বলে স্বীকার করল;
\v 30 কিন্তু ফরীশী ও ব্যবস্থার শিক্ষকেরা যারা যোহনের কাছে বাপ্তিস্ম নেয়নি তারা নিজেদের বিষয়ে ঈশ্বরের পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করল ।
\s5
\v 31 অতএব আমি কার সঙ্গে এই যুগের লোকদের তুলনা করব ? তারা কী রকম?
\v 32 তারা এমন ছোট বালকের মতো, যারা বাজারে বসে এক জন অন্য এক জনকে ডেকে বলল, ‘আমরা তোমার কাছে বাঁশী বাজালাম, তোমরা নাচলে না; আমরা দুঃখ প্রকাশ করলাম, তোমরা কাঁদলে না;’
\s5
\v 33 কারণ বাপ্তিস্মদাতা যোহন এসে রুটি খান না, আঙ্গুর রসও পান করেন না, আর তোমরা বল, সে ভূতগ্রস্ত।
\v 34 মনুষ্যপুত্র এসে ভোজন পান করেন, আর তোমরা বল, ঐ দেখ, এক জন পেটুক ও মদ্যপ, কর আদায়কারী ও পাপীদের বন্ধু ।
\v 35 কিন্তু প্রজ্ঞা তার সমস্ত সন্তানের মাধ্যমেই নির্দোষ বলে প্রমাণিত হলেন ।
\v 36 আর ফরীশীদের মধ্যে এক জন যীশুকে তার সঙ্গে ভোজন করতে নিমন্ত্রণ করল । তাতে তিনি সেই ফরীশীর বাড়িতে গিয়ে ভোজনে বসলেন ।
\v 37 আর দেখ, সেই শহরে এক পাপী স্ত্রীলোক ছিল; সে যখন জানতে পারল, তিনি সেই ফরীশীর বাড়িতে খেতে বসেছেন, তখন একটি শ্বেত পাথরের পাত্রে সুগন্ধি তেল নিয়ে আসল
\v 38 এবং পিছন দিকে তাঁর পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে কেঁদে কেঁদে সে চোখের জলে তাঁর পা ভেজাতে লাগল এবং তার মাথার চুল দিয়ে পা মুছিয়ে দিল, আর তাঁর পায়ে চুমু দিয়ে সেই সুগন্ধি তেল মাখাতে লাগল ।
\s5
\v 39 এই দেখে, যে ফরীশী তাঁকে নিমন্ত্রণ করেছিল, সে মনে মনে বলল, এ যদি ভাববাদী হত, তবে নিশ্চয় জানতে পারত, একে যে স্পর্শ করছে, সে কে এবং কী ধরনের স্ত্রীলোক, কারণ সে পাপী ।
\v 40 তখন যীশু উত্তরে তাকে বললেন, "শিমোন, তোমাকে আমার কিছু বলার আছে ।" সে বলল, "গুরু বলুন ।"
\s5
\v 41 এক মহাজনের কাছে দু-জন ঋণী ছিল; এক জনের পাঁচশো সিকি ঋণ ছিল, আর এক জন পঞ্চাশ ।
\v 42 তাদের শোধ করার ক্ষমতা না থাকার জন্য তিনি দুজনকেই ক্ষমা করলেন । ভালো, তাদের মধ্যে কে তাঁকে বেশি ভালোবাসবে ?
\v 43 শিমোন বলল, "আমার মনে হয়, যার বেশি ঋণ ক্ষমা করা হয়েছিল, সেই ।" তিনি বললেন, "ঠিক বিচার করেছ ।"
\s5
\v 44 আর তিনি সেই স্ত্রীলোকটির দিকে ফিরে শিমোনকে বললেন, "এই স্ত্রীলোকটিকে দেখছ ? আমি তোমার বাড়িতে প্রবেশ করলাম, তুমি আমার পা ধোয়ার জল দিলে না, কিন্তু এই স্ত্রীলোকটি চোখের জলে আমার পা ভিজিয়েছে ও নিজের চুল দিয়ে পা মুছিয়ে দিয়েছে।
\v 45 তুমি আমাকে চুমু দিলে না, কিন্তু আমি ভিতরে আসার পর থেকে, এ আমার পায়ে চুমু দিয়েই চলেছে, থামেনি ।
\s5
\v 46 তুমি তেল দিয়ে আমার মাথা অভিষেক করলে না, কিন্তু এ সুগন্ধি জিনিসে আমার পা অভিসিক্ত করেছে ।
\v 47 তাই, তোমাকে বলছি, এর বেশি পাপ থাকলেও, তার ক্ষমা হয়েছে; কারণ সে বেশি ভালোবেসেছে ; কিন্তু যাকে অল্প ক্ষমা করা হয়, সে অল্প ভালোবাসে ।
\s5
\v 48 পরে তিনি সেই স্ত্রীলোককে বললেন, তোমার সমস্ত পাপ ক্ষমা হয়েছে ।"
\v 49 তখন যারা তাঁর সঙ্গে খেতে বসেছিল, তারা মনে মনে বলতে লাগল, "এ কে যে পাপও ক্ষমা করে ?"
\v 50 কিন্তু তিনি সেই মহিলাটিকে বললেন, "তোমার বিশ্বাস তোমাকে পরিত্রাণ দিয়েছে শান্তিতে চলে যাও।"
\s5
\c 8
\p
\v 1 এর পরেই তিনি ঘোষণা করতে করতে এবং ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার জন্য শহরে শহরে ও গ্রামে গ্রামে ভ্রমণ করলেন, আর তাঁর সঙ্গে সেই বারো জন,
\v 2 এবং যাঁরা দুষ্ট আত্মা ও রোগ থেকে মুক্ত হয়েছিলেন, এমন কয়েকজন স্ত্রীলোক ছিলেন, মগ্দলীনি যাকে মরিয়ম বলা হতো, যাঁর মধ্যে থেকে সাতটা ভূত বের হয়েছিল,
\v 3 যোহানা, যিনি হেরোদের পরিচালক কুষের স্ত্রী এবং শোশন্না ও অন্য অনেক স্ত্রীলোক ছিলেন, তাঁরা নিজেদের সম্পত্তি দিয়ে তাঁদের সেবা করতেন ।
\v 4 আর যখন, অনেক লোক সমবেত হচ্ছিল এবং অন্য অন্য শহর থেকে লোকেরা তাঁর কাছে এলো, তখন তিনি একটা গল্পের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে কথা বললেন,
\v 5 "একজন চাষী বীজ বপন করতে গেল । বপনের সময়ে কিছু বীজ রাস্তার পাশে পড়ল, তাতে সেই বীজগুলো লোকেরা পায়ে মাড়িয়ে গেল ও আকাশের পাখিরা সেগুলো খেয়ে ফেলল ।
\v 6 আর কিছু বীজ পাথরের ওপরে পড়ল, তাতে সেগুলোর অঙ্কুর বের হল কিন্তু রস না পাওয়াতে শুকিয়ে গেল ।
\s5
\v 7 আর কিছু বীজ কাঁটাবনের মধ্যে পড়ল, তাতে কাঁটাও বীজের সঙ্গে বৃদ্ধি হতে থাকলো এবং সেগুলোকে চেপে ধরল ।
\v 8 আর কিছু বীজ ভাল জমিতে পড়ল, তাতে সেগুলো অঙ্কুরিত হয়ে একশোগুন বেশি ফল উৎপন্ন করল ।" এই কথা বলে তিনি চিত্কার করে বললেন, "যার শোনার কান আছে সে শুনুক ।"
\s5
\v 9 পরে তাঁর শিষ্যরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, এই গল্পটার মানে কী ?
\v 10 তিনি বললেন, "ঈশ্বরের রাজ্যের সমস্ত গুপ্ত বিষয় জানার অধিকার তোমাদের দেওয়া হয়েছে; কিন্তু অন্য সবার কাছে গল্পের মাধ্যমে বলা হয়েছে; যেন তারা দেখেও না দেখে এবং শুনেও না বোঝে ।"
\s5
\v 11 গল্পের মানে এই; সেই বীজ ঈশ্বরের বাক্য ।
\v 12 যে বীজগুলো রাস্তার পাশে পড়েছিল তা এমন লোকেদের বোঝায়, যারা শুনেছিল, পরে দিয়াবল এসে তাদের হৃদয় থেকে সেই বাক্য চুরি করে নিয়ে যায়, যেন তারা বিশ্বাস করে পাপের ক্ষমা না পায় ।
\v 13 আর যে বীজগুলি পাথরের ওপরে পড়েছিল তা এমন লোকদের বোঝায়, যারা শুনে আনন্দের সঙ্গে সেই বাক্য গ্রহণ করেছিল, কিন্তু তাদের মূল ছিল না, তারা অল্প সময়ের জন্য বিশ্বাস করে, আর পরীক্ষার সময় তারা বিশ্বাস থেকে দূরে চলে যায় ।
\s5
\v 14 আর যেগুলো কাঁটাবনের মধ্যে পড়ল, তারা এমন লোক, যারা শুনেছিল, কিন্তু চলতে চলতে জীবনের চিন্তা ও ধন ও সুখভোগে চাপা পড়ে যায় এবং ভাল ফল উৎপন্ন করে না ।
\v 15 আর যেগুলো ভাল জমিতে পড়ল, তারা এমন লোক, যারা সৎ ও ভালো হৃদয়ে বাক্য শুনে ধরে রাখে এবং ধৈর্য- সহকারে ফল উৎপন্ন করে ।
\s5
\v 16 আর প্রদীপ জালিয়ে কেউ পাত্র দিয়ে ঢাকে না, কিংবা খাটের নীচে রাখে না, কিন্তু বাতিদানের ওপরেই রাখে, যেন যারা ভিতরে যায়, তারা আলো দেখতে পায় ।
\v 17 কারণ এমন গোপন কিছুই নেই, যা প্রকাশিত হবে না এবং এমন লুকানো কিছুই নেই, যা জানা যাবে না ও প্রকাশ হবে না ।
\v 18 অতএব তোমরা কীভাবে শোন সে বিষয়ে সাবধান হও; কারণ যার আছে, তাকে দেওয়া হবে, আর যার নেই, তার যা কিছু আছে বলে নে করে, সেগুলোও তার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হবে।
\s5
\v 19 আর তাঁর মা ও ভাইয়েরা তাঁর কাছে আসলেন, কিন্তু লোকেদের ভিড়ের জন্য তাঁর কাছে যেতে পারলেন না ।
\v 20 পরে তাঁকে জানানো হল, আপনার মা ও আপনার ভাইয়েরা আপনাকে দেখার আশায় বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন ।
\v 21 তিনি এর উত্তরে তাদের বললেন, "এই যে ব্যক্তিরা ঈশ্বরের বাক্য শোনে ও পালন করে, এরাই আমার মা ও ভাই ।"
\v 22 এক দিন তিনি ও তাঁর শিষ্যরা একটি নৌকায় উঠলেন; আর তিনি তাঁদের বললেন, "চল আমরা হ্রদের ওপারে যাই" তাতে তাঁরা নৌকার পাল তুলে দিলেন ।
\v 23 কিন্তু তাঁরা যখন নৌকা করে যাচ্ছিলেন, তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন, তখন হ্রদের ওপর ঝড় এসে পড়ল, তাতে নৌকা জলে পূর্ণ হতে লাগল ও তাঁরা বিপদে পড়লেন ।
\s5
\v 24 পরে তাঁরা কাছে গিয়ে তাঁকে জাগিয়ে বললেন, "প্রভু, প্রভু, আমরা মারা পড়লাম ।" তখন তিনি ঘুম থেকে উঠে বাতাস ও ঢেউকে ধমক দিলেন, তাতে সবকিছু থেমে গেল, ও সবার শান্তি হল ।
\v 25 পরে তিনি তাঁদের বললেন, "তোমাদের বিশ্বাস কোথায় ?" তখন তাঁরা ভয় পেলেন ও খুবই আশ্চর্য হলেন, এক জন অন্য জনকে বললেন, "ইনি তবে কে যে, বায়ুকে ও জলকে আজ্ঞা দেন, আর তারা তাঁর আদেশ মানে ?
\v 26 পরে তাঁরা গালীলের ওপারে গেরাসেনীদের অঞ্চলে পৌঁছালেন ।
\v 27 আর তিনি পাড়ে নামলে ঐ শহরের একটা ভূতগ্রস্ত লোক তাঁর সামনে উপস্থিত হল; সে অনেক দিন ধরে কাপড় পড়ত না ও বাড়িতে বসবাস করত না, কিন্তু কবরে থাকত ।
\s5
\v 28 যীশুকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে সে চিৎকার করে উঠল এবং তাঁর সামনে পড়ে চিত্কার করে বলল, "হে যীশু, মহান ঈশ্বরের পুত্র, আপনার সঙ্গে আমার সম্পর্ক কী ? আপনাকে অনুরোধ করি আমাকে কষ্ট দেবেন না ।"
\v 29 কারণ তিনি সেই মন্দ আত্মাকে লোকটির মধ্যে থেকে বের হয়ে যেতে আদেশ করলেন ; ঐ আত্মা অনেক দিন তাকে ধরে রেখেছিল, আর শিকল ও বেড়ি দিয়ে তাকে বাঁধলেও সে সবকিছু ছিঁড়ে ভুতের বশে ফাঁকা জায়গায় চলে যেত ।
\s5
\v 30 যীশু তাকে জিজ্ঞাসা করলেন তোমার নাম কী ? সে বলল, "বাহিনী", কারণ অনেক ভূত তার মধ্যে প্রবেশ করেছিল ।
\v 31 পরে তারা তাঁকে অনুরোধ করতে লাগল, যেন তিনি তাদের রসাতলে (নরকে) চলে যেতে আদেশ না দেন ।
\s5
\v 32 সেই জায়গায় পাহাড়ের উপরে এক বড় শূকরের পাল চরছিল; তাতে ভূতেরা তাঁকে অনুরোধ করল, যেন তিনি তাদের শূকরদের মধ্যে প্রবেশ করতে অনুমতি দেন, তিনি তাদের অনুমতি দিলেন ।
\v 33 তখন ভূতেরা সেই লোকটার মধ্যে দিয়ে বের হয়ে শূকরদের মধ্যে প্রবেশ করল, তাতে সেই পাল ঢালু পাহাড় দিয়ে জোরে দৌড়ে গিয়ে হ্রদে পড়ে ডুবে মরল ।
\s5
\v 34 এই ঘটনা দেখে, যারা শূকর চরাচ্ছিল, তারা পালিয়ে গেল, এবং শহরে ও তার আশেপাশের অঞ্চলে খবর দিল ।
\v 35 তখন কী ঘটেছে, দেখার জন্য লোকেরা বের হল এবং যীশুর কাছে এসে দেখল, যে লোকটির মধ্যে থেকে ভূতেরা বের হয়েছে, সে কাপড় পরে ও ভদ্র হয়ে যীশুর পায়ের কাছে বসে আছে; তাতে তারা ভয় পেল ।
\s5
\v 36 আর যারা দেখেছিল, সেই ভূতে পাওয়া লোকটা কীভাবে সুস্থ হয়েছিল, তা তাদের বলল ।
\v 37 তাতে গেরাসেনীদের প্রদেশের সমস্ত লোকেরা তাঁকে অনুরোধ করল, যেন তিনি তাদের কাছ থেকে চলে যান; কারণ তারা খুবই ভয় পেয়েছিল, তখন ফিরে যাওয়ার জন্য তিনি নৌকায় উঠলেন ।
\s5
\v 38 আর যার মধ্যে থেকে ভূতেরা বের হয়েছিল, সেই লোকটি অনুরোধ করল, যেন তাঁর সঙ্গে থাকতে পারে;
\v 39 কিন্তু তিনি তাকে পাঠিয়ে দিলেন এবং বললেন, "তুমি তোমার বাড়ি ফিরে যাও এবং তোমার জন্য ঈশ্বর যা যা মহৎ কাজ করেছেন, তার বৃত্তান্ত বল ।" তাতে সে চলে গেল এবং যীশু তার জন্য যে সমস্ত মহৎ কাজ করেছেন, তা শহরের সব জায়গায় প্রচার করতে লাগল ।
\s যীশু একটি অসুস্থ মহিলাকে সুস্থ করেন ও একটি মৃত মেয়েকে জীবন দেন ।
\v 40 যীশু ফিরে আসার পর লোকেরা তাঁকে সাদরে গ্রহণ করল; কারণ সবাই তাঁর অপেক্ষা করছিল ।
\v 41 আর দেখ, যায়ীর নামে এক ব্যক্তি আসলেন; তিনি সমাজগৃহের এক জন নেতা । তিনি যীশুর পায়ে পড়ে তার বাড়ি যেতে তাঁকে অনুরোধ করতে লাগলেন;
\v 42 কারণ তার একমাত্র মেয়ে ছিল, বয়স প্রায় বারো বছর, আর সে যে কোনও মূহুর্তে মারা যেতে পারে । যীশু যখন যাচ্ছিলেন, তখন লোকেরা তাঁর উপরে চাপাচাপি করে পড়তে লাগল ।
\s5
\v 43 আর, একটি মহিলা, যে বারো বছর ধরে রক্তস্রাব রোগে ভুগছিলেন, তিনি ডাক্তারদের পিছনে সব কিছু ব্যয় করেও কারও কাছেই সুস্থ হতে পারেননি,
\v 44 সে পিছন দিকে এসে তাঁর বস্ত্রের থোপ স্পর্শ করলেন ; আর সঙ্গে সঙ্গে তার রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে গেল।
\s5
\v 45 তখন যীশু বললেন, "কে আমাকে স্পর্শ করল ?" সবাই অস্বীকার করলে পিতর ও তাঁর সঙ্গীরা বললেন, "প্রভু, লোকেরা চাপাচাপি করে আপনার উপরে পড়ছে ।"
\v 46 কিন্তু যীশু বললেন, "আমাকে কেউ স্পর্শ করেছে, কারণ আমি টের পেয়েছি যে, আমার মধ্যে থেকে শক্তি বের হয়েছে ।"
\s5
\v 47 মহিলাটি যখন দেখল, সে যা করেছে তা লুকানো যাবে না, তখন কাঁপতে কাঁপতে এসে তাঁর সামনে উপুড় হয়ে প্রণাম করল আর কীসের জন্য তাঁকে স্পর্শ করেছিল এবং কীভাবে সঙ্গে সঙ্গে সুস্থ হয়েছিল, তা সব লোকের সামনে বর্ণনা করলেন।
\v 48 তিনি তাকে বললেন, "মা ! তোমার বিশ্বাস তোমাকে সুস্থ করল; শান্তিতে চলে যাও ।
\s5
\v 49 তিনি কথা বলছেন, এমন সময়ে সমাজগৃহের এক অধ্যক্ষের বাড়ি থেকে এক জন এসে বলল, "আপনার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে, গুরুকে আর কষ্ট দেবেন না ।"
\v 50 একথা শুনে যীশু তাঁকে বললেন, ভয় করও না, কিন্তু বিশ্বাস কর, তাতে সে সুস্থ হবে ।
\s5
\v 51 পরে তিনি সেই বাড়িতে উপস্থিত হলে, পিতর, যাকোব ও যোহন এবং মেয়েটির বাবা ও মা ছাড়া আর কাউকেই প্রবেশ করতে দিলেন না ।
\v 52 তখন সবাই তার জন্য কাঁদছিল, ও দুঃখ করছিল । তিনি বললেন, "কেঁদ না; সে মারা যায়নি, ঘুমিয়ে আছে । "
\v 53 তখন তারা তাঁকে ঠাট্টা করল, কারণ তারা জানত, সে মারা গেছে ।
\s5
\v 54 কিন্তু তিনি তার হাত ধরে ডেকে বললেন, "মেয়ে ওঠ ।"
\v 55 তাতে তার আত্মা ফিরে আসল ও সে সেই মুহূর্তে উঠল, আর তিনি তাকে কিছু খাবার দিতে আদেশ দিলেন ।
\v 56 এসব দেখে তার মা বাবা খুবই আশ্চর্য হল, কিন্তু তিনি তাদের আদেশ দিয়ে বললেন, "এ ঘটনার কথা কাউকে বলো না ।"
\s5
\c 9
\s যীশুর আদেশ, শিক্ষা ও কাজ
\s যীশু বারো জন শিষ্যকে প্রচার করতে পাঠান ।
\p
\v 1 পরে তিনি সেই বারো জনকে একসঙ্গে ডাকলেন ও তাঁদের সমস্ত ভুতের উপরে এবং রোগ ভালো করবার জন্য, শক্তি ও ক্ষমতা দিলেন;
\v 2 ঈশ্বরের রাজ্য প্রচার করতে এবং সুস্থ করতে তাঁদের পাঠালেন ।
\s5
\v 3 আর তিনি তাঁদের বললেন, " রাস্তায় যাওয়ার সময় কিছুই সঙ্গে নিও না, লাঠি, থলে, খাবার, টাকা এমনকী দুটো জামাও নিও না ।
\v 4 আর তোমরা যে কোনও বাড়িতে প্রবেশ কর, সেখানেই থেকো এবং সেখান থেকে চলে যেও না ।
\s5
\v 5 আর যে লোকেরা তোমাদের গ্রহণ না করে, সেই শহর থেকে চলে যাওয়ার সময়ে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যের জন্য তোমাদের পায়ের ধুলো ঝেড়ে ফেলো ।
\v 6 পরে তাঁরা চলে গেলেন এবং চারিদিকে গ্রামে গ্রামে যেতে লাগলেন, সব জায়গায় সুসমাচার প্রচার এবং রোগ থেকে সুস্থ করতে লাগলেন ।
\s5
\v 7 আর, যা কিছু হচ্ছিল, হেরোদ রাজা সব কিছুই শুনতে পেলেন এবং তিনি বড় অস্থির হয়ে পড়লেন, কারণ কেউ কেউ বলত, যোহন মৃতদের মধ্য থেকে উঠেছেন;
\v 8 আবার অনেকে বলত, এলিয় দেখা দিয়েছেন এবং আরোও অন্যরা বলত, প্রাচীন কালের ভাববাদীদের মধ্য এক জন বেঁচে উঠেছেন ।
\v 9 আর হেরোদ বললেন, "যোহনের মাথা তো আমি কেটেছি কিন্তু ইনি কে, যাঁর বিষয়ে এমন কথা শুনতে পাচ্ছি ?" আর তিনি তাঁকে দেখবার চেষ্টা করতে লাগলেন ।
\v 10 পরে প্রেরিতেরা যা যা করেছিলেন, ফিরে এসে তার বৃত্তান্ত যীশুকে বললেন । আর তিনি তাদের সঙ্গে নিয়ে বৈৎসৈদা শহরের গেলেন ।
\v 11 কিন্তু লোকেরা তা জানতে পেরে তাঁর সঙ্গে সঙ্গে যেতে লাগল, আর তিনি তাদের স্বাগত জানিয়ে তাদের গ্রহণ করলেন এবং তাদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয় কথা বললেন, এবং যাদের সুস্থ হবার প্রয়োজন ছিল, তাদের সুস্থ করলেন ।
\s5
\v 12 পরে বেলা শেষ হতে লাগল, আর সেই বারো জন কাছে এসে তাঁকে বললেন, "আপনি এই লোকদের বিদায় করুন, যেন তারা আশেপাশের গ্রামে গিয়ে রাতে থাকার জায়গা ও খাবার সংগ্রহ করে, কারণ আমরা এখানে নির্জন জায়গায় আছি ।
\v 13 কিন্তু তিনি তাঁদের বললেন, "তোমরাই এদের খাবার দেও ।" তাঁরা বললেন, "পাঁচটা রুটি ও দুটো মাছ ছাড়া আমাদের কাছে আর কিছু নেই, তবে কি আমরা গিয়ে এই সমস্ত লোকের জন্য খাবার কিনে আনতে পারব ?"
\v 14 কারণ সেখানে প্রায় পাঁচ হাজার পুরুষ ছিল । তখন তিনি নিজের শিষ্যদের বললেন, "পঞ্চাশ পঞ্চাশ জন করে সারিবদ্ধ ভাবে সবাইকে বসিয়ে দাও ।"
\s5
\v 15 তাঁরা তেমনই করলেন, সবাইকে বসিয়ে দিলেন ।
\v 16 পরে তিনি সেই পাঁচটি রুটি ও দুটো মাছ নিয়ে স্বর্গের দিকে তাকিয়ে সেইগুলিকে আশীর্বাদ করলেন, ও ভাঙ্গলেন; আর লোকদের দেওয়ার জন্য শিষ্যদের দিতে বললেন ।
\v 17 তাতে সবাই খেয়ে তৃপ্তি পেল এবং তারা যা অবশিষ্ট রাখল, সেই সমস্ত গুঁড়োগাঁড়া খাবার জড়ো করা হলে সেগুলো বারো ঝুড়ি হল ।
\s যীশু তাঁর মৃত্যু ও মৃত্যু থেকে জীবিত হবার বিষয়ে কথা বলেন ।
\v 18 একবার তিনি এক নির্জন জায়গায় প্রার্থনা করছিলেন, শিষ্যরাও তাঁর সঙ্গে ছিলেন; আর তিনি তাঁদের জিজ্ঞাসা করলেন, "আমি কে, এ বিষয়ে লোকেরা কী বলে ?"
\v 19 তাঁরা এর উত্তরে বললেন, "বাপ্তিস্মদাতা যোহন; কিন্তু কেউ কেউ বলে, আপনি এলিয়, আবার কেউ কেউ বলে, প্রাচীন ভাববাদীদের মধ্যে এক জন বেচেঁ উঠেছে ।"
\s5
\v 20 তখন তিনি তাঁদের বললেন, কিন্তু তোমরা কী বল, আমি কে? পিতর বললেন, "ঈশ্বরের সেই খ্রীষ্ট ।"
\v 21 তখন তিনি তাঁদের কঠোরভাবে নিষেধ করলেন ও আদেশ দিলেন, "এই কথা কাউকে বল না",
\v 22 তিনি বললেন, "মনুষ্যপুত্রকে অনেক দুঃখ সহ্য করতে হবে, প্রাচীনেরা, প্রধান যাজকেরা ও ব্যবস্থার শিক্ষকেরা আমকে অগ্রাহ্য করবে এবং আমার মৃত্যু হবে আর তৃতীয় দিনে মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠব ।"
\s5
\v 23 আর তিনি সবাইকে বললেন, "কেউ যদি আমাকে অনুসরণ করতে চায়, তবে সে নিজেকে অস্বীকার করুক, প্রতিদিন নিজের ক্রুশ তুলে নিক, এবং আমাকে অনুসরণ করুক ।
\v 24 কারণ যে-কেউ নিজের প্রাণ রক্ষা করতে ইচ্ছা করে, সে তা হারাবে, কিন্তু যে-কেউ আমার জন্য নিজের প্রাণ হারায়, সেই তা রক্ষা করবে ।
\v 25 কারণ মানুষ যদি সমস্ত জগৎ লাভ করে নিজেকে নষ্ট করে কিংবা হারায়, তবে তার লাভ কী হল ?
\s5
\v 26 কারণ যে-কেউ আমাকে ও আমার বাক্যকে লজ্জার বিষয় বলে মনে করে, মনুষ্যপুত্র যখন নিজের প্রতাপে এবং পিতার ও পবিত্র দূতেদের প্রতাপে আসবেন, তখন তিনি তাকেও লজ্জার বিষয় বলে মনে করবেন ।
\v 27 কিন্তু আমি তোমাদের সত্যি বলছি, যারা এখানে দাঁড়িয়ে আছে, তাদের মধ্যে এমন কয়েকজন আছে, যারা, যে-পর্যন্ত না ঈশ্বরের রাজ্য দেখবে, সেই পর্যন্ত তাদের কোনও মতে মৃত্যু হবে না। "
\v 28 এসব কথা বলার পরে, অনুমান আট দিন গত হলে পর, তিনি পিতর, যোহন ও যাকোবকে সঙ্গে নিয়ে প্রার্থনা করার জন্য পর্বতে উঠলেন ।
\v 29 আর তিনি প্রার্থনা করছিলেন, এমন সময়ে তাঁর মুখের দৃশ্য অন্য রকম হল এবং তাঁর পোশাক সাদা ও উজ্জ্বল হয়ে উঠল ।
\s5
\v 30 আর দেখ, দুই জন পুরুষ তাঁর সঙ্গে কথা বলছেন,
\v 31 তাঁরা মোশি ও এলিয়, তাঁরা মহিমায় দেখা দিলেন, তাঁর মৃত্যুর বিষয় কথা বলতে লাগলেন, যা তিনি জিরুশালেমে পূর্ণ করতে যাচ্ছেন ।
\s5
\v 32 তখন পিতর ও তাঁর সঙ্গীরা ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, কিন্তু জেগে উঠে তাঁর প্রতাপ এবং ঐ দুই ব্যক্তিকে দেখলেন, যাঁরা তাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলেন ।
\v 33 পরে তাঁরা যীশুর কাছ থেকে চলে যাচ্ছেন, এমন সময়ে পিতর যীশুকে বললেন, "প্রভু, এখানে আমাদের থাকা ভালো, আমরা তিনটি কুটির বানাই, একটি আপনার জন্য, একটি মোশির জন্য, আর একটি এলিয়ের জন্য," কিন্তু তিনি কী বললেন, তা বুঝলেন না ।
\s5
\v 34 তিনি এই কথা বলছিলেন, এমন সময়ে একটা মেঘ এসে তাঁদের ছায়া করল, তাতে তাঁরা সেই মেঘে প্রবেশ করলেও, তাঁরা ভয় পেলেন ।
\v 35 আর সেই মেঘ থেকে এই বাণী হল, "ইনিই আমার পুত্র, আমার মনোনীত, তাঁর কথা শোন ।"
\v 36 এই বাণী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একা যীশুকে দেখা গেল । আর তাঁরা চুপ করে থাকলেন, যা যা দেখেছিলেন তার কিছুই সেই সময়ে কাউকেই জানালেন না ।
\v 37 পরের দিন তাঁরা সেই পাহাড় থেকে নেমে আসলে অনেক লোক তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করল ।
\v 38 আর দেখ, ভিড়ের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি চিত্কার করে বললেন, "হে গুরু, অনুরোধ করি, আমার ছেলেকে দেখুন, কারণ এ আমার একমাত্র সন্তান ।
\v 39 আর দেখুন, একটা আত্মা একে আক্রমণ করে, আর এ হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠে এবং সে একে মুচড়িয়ে ধরে, তাতে এর মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়, আর সে একে ক্ষত-বিক্ষত করে কষ্ট দেয় ।
\v 40 আর আমি আপনার শিষ্যদের অনুরোধ করেছিলাম, যেন তাঁরা এটাকে ছাড়ান কিন্তু তাঁরা পারলেন না ।
\s5
\v 41 তখন যীশু এর উত্তরে বললেন, হে অবিশ্বাসী ও বিপথগামী বংশ, কত কাল আমি তোমাদের কাছে থাকব ও তোমাদের ওপর ধৈর্য রাখব ?
\v 42 তোমার ছেলেকে এখানে আন । সে আসছে, এমন সময়ে ঐ ভূত তাকে ফেলে দিল ও ভয়ানক মুচড়িয়ে ধরল । কিন্তু যীশু সেই মন্দ আত্মাকে ধমক দিলেন, ছেলেটাকে সুস্থ করলেন ও তার বাবার কাছে তাকে ফিরিয়ে দিলেন ।
\s5
\v 43 তখন সবাই ঈশ্বরের মহিমায় খুবই আশ্চর্য হল ।
\v 44 আর তিনি যে সমস্ত কাজ করছিলেন, তাতে সমস্ত লোক আশ্চর্য হল এবং তিনি তাঁর শিষ্যদের বললেন, "তোমরা এই কথা ভাল করে শোন, কারণ খুব তাড়াতাড়ি মনুষ্যপুত্র লোকদের হাতে সমর্পিত হবেন ।
\v 45 কিন্তু তাঁরা এই কথা বুঝলেন না এবং এটা তাঁদের থেকে গোপন থাকল, যাতে তাঁরা বুঝতে না পারেন এবং তাঁর কাছে এইকথার বিষয় জিজ্ঞাসা করতে তাঁদের ভয় হল ।
\s5
\v 46 আর তাঁদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ, এই তর্ক তাঁদের মধ্যে উপস্থিত হল ।
\v 47 তখন যীশু তাঁদের হৃদয়ের তর্ক জানতে পেরে একটি শিশুকে নিয়ে তাঁর পাশে দাঁড় করালেন,
\v 48 এবং তাঁদের বললেন, "যে কেউ আমার নামে এই শিশুটিকে গ্রহণ করে, সে আমাকেই গ্রহণ করে এবং যে কেউ আমাকে গ্রহণ করে সে তাঁকেই গ্রহণ করে, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, কারণ তোমাদের মধ্যে যে- ব্যক্তি সবথেকে ছোট সেই মহান ।"
\s5
\v 49 পরে যোহন বললেন, "নাথ, আমরা এক ব্যক্তিকে আপনার নামে ভূত ছাড়াতে দেখেছিলাম, আর তাকে বারণ করছিলাম, কারণ সে আমাদের অনুসরণ করে না ।"
\v 50 কিন্তু যীশু তাঁকে বললেন, "বারণ করো না, কারণ যে তোমাদের বিরুদ্ধে নয়, সে তোমাদেরই পক্ষে ।"
\v 51 আর যখন তাঁর স্বর্গে যাওয়ার সময় শেষ হয়ে আসছিল, তখন তিনি নিজের ইচ্ছায় জেরুশালেমে যাওয়ার জন্য তৈরি হলেন এবং তিনি তাঁর দূতদের তাঁর আগে পাঠালেন ।
\v 52 আর তাঁরা গিয়ে শমরীয়দের কোন গ্রামে প্রবেশ করলেন, যাতে তাঁর জন্য আয়োজন করতে পারেন ।
\v 53 কিন্তু লোকেরা তাঁকে গ্রহণ করল না, কারণ তিনি জেরুশালেম যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলেন ।
\s5
\v 54 তা দেখে তাঁর শিষ্য যাকোব ও যোহন বললেন, "প্রভু, আপনি কি ইচ্ছা করেন যে, এলিয় যেমন করেছিলেন, তেমনি আমরা বলি, আকাশ থেকে আগুন নেমে এসে এদের ভস্ম করে ফেলুক ?"
\v 55 কিন্তু তিনি মুখ ফিরিয়ে তাঁদের ধমক দিলেন, আর বললেন, "তোমরা কেমন আত্মার লোক, তা জান না ।"
\v 56 কারণ মনুষ্যপুত্র লোকেদের প্রাণনাশ করতে আসেন নি, কিন্তু রক্ষা করতে এসেছেন । পরে তাঁরা অন্য গ্রামে চলে গেলেন ।
\s5
\v 57 তাঁরা যখন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন, এমন সময়ে এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, আপনি যে কোন জায়গায় যাবেন, আমি আপনার সঙ্গে যাব ।
\v 58 যীশু তাকে বললেন, "শিয়ালদের গর্ত আছে এবং আকাশের পাখিদের বাসা আছে, কিন্তু মনুষ্যপুত্রের মাথা রাখার কোন জায়গা নেই ।"
\s5
\v 59 আর এক জনকে তিনি বললেন, "আমাকে অনুসরণ কর ।" কিন্তু সে বলল, "প্রভু, আগে আমার বাবাকে কবর দিয়ে আসতে অনুমতি দিন ।
\v 60 তিনি তাকে বললেন, "মৃতরাই মৃতদের কবর দিক, কিন্তু তুমি গিয়ে ঈশ্বরের রাজ্য ঘোষণা কর । "
\s5
\v 61 আর এক জন বলল, "প্রভু, আমি আপনাকে অনুসরণ করব, কিন্তু আগে নিজের বাড়ির লোকদের কাছে বিদায় নিয়ে আসতে অনুমতি দিন ।"
\v 62 কিন্তু যীশু তাকে বললেন, "যে ব্যক্তি লাঙ্গলে হাত দিয়ে পিছনে ফিরে চায়, সে ঈশ্বরের রাজ্যের উপযোগী নয় ।"
\s5
\c 10
\s যীশু সত্তর জনকে পাঠান ও বিবিধ শিক্ষা দেন ।
\p
\v 1 এরপরে প্রভু আরও সত্তর জনকে নিযুক্ত করলেন, আর তিনি যেখানে যেখানে যাবেন বলে ঠিক করতেন, সেই সমস্ত শহরে ও জায়গায় তাঁর যাওয়ার আগে দুইজন দুইজন করে তাদের পাঠালেন ।
\v 2 তিনি তাদের বললেন, "শস্য প্রচুর বটে, কিন্তু কাজ করার লোক অল্প, অতএব শস্য ক্ষেতের মালিকের কাছে প্রার্থনা কর, যেন তিনি নিজের শস্য ক্ষেতে কর্মচারীদের পাঠিয়ে দেন ।"
\s5
\v 3 তোমরা যাও, দেখ, নেকড়ে বাঘেদের মাঝে যেমন মেষের বাচ্চা, তেমনি আমিও তোমাদের পাঠাচ্ছি ।"
\v 4 তোমরা টাকার থলি কি ঝুলি কি জুতো সঙ্গে নিয়ে যেও না এবং রাস্তায় কাউকেই শুভেচ্ছা জানিও না ।
\s5
\v 5 আর যে কোন বাড়িতে প্রবেশ করবে, প্রথমে বলো, এই বাড়ির শান্তি হোক ।
\v 6 আর সেখানে যদি শান্তির সন্তান থাকে, তবে তোমাদের শান্তি তার সঙ্গে থাকবে, না হলে তোমাদের কাছে ফিরে আসবে ।
\v 7 আর সেই বাড়িতেই থেকো এবং তারা যা দেয়, তাই খেও ও পান কোর, কারণ কর্মচারী তার বেতনের যোগ্য ! এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে যেও না ।
\s5
\v 8 আর তোমরা যে কোন শহরে প্রবেশ কর, লোকেরা যদি তোমাদের গ্রহণ করে, তবে যা তোমাদের সামনে খাওয়ার জন্য রাখা হবে, তাই খেও ।
\v 9 আর সেখানকার অসুস্থদের সুস্থ করো এবং তাদেরকে বলো, ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের কাছে এসে পড়েছে ।
\s5
\v 10 কিন্তু তোমরা যে কোন শহরে প্রবেশ কর, লোকে যদি তোমাদেরকে গ্রহণ না করে, তবে বের হয়ে সেই শহরের রাস্তায় রাস্তায় গিয়ে এই কথা বলো,
\v 11 তোমাদের শহরের যে ধূলো আমাদের পায়ে লেগেছে, তাও তোমাদের বিরুদ্ধে ঝেড়ে দিই, কিন্তু এটা জেনে রাখো যে, ঈশ্বরের রাজ্য খুব কাছে এসে পড়েছে ।
\v 12 আমি তোমাদের বলছি, সেই দিন সেই শহরের দশার থেকে বরং সদোমের দশা সহনীয় হবে ।
\s5
\v 13 কোরাসীন, ধিক তোমাকে! বৈৎসৈদা, ধিক তোমাকে ! কারণ তোমাদের মধ্যে যে সব আশ্চর্য কাজ করা হয়েছে, সে সব যদি সোর ও সীদোনে করা হত, তবে অনেক দিন আগেই তারা চট পরে ভস্মে বসে মন ফেরাত ।
\v 14 কিন্তু বিচারে তোমাদের দশা হতে বরং সোর ও সীদোনের দশা সহনীয় হবে ।
\v 15 আর হে কফরনাহূম, তুমি নাকি স্বর্গ পর্যন্ত উন্নত হবে ? তুমি পাতাল পর্যন্ত নেমে যাবে ।
\s5
\v 16 যে তোমাদের মানে, সে আমাকেই মানে এবং যে তোমাদের অগ্রাহ্য করে, সে আমাকেই অগ্রাহ্য করে আর যে আমাকে অগ্রাহ্য করে, সে তাঁকেই অগ্রাহ্য করে, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন ।
\s5
\v 17 পরে সেই সত্তর জন আনন্দের সঙ্গে ফিরে এসে বলল, "প্রভু, আপনার নামে ভূতেরাও আমাদের বশীভূত হয় ।"
\v 18 তিনি তাদের বললেন, "আমি শয়তানকে বিদ্যুতের মতো স্বর্গ থেকে পড়তে দেখছিলাম ।
\v 19 দেখ, আমি তোমদের সাপ ও বিছাকে পায়ে পিষে মারার এবং শত্রুর সমস্ত শক্তির উপরে কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা দিয়েছি । কিছুই কোন মতে তোমাদের ক্ষতি করবে না,
\v 20 কিন্তু আত্মারা যে তোমাদের বশীভূত হয়, এতে আনন্দ কর না, কিন্তু তোমাদের নাম যে স্বর্গে লেখা আছে, তাতে আনন্দ কর ।"
\s5
\v 21 সেই সময় তিনি পবিত্র আত্মায় আনন্দিত হলেন ও বললেন, " হে পিতা, স্বর্গের ও পৃথিবীর প্রভু, আমি তোমার প্রশংসা করছি, কারণ জ্ঞানবান ও বুদ্ধিমানদের থেকে সমস্ত বিষয় গোপন রেখে শিশুদের কাছে এইসব প্রকাশ করেছ। হ্যাঁ, পিতা, কারণ এটা তোমার দৃষ্টিতে ভাল মনে হয়েছে।
\s5
\v 22 সবকিছুই আমার পিতার মাধ্যমে আমাকে সমর্পণ করা হয়েছে এবং পুত্র কে, তা কেউ জানে না, একমাত্র পিতা জানেন, আর পিতা কে, তা কেউ জানেন না, শুধুমাত্র পুত্র জানেন, আর পুত্র যার কাছে তাঁকে প্রকাশ করতে ইচ্ছা করে, সে জানে ।"
\s5
\v 23 পরে তিনি শিষ্যদের দিকে ফিরে তাদের গোপনে বললেন, "ধন্য সেই সমস্ত চোখ, তোমরা যা যা দেখছ, যারা তা দেখে ।"
\v 24 কারণ আমি তোমাদের বলছি, "তোমরা যা যা দেখছ, সেসব অনেক ভাববাদী ও রাজা দেখতে ইচ্ছা করেও দেখতে পান নি এবং তোমরা যা যা শুনছ, সেসব তাঁরা শুনতে চাইলেও শুনতে পান নি ।"
\v 25 আর দেখ, এক জন ব্যবস্থার গুরু এসে তাঁর পরীক্ষা করার জন্য বলল, হে গুরু কী করলে আমি অনন্ত জীবনের অধিকারী হব ?
\v 26 তিনি তাকে বললেন, আইন ব্যবস্থায় কী লেখা আছে ? সেখানে তুমি কী পাঠ কর ?
\v 27 সে উত্তরে বলল, “তুমি তোমার সমস্ত হৃদয়, তোমার সমস্ত প্রাণ, তোমার সমস্ত শক্তি ও তোমার সমস্ত মন দিয়ে তোমার ঈশ্বর প্রভুকে ভালোবাসবে এবং তোমার প্রতিবেশিকে নিজের মত ভালোবাসবে ।”
\v 28 তিনি তাকে বললেন, "ঠিক উত্তর দিয়েছ, তাই কর, তাতে জীবন পাবে ।"
\s5
\v 29 কিন্তু সে নিজেকে নির্দোষ দেখানোর জন্য যীশুকে বলল, "ভালো, আমার প্রতিবেশী কে?"
\v 30 এই কথায় যীশু বললেন, "এক ব্যক্তি জিরুশালেম থেকে যিরীহোর দিকে নেমে যাচ্ছিলেন, এমন সময়ে সে ডাকাতদের হাতে পড়ল, তারা তার পোশাক খুলে নিল এবং তাকে মেরে আধমরা করে ফেলে চলে গেল ।
\s5
\v 31 ঘটনাক্রমে এক জন যাজক সেই পথ দিয়েই নেমে আসছিলেন, সে তাকে দেখে এক পাশ দিয়ে চলে গেল ।
\v 32 পরে একই ভাবেই এক জন লেবীয়ও সেই স্থানে এসে দেখল এবং এক পাশ দিয়ে চলে গেল ।
\s5
\v 33 কিন্তু এক জন শমরীয় সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিল এবং তার কাছে গেল, আর তাকে দেখে তার খুব দয়া হল,
\v 34 এবং কাছে গিয়ে তেল ও আঙ্গুরের রস (মদ) ঢেলে দিয়ে তার ক্ষত জায়গাগুলো বেঁধে দিল, পরে তার পশুর উপরে তাকে বসিয়ে এক সরাইখানায় নিয়ে গেল ও তার যত্ন করল ।
\v 35 পরের দিন দুটি সিকি বের করে সরাইখানার মালিককে দিয়ে বলল, "এই ব্যক্তির যত্ন করো, যদি বেশি কিছু ব্যয় হয়, আমি যখন ফিরে আসব, তখন শোধ করব ।"
\s5
\v 36 তোমার কী মনে হয়, এই তিন জনের মধ্যে কে ঐ ডাকাতদের হাতে পড়া ব্যক্তির প্রতিবেশী হয়ে উঠল ?
\v 37 সে বলল, "যে ব্যক্তি তার প্রতি দয়া করল, সেই ।" তখন যীশু তাকে বললেন, যাও, "তুমিও তেমন কর ।"
\s5
\v 38 আর যখন তাঁরা যাচ্ছিলেন, তিনি কোন একটা গ্রামে প্রবেশ করলেন, আর মার্থা নামে এক মহিলার বাড়িতে তিনি আতিথ্য গ্রহণ করলেন ।
\v 39 মরিয়ম নামে তাঁর এক বোন ছিলেন, তিনি প্রভুর পায়ের কাছে বসে তাঁর কথা শুনতে লাগলেন ।
\s5
\v 40 কিন্তু মার্থা রান্নার কাজে বেশি ব্যতিব্যস্ত ছিলেন, আর তিনি কাছে এসে বললেন, "প্রভু, আপনি কি কিছু মনে করছেন না যে, আমার বোন সমস্ত কাজের ভার একা আমার উপরে ফেলে রেখেছে ? অতএব ওকে বলুন, যেন আমার সাহায্য করে ।"
\v 41 কিন্তু প্রভু উত্তরে তাঁকে বললেন, "মার্থা, মার্থা, তুমি অনেক বিষয়ে চিন্তিত আছ,
\v 42 কিন্তু অল্প কয়েকটি বিষয়, বরং একটি মাত্র বিষয় প্রয়োজন, কাজেই মরিয়ম সেই উত্তম বিষয়টি মনোনীত করেছে, যা তার কাছ থেকে নেওয়া যাবে না ।"
\s5
\c 11
\s নানা বিষয়ে যীশুর উপদেশ ।
\p
\v 1 এক সময়ে তিনি কোন স্থানে প্রার্থনা করছিলেন, যখন প্রার্থনা শেষ করলেন, তাঁর শিষ্যদের মধ্যে এক জন তাঁকে বললেন, "প্রভু, আমাদের প্রার্থনা করার শিক্ষা দিন, যেমন যোহনও নিজের শিষ্যদের শিক্ষা দিয়েছিলেন ।"
\v 2 তিনি তাঁদের বললেন, "তোমরা যখন প্রার্থনা কর, তখন এমন বোলো, পিতা তোমার নাম পবিত্র বলে মান্য হোক। তোমার রাজ্য আসুক ।
\s5
\v 3 আমাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য প্রতিদিন আমাদের দাও ।
\v 4 আর আমাদের সমস্ত পাপ ক্ষমা কর, কারণ আমরাও আমাদের প্রত্যেক অপরাধীকে ক্ষমা করি । আর আমাদের প্রলোভন থেকে দূরে রাখ ।"
\s5
\v 5 আর তিনি তাঁদের বললেন, "তোমাদের মধ্যে কারও যদি বন্ধু থাকে, আর সে যদি মাঝ রাতে তার কাছে গিয়ে বলে, ‘বন্ধু, আমাকে তিনটে রুটি ধার দাও,
\v 6 কারণ আমার এক বন্ধু রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে আমার কাছে এসেছেন, তাঁর সামনে রাখার মতো আমার কিছুই নেই’
\v 7 তা হলে সেই ব্যক্তি ভিতরে থেকে কি এমন উত্তর দেবে, ‘আমাকে কষ্ট দিও না, এখন দরজা বন্ধ, এবং আমার সন্তানেরা আমার কাছে শুয়ে আছে, আমি উঠে তোমাকে দিতে পারব না ?"
\v 8 আমি তোমাদের বলছি, "সে যদিও বন্ধু ভেবে উঠে তাকে কিছু নাও দেয়, কিন্তু তাঁকে অপমানের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তাঁর যত প্রয়োজন, তার বেশি দেবে ।"
\s5
\v 9 আর আমি তোমাদের বলছি, "চাও, তোমাদের দেওয়া হবে, খোঁজ, পাবে; দরজায় আঘাত কর, তোমাদের জন্য খুলে দেওয়া হবে ।
\v 10 কারণ যে কেউ চায়, সে গ্রহণ করে এবং যে খোঁজ করে, সে পায় আর যে দরজায় আঘাত করে, তার জন্য খুলে দেওয়া হবে ।
\s5
\v 11 তোমাদের মধ্যে এমন বাবা কে আছে, যার ছেলে রুটি চাইলে তাকে পাথর দেবে । কিংবা মাছের পরিবর্তে সাপ দেবে ?
\v 12 কিংবা ডিম চাইলে তাকে বিছা দেবে ?
\v 13 অতএব তোমারা মন্দ হয়েও যদি তোমাদের সন্তানদের ভালো ভালো জিনিস দিতে জান, তবে কত বেশি তোমাদের স্বর্গের পিতা দেবেন, যারা তাঁর কাছে চায়, তাদের পবিত্র আত্মা দান করবেন ।"
\v 14 আর তিনি এক ভূত ছাড়িয়ে ছিলেন, সে বোবা । ভূত বের হলে সেই বোবা কথা বলতে লাগল, তাতে লোকেরা আশ্চর্য হল ।
\v 15 কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলল, "এ ব্যক্তি ভূতের অধিপতি বেলসবূলের মাধ্যমে ভূত ছাড়ায় ।"
\s5
\v 16 আর কেউ কেউ পরীক্ষা করার জন্য তাঁর কাছে আকাশ থেকে কোন চিহ্ন দেখতে চাইল ।
\v 17 কিন্তু তিনি তাদের মনের ভাব জানতে পেরে তাদের বললেন, "যে কোন রাজ্য যদি নিজের বিরুদ্ধে ভাগ হয়, তবে তা ধ্বংস হয় এবং বাড়ি যদি বাড়ির বিপক্ষে যায় তা ধংস হয় ।
\s5
\v 18 আর শয়তানও যদি নিজের বিপক্ষে ভাগ হয়, তবে তার রাজ্য কীভাবে স্থির থাকবে ? কারণ তোমরা বলছ, আমি বেলসবূলের মাধ্যমে ভূত ছাড়াই ।
\v 19 আর আমি যদি বেলসবূলের মাধ্যমে ভূত ছাড়াই, তবে তোমাদের সন্তানেরা কার মাধ্যমে ছাড়ায়? এই জন্য তারাই তোমাদের বিচারকর্তা হবে ।
\v 20 কিন্তু আমি যদি ঈশ্বরের শক্তি দিয়ে ভূত ছাড়াই, তবে সুতরাং, ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের কাছে এসে পড়েছে ।
\s5
\v 21 সেই বলবান ব্যক্তি যখন অস্ত্রশস্ত্রে তৈরি থেকে নিজের বাড়ি রক্ষা করে, তখন তার সম্পত্তি নিরাপদে থাকে ।
\v 22 কিন্তু যিনি তার থেকেও বেশি শক্তিশালী, তিনি এসে যখন তাকে পরাজিত করেন, তখন তার যে অস্ত্রে ভরসা ছিল, তা কেড়ে নেবেন, ও তার সমস্ত জিনিস লুঠ করবেন ।
\v 23 যে আমার স্বপক্ষে নয়, সে আমার বিপক্ষে এবং যে আমার সঙ্গে কুড়ায় না, সে ছড়িয়ে ফেলে ।
\s5
\v 24 যখন অশুচি আত্মা মানুষের মধ্যে থেকে বের হয়ে যায়, তখন জলবিহীন নানা স্থান দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে বিশ্রামের খোঁজ করে, কিন্তু না পেয়ে বলে, আমি যেখান থেকে বের হয়ে এসেছি, আমার সেই বাড়িতে ফিরে যাই ।
\v 25 পরে এসে তা পরিস্কার ও ভাল দেখে ।
\v 26 তখন সে গিয়ে তার মত আরো সাতটা মন্দ আত্মাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসে এবং তারা সেই জায়গায় প্রবেশ করে বাস করে, তাতে সেই ব্যক্তির প্রথম দশার থেকে শেষ দশা আরও মন্দ হয় ।"
\s5
\v 27 তিনি এই সমস্ত কথা বলছেন, এমন সময়ে ভিড়ের মধ্য থেকে কোন এক জন মহিলা চিত্কার করে তাঁকে বলল, "ধন্য সেই গর্ভ, যা আপনাকে ধারণ করেছিল, আর সেই স্তন, যার দুধ আপনি পান করেছিলেন ।"
\v 28 তিনি বললেন, "সত্যি, কিন্তু বরং ধন্য তারাই, যারা ঈশ্বেরের কথা শুনে পালন করে ।"
\v 29 পরে তাঁর কাছে অনেক লোকের ভিড় বাড়তে লাগল, তখন তিনি বলতে লাগলেন, "এই যুগের লোকেরা মন্দ, এরা চিহ্নের খোঁজ করে, কিন্তু যোনার চিহ্ন ছাড়া আর কোন চিহ্ন তাদের দেওয়া হবে না ।
\v 30 কারণ যোনা যেমন নীনবীয়দের কাছে চিহ্নের মতো হয়েছিলেন, তেমনি মনুষ্যপুত্রও এই যুগের লোকদের কাছে চিহ্ন হবেন ।
\s5
\v 31 দক্ষিণ দেশের রানী বিচারে এই যুগের লোকদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে এদেরকে দোষী করবেন । কেননা শলোমনের জ্ঞানের কথা শোনার জন্য তিনি পৃথিবীর প্রান্ত থেকে এসেছিলেন, আর দেখ, শলোমনের থেকেও মহান এক ব্যক্তি এখানে আছেন ।
\s5
\v 32 নীনবীয় লোকেরা বিচারে এই যুগের লোকদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে এদের দোষী করবে, কারণ তারা যোনার প্রচারে মন পরিবর্তন করেছিল, আর দেখ, যোনার থেকেও মহান এক ব্যক্তি এখানে আছেন ।
\s5
\v 33 প্রদীপ জেলে কেউ গোপন জায়গায় কিংবা ঝুড়ির নীচে রাখে না, কিন্তু বাতিদানের উপরেই রাখে, যেন, যারা ভিতরে যায়, তারা আলো দেখতে পায় ।
\v 34 তোমার চোখই হল শরীরের প্রদীপ, তোমার চোখ যদি সরল হয়, তখন তোমার সমস্ত শরীরও আলোকিত হয়, কিন্তু চোখ মন্দ হলে তোমার শরীরও অন্ধকারে পূর্ণ হয়।
\v 35 অতএব সাবধান হও যে, তোমার অন্তরে যে আলো আছে, তা অন্ধকার কি-না ।
\v 36 সত্যিই যদি তোমার সমস্ত শরীর আলোকিত হয় এবং কোনও অংশ অন্ধকারে পূর্ণ না থাকে, তবে প্রদীপ যেমন নিজের তেজে তোমাকে আলো দান করে, তেমনি তোমার শরীর সম্পূর্ণভাবে আলোকিত হবে।"
\v 37 তিনি কথা বলছেন, এমন সময়ে এক জন ফরীশী তাঁকে খাওয়ার নিমন্ত্রণ করল, আর তিনি ভিতরে গিয়ে খেতে বসলেন ।
\v 38 ফরীশী দেখে আশ্চর্য হলো, কারণ খাবার আগে তিনি স্নান করেন নি ।
\s5
\v 39 কিন্তু প্রভু তাকে বললেন, "তোমরা ফরীশীরা তো পান করার পাত্র ও খাওয়ার পাত্র্রের বাইরে পরিস্কার কর, কিন্তু তোমাদের ভিতরে লোভ ও দুষ্টতায় পরিপূর্ণ ।
\v 40 নির্বোধেরা, যিনি বাইরের অংশ তৈরি করেছেন, তিনি কি ভেতরের অংশও তৈরি করেন নি ?
\v 41 বরং ভিতরে যা যা আছে, তা দান কর, তা হলে দেখবে, তোমদের পক্ষে সব কিছুই পবিত্র ।
\s5
\v 42 কিন্তু ফরীশীরা, ধিক তোমাদের, কারণ তোমরা পুদিনা, ধনে ও সমস্ত প্রকার শাকের দশমাংশ দান করে থাক, আর ন্যায়বিচার ও ঈশ্বরের প্রেম উপেক্ষা করে থাক, কিন্তু এসব পালন করা, এবং ঐ সমস্ত পরিত্যাগ না করা, তোমাদের উচিত ছিল ।
\s5
\v 43 ফরীশীরা, ধিক তোমাদের, কেননা তোমরা সমাজগৃহে প্রধান আসন, ও হাটে বাজারে লোকদের শুভেচ্ছা পেতে ভালোবাস ।
\v 44 ধিক তোমাদের, কারণ তোমরা এমন গোপন কবরের মতো, যার উপর দিয়ে লোকে না জেনে যাতায়াত করে ।"
\s5
\v 45 তখন ব্যবস্থা গুরুদের মধ্য এক জন উত্তরে তাঁকে বলল, "হে গুরু, একথা বলে আপনি আমাদেরও অপমান করছেন ।"
\v 46 তিনি বললেন, "ব্যবস্থার গুরুরা, ধিক তোমাদেরও, কারণ তোমারা লোকদের ওপরে ভারী বোঝা চাপিয়ে দিয়ে থাক, কিন্তু নিজেরা একটি আঙ্গুল দিয়ে সেই সমস্ত বোঝা স্পর্শও কর না ।
\s5
\v 47 ধিক তোমাদের, কারণ তোমরা ভাববাদীদের কবর গেঁথে থাক, আর তোমাদের পূর্বপুরুষেরা তাঁদের বধ করেছিল ।
\v 48 সুতরাং তোমরাই এর সাক্ষী এবং তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাজের সমর্থন করছ, কারণ তারা তাঁদের বধ করেছিল, আর তোমরা তাঁদের কবর গাঁথ ।
\s5
\v 49 এই জন্য ঈশ্বরের প্রজ্ঞা এ কথা বলে, আমি তাদের কাছে ভাববাদী ও প্রেরিতদের পাঠাব, আর তাঁদের মধ্যে তারা কাউকে কাউকে বধ করবে, ও অত্যাচার করবে,
\v 50 যেন পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে যত ভাববাদীর রক্তপাত হয়েছে, তার প্রতিশোধ এই যুগের লোকদের কাছে যেন নেওয়া যায়
\v 51 হেবলের রক্তপাত থেকে সখরিয়ের রক্তপাত পর্যন্ত, যাকে যজ্ঞবেদী ও মন্দিরের মাঝখানে হত্যা করা হয়েছিল, হ্যাঁ, আমি তোমাদের বলছি, এই যুগের লোকদের কাছে তার প্রতিশোধ নেওয়া হবে ।
\s5
\v 52 ব্যবস্থার গুরুরা, ধিক তোমাদের, কারণ তোমরা জ্ঞানের চাবি নিজেদের কাছে রেখে দিয়েছ, আর নিজেরাও প্রবেশ করলে না এবং যারা প্রবেশ করছিল, তাদেরও বাধা দিলে ।"
\s5
\v 53 তিনি সেখান থেকে বের হয়ে এলে ব্যবস্থার গুরুরা ও ফরীশীরা তাঁকে ভীষণভাবে বিরক্ত করতে, ও নানা বিষয়ে কথা বলবার জন্য প্রশ্ন করতে লাগল,
\v 54 তাঁর মুখের কথার ভুল ধরার জন্য ফাঁদ পেতে রাখল ।
\s5
\c 12
\s ভণ্ডামি ও লোভ সম্পর্কে যীশুর উপদেশ।
\p
\v 1 এর মধ্যে হাজার হাজার লোক সমবেত হয়ে এক জন অন্যের উপর পড়তে লাগল, তখন তিনি তাঁর শিষ্যদের বলতে লাগলেন, "তোমরা ফরীশীদের খামির (ইস্ট) থেকে সাবধান থাক, তা ভণ্ডামি।
\s5
\v 2 কিন্তু এমন ঢাকা কোনো কিছুই নেই, যা প্রকাশ পাবে না এবং এমন কিছুই গোপন নেই, যা জানা যাবে না।
\v 3 অতএব তোমরা অন্ধকারে যা কিছু বলেছ, তা আলোতে শোনা যাবে এবং কোনো গোপন জায়গায় কানে কানে যা বলেছ, তা ছাদের উপরে প্রচারিত হবে ।
\s5
\v 4 আর, হে আমার বন্ধুরা, আমি তোমাদের বলছি, যারা শরীর বধ করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না, তাদের ভয় পেও না ।
\v 5 তবে কাকে ভয় করবে, তা বলে দিই, বধ করে নরকে ফেলার যাঁর ক্ষমতা আছে, তাকেই ভয় কর ।
\s5
\v 6 পাঁচটী চড়াই পাখি কি দুই পয়সায় বিক্রি হয় না ? আর তাদের মধ্যে একটিও ঈশ্বরের দৃষ্টির আড়ালে থাকে না ।
\v 7 এমন কী, তোমাদের মাথার চুলগুলিও সব গোনা আছে । ভয় করো না, তোমরা অনেক চড়াই পাখির থেকেও শ্রেষ্ঠ ।"
\s5
\v 8 আর আমি তোমাদের বলছি, "যে কেউ লোকদের সামনে আমাকে স্বীকার করে, মনুষ্যপুত্রও ঈশ্বরের দূতগনের সামনে তাকে স্বীকার করবেন;
\v 9 কিন্তু যে কেউ লোকেদের সামনে আমাকে অস্বীকার করে, ঈশ্বরের দূতগণের সামনে তাকে অস্বীকার করা হবে ।
\v 10 আর যে কেউ মনুষ্যপুত্রের বিরুদ্ধে কোন কথা বলে, সে ক্ষমা পাবে, কিন্তু যে কেউ পবিত্র আত্মার নিন্দা করে, সে ক্ষমা পাবে না ।
\s5
\v 11 আর লোকে যখন তোমাদের সমাজগৃহে এবং শাসনকর্ত্তাদের ও নেতাদের কাছে নিয়ে যাবে, তখন কীভাবে কী উত্তর দেবে, অথবা কী বলবে, সে বিষয়ে চিন্তা করো না,
\v 12 কারণ কী বলা উচিৎ, তা পবিত্র আত্মা সেই সময়ে তোমাদের শিক্ষা দেবেন ।"
\s5
\v 13 পরে লোকেদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, "হে গুরু, আমার ভাইকে বলুন, যেন আমার সঙ্গে পৈতৃক সম্পত্তি ভাগ করে ।"
\v 14 কিন্তু তিনি তাকে বললেন, "তোমাদের উপরে বিচারকর্তা বা বিভাগকর্তা করে আমাকে কে নিযুক্ত করেছে ?"
\v 15 পরে তিনি তাদের বললেন, "সাবধান, সমস্ত লোভ থেকে নিজেদের রক্ষা কর, কারণ মানুষের ধন সম্পত্তি অধিক হলেও তা তার জীবন হয় না ।"
\s5
\v 16 আর তিনি তাদের এই গল্প বললেন, "এক জন ধনীর জমিতে অনেক শস্য উৎপন্ন হয়েছিল ।
\v 17 তাতে সে, মনে মনে চিন্তা করতে লাগল, কী করি ? আমার তো শস্য রাখার জায়গা নেই ।
\v 18 পরে বলল, "আমি এমন করব, আমার গোলাঘরগুলো ভেঙ্গে বড় বড় গোলাঘর তৈরি করব এবং তার মধ্যে আমার সমস্ত শস্য ও আমার অন্য জিনিস রাখব ।
\v 19 আর নিজের প্রাণকে বলব, প্রাণ, অনেক বছরের জন্য, তোমার জন্য অনেক জিনিস সঞ্চিত আছে, বিশ্রাম কর, খাও, পান কর ও আনন্দে মেতে থাক ।"
\s5
\v 20 কিন্তু ঈশ্বর তাকে বললেন, "হে নির্বোধ, আজ রাতেই তোমার প্রাণ তোমার কাছ থেকে দাবি করে নেওয়া হবে, তবে তুমি এই যে আয়োজন করলে, এসব কার হবে?"
\v 21 যে কেউ নিজের জন্য ধন সঞ্চয় করে সে ঈশ্বরের কাছে ধনবান নয়, তার অবস্থা এমনই হয় ।"
\s5
\v 22 পরে তিনি তাঁর শিষ্যদেরকে বললেন, "এই জন্য আমি তোমাদের বলছি, ‘কী খাব’ বলে প্রাণের বিষয়ে, কিংবা ‘কী পরব’ বলে শরীরের বিষয়ে ভেব না ।
\v 23 কেননা খাবারের থেকে প্রাণ ও পোশাকের থেকে শরীর বড় বিষয় ।
\s5
\v 24 কাকদের বিষয় চিন্তা কর, তারা বোনেও না, কাটেও না, তাদের ভাণ্ডারও নেই, গোলাঘরও নেই, কিন্তু ঈশ্বর তাদেরও খাবার দিয়ে থাকেন ।
\v 25 পাখিদের থেকেও তোমরা কত বেশি শ্রেষ্ঠ ! আর তোমাদের মধ্যে কে চিন্তা করে নিজের বয়স এক হাত বড় করতে পারে ?
\v 26 অতএব তোমরা এত ছোট কাজও যদি করতে না পার, তবে অন্য অন্য বিষয়ে কেন চিন্তিত হও ?
\s5
\v 27 লিলি ফুলের বিষয়ে চিন্তা কর, সেগুলি কেমন বাড়ে, সেগুলি কোন পরিশ্রম করে না, সুতোও কাটে না, কিন্তু আমি তোমাদেরকে বলছি, শলোমনও তাঁর সমস্ত গৌরবেও এদের একটির মতোও নিজেকে সাজাতে পারেননি ।
\v 28 ভাল, মাঠের যে ঘাস আজ আছে তা কাল আগুনে ফেলে দেওয়া হবে, তা যদি ঈশ্বর এমন সুন্দর করে সাজিয়েছেন, তবে হে অল্পবিশ্বাসীরা, তোমাদের কত বেশি করে নিশ্চয় সাজাবেন !
\s5
\v 29 আর, কী খাবে, কী পান করবে, এ বিষয়ে তোমরা ব্যস্ত হয়ো না এবং চিন্তা কর না,
\v 30 কারণ জগতের জাতিরা এসব জিনিস পাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়, কিন্তু তোমাদের পিতা জানেন যে, এই সমস্ত জিনিস তোমাদের প্রয়োজন আছে ।
\s5
\v 31 তোমরা বরং তার রাজ্যর বিষয়ে চিন্তিত হও, তা হলে এইসব তোমাদের দেওয়া হবে ।
\v 32 হে ছোট্ট মেষপাল, ভয় করোও না, কারণ তোমাদের সেই রাজ্য দিতে তোমাদের পিতা পরিকল্পনা করেছেন ।
\s5
\v 33 তোমাদের যা আছে, বিক্রি করে দান কর । নিজেদের জন্য এমন থলি তৈরি কর, যা কখনো পুরনো হবে না, স্বর্গে এমন ধন সঞ্চয় কর যা কখনো শেষ হবে না, যেখানে চোর আসে না,
\v 34 এবং পোকা নষ্ট করে না, কারণ যেখানে তোমাদের ধন, সেইখানে তোমাদের মনও থাকবে ।
\v 36 তোমরা এমন লোকের মতো হও, যারা তাদের প্রভুর অপেক্ষায় থাকে যে, তিনি বিয়ের ভোজ থেকে কখন ফিরে আসবেন, যেন তিনি এসে দরজায় আঘাত করলে তারা তখনই তাঁর জন্য দরজা খুলে দিতে পারে ।
\s5
\v 37 ধন্য সেই দাসেরা, যাদেরকে প্রভু এসে জেগে থাকতে দেখবেন । আমি তোমাদেরকে সত্য বলছি, তিনি কোমর বেঁধে তাদেরকে খেতে বসাবেন এবং কাছে এসে তাদের সেবা করবেন ।
\v 38 যদি মাঝ রাতে কিংবা যদি শেষ রাতে এসে তিনি তেমনই দেখেন, তবে তারা ধন্য !
\s5
\v 39 কিন্তু এটা জেনে রাখো চোর কোন মুহূর্তে আসবে, তা যদি বাড়ির মালিক জানত, তবে সে জেগে থাকত, নিজের বাড়িতে সিঁধ কাটতে দিত না ।
\v 40 তোমরাও তৈরী থাক, কারণ যে সময়ে তোমরা মনে করবে তিনি আসবেন না, সেই সময়েই মনুষ্যপুত্র আসবেন ।"
\s5
\v 41 তখন পিতর বললেন, "প্রভু, আপনি কি আমাদের, না সবাইকে এই কথা বলছেন ?"
\v 42 প্রভু বললেন, "সেই বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান গৃহকর্তা কে, যাকে তার প্রভু তাঁর অন্য দাসদের উপরে নিযুক্ত করবেন, যেন সে তাদের উপযুক্ত সময়ে খাবারের নিরুপিত অংশ দেয়?
\v 43 ধন্য সেই দাস, যাকে তার প্রভু এসে তেমন করতে দেখবেন ।
\v 44 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তিনি তাকে তাঁর সবকিছুর উপরে প্রধান পরিচালক করে নিযুক্ত করবেন ।
\s5
\v 45 কিন্তু সেই দাস যদি মনে মনে বলে, আমার প্রভুর আসতে দেরি হবে এবং সে দাস দাসীদেরকে মারধোর করে, ভোজন ও পান করতে এবং মাতাল হতে আরম্ভ করে,
\v 46 তবে সে যেদিন আশা না করবে ও যে সময়ের চিন্তা না করবে, সেই দিন সেই মুহূর্তে সেই দাসের প্রভু আসবেন এবং তাকে দু'খণ্ড করবেন এবং অবিশ্বস্তদের মধ্যে তার অংশ ভাগ করবেন ।
\s5
\v 47 আর সেই দাস, যে তার প্রভুর ইচ্ছা জেনেও তৈরি হয় নি, ও তাঁর ইচ্ছা মতো কাজ করে নি, সে অনেক শাস্তি পাবে ।
\v 48 কিন্তু যে না জেনে শাস্তির কাজ করেছে, সে অল্প শাস্তি পাবে । আর যে কোন ব্যক্তিকে বেশি দেওয়া হয়েছে, তার কাছে বেশি দাবি করা হবে এবং লোকে যার কাছে বেশি রেখেছে, তার কাছে বেশি চাইবে ।
\s5
\v 49 আমি পৃথিবীতে আগুন নিক্ষেপ করতে এসেছি, আর এখন যদি তা প্রজ্বলিত হয়ে থাকে, তবে আর কী চাই ?
\v 50 কিন্তু আমাকে এক বাপ্তিস্মে বাপ্তিস্ম নিতে হবে, আর তা যতক্ষণ সিদ্ধ না হয়, ততক্ষণ আমি কতই না হয়রান হচ্ছি ।
\s5
\v 51 তোমরা কি মনে করছ, আমি পৃথিবীতে শান্তি দিতে এসেছি ? তোমাদেরকে বলছি, তা নয়, বরং বিভেদ ।
\v 52 কারণ এখন থেকে এক বাড়িতে পাঁচ জন আলাদা হবে, তিনজন দুইজনের বিরুদ্ধে ও দুইজন তিনজনের বিরুদ্ধে,
\v 53 বাবা ছেলের বিরুদ্ধে এবং ছেলে বাবার বিরুদ্ধে, মা মেয়ের বিরুদ্ধে এবং মেয়ে মায়ের বিরুদ্ধে, শাশুড়ি বউয়ের বিরুদ্ধে এবং বউ শাশুড়ির বিরুদ্ধে যাবে ।
\s5
\v 54 আর তিনি লোকদের বললেন, তোমরা যখন পশ্চিমদিকে মেঘ উঠতে দেখ, তখন বল যে বৃষ্টি আসছে, আর তেমনই ঘটে ।
\v 55 আর যখন দক্ষিণ বাতাস বইতে দেখ, তখন বল আজ খুব গরম পড়বে এবং তাই ঘটে ।
\v 56 ভণ্ডরা, তোমরা পৃথিবীর ও আকাশের ভাব বুঝতে পার, কিন্তু এই বর্তমান সময়ের অবস্থা বুঝতে পার না, এ কেমন ?
\s5
\v 57 আর সত্য কী , তা নিজেরাই কেন বিচার কর না ?
\v 58 যখন বিপক্ষের সঙ্গে বিচারকের কাছে যাও, রাস্তায় তার সঙ্গে মীমাংসা করে নাও, না হলে যদি সে তোমাকে বিচারকের কাছে টেনে নিয়ে যায়, আর বিচারক তোমাকে সৈনোর হাতে সমর্পণ করবে এবং সৈন্য তোমাকে জেলখানায় নিয়ে যাবে ।
\v 59 আমি তোমাকে বলছি, যে পর্যন্ত না তুমি শেষ পয়সাটা শোধ করবে, সেই পর্যন্ত তুমি কোন মতেই সেখান থেকে বের হয়ে আসতে পারবে না ।"
\s5
\c 13
\ms যীশুর বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা ও কাজ ।
\s মন পরিবর্তনের বিষয়ে উপদেশ
\p
\v 1 সেই সময়ে কয়েকজন লোক যীশুকে সেই গালীলীয়দের বিষয়ে বলল, যাদের রক্ত পীলাত তাদের বলির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিলেন l
\v 2 তিনি তাদের বললেন," তোমরা কি মনে কর, সেই গালীলীয়দের এই শাস্তি হয়েছে বলে তারা অন্য সব গালীলীয়দের থেকে কি বেশি পাপী ছিল?
\v 3 আমি তোমাদের বলছি, তা নয়; আর যদি মন না ফেরাও, তবে তোমরাও তাদের মত বিনষ্ট হবে l
\s5
\v 4 সেই আঠারো জন, যাদের উপরে শীলোহের উঁচু দূর্গের চূড়া চাপা পড়ে গিয়ে মারা গিয়েছিল, তোমরা কি তাদের বিষয়ে মনে করছ যে, তারা কি জিরুশালেমের অন্য সব লোকদের থেকে বেশি পাপী ছিল?
\v 5 আমি তোমাদের বলছি, তা নয়; আর যদি মন না ফেরাও, তবে তোমরাও সেভাবে ধ্বংস হবে l"
\s5
\v 6 এরপর যীশু তাদের শিক্ষা দেবার জন্য এই দৃষ্টান্তটি (ছোট গল্প) বললেন;" কোনো এক জন লোকের আঙ্গুর ক্ষেতে একটা ডুমুর গাছ লাগানো ছিল; আর তিনি এসে সেই গাছে ফলের খোঁজ করলেন, কিন্তু পেলেন না l
\v 7 তাতে তিনি মালীকে বললেন, দেখ, আজ তিন বছর ধরে এই ডুমুর গাছে ফলের খোঁজ করছি, কিন্তু কিছুই পাচ্ছি না; এটাকে কেটে ফেল; এটা কেন জমি নষ্ট করবে l
\s5
\v 8 সে তাঁকে বলল, প্রভু, এ বছর ওটা রেখে দিন, আমি ওর চারপাশ খুঁড়ে সার দেব,
\v 9 তারপর যদি ওই গাছে ফল হয় তো ভালই, না হলে ওটা কেটে ফেলবেন l"
\v 10 কোনো এক বিশ্রামবারে যীশু কোনও একটা সমাজগৃহে শিক্ষা দিচ্ছিলেন।
\v 11 " সেখানে এক জন স্ত্রীলোক ছিল, যাকে আঠারো বছর ধরে একটা দুষ্ট-আত্মা ধরেছিল, সে কুঁজো ছিল, কোনো মতে সোজা হতে পারত না ।
\s5
\v 12 তাকে দেখে যীশু কাছে ডাকলেন, আর বললেন, হে নারী, তুমি দুষ্ট-আত্মা থেকে মুক্ত হলে ।"
\v 13 পরে তিনি তার উপরে হাত রাখলেন; তাতে সে তখনই সোজা হয়ে দাঁড়াল, আর ঈশ্বরের গৌরব করতে লাগল।
\v 14 কিন্তু বিশ্রামবারে যীশু সুস্থ করেছিলেন বলে, সমাজগৃহের নেতা রেগে গেলেন এবং সে উত্তর করে লোকদের বলল, ছয় দিন আছে, সেইসব দিনে কাজ করা উচিত; অতএব ঐ সব দিনে এসে সুস্থ হও, বিশ্রামবারে নয়।
\s5
\v 15 কিন্তু যীশু তাকে উত্তর করে বললেন," ভণ্ডরা, তোমাদের প্রত্যেক জন কি বিশ্রামবারে নিজের নিজের বলদ কিংবা গাধাকে গোয়াল থেকে খুলে নিয়ে জল খাওয়াতে নিয়ে যাও না?
\v 16 তবে এই স্ত্রীলোক, অব্রাহামের কন্যা, যাকে দুষ্ট-আত্মা, দেখ, আজ আঠারো বছর ধরে বেঁধে রেখেছিল, এর এই বন্ধন থেকে বিশ্রামবারে মুক্তি পাওয়া কী উচিত নয়?"
\s5
\v 17 তিনি এইকথা বললে, তাঁর বিরোধিরা সবাই লজ্জিত হল; কিন্তু তাঁর মাধ্যমে যে সমস্ত মহিমার কাজ হচ্ছিল, তাতে সমস্ত সাধারণ লোক আনন্দিত হল।
\v 22 আর তিনি শহরে শহরে ও গ্রামে গ্রামে ঘুরে শিক্ষা দিতে দিতে জিরুশালেমের দিকে যাচ্ছিলেন।
\v 23 তখন এক জন লোক তাঁকে বলল, প্রভু, যারা উদ্ধার পাচ্ছে, তাদের সংখ্যা কি অল্প?
\v 24 তিনি তাদেরকে বললেন, "সরু দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে প্রাণপণে চেষ্টা কর; কারণ আমি তোমাদের বলছি, অনেকে ঢুকতে চেষ্টা করবে, কিন্তু পারবে না।
\s5
\v 25 ঘরের মালিক উঠে দরজা বন্ধ করলে পর তোমরা বাইরে দাঁড়িয়ে দরজায় কড়া নাড়াতে নাড়াতে বলবে, প্রভু, আমাদের জন্য দরজা খুলে দিন; আর তিনি উত্তর করে তোমাদের বলবেন, আমি জানি না, তোমরা কোথা থেকে এসেছ;
\v 26 তখন তোমরা বলবে, আমরা আপনার সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করেছি, এবং আমাদের রাস্তায় রাস্তায় আপনি উপদেশ দিয়েছেন।
\v 27 কিন্তু তিনি বলবেন, তোমাদের বলছি, আমি জানি না, তোমরা কোথা থেকে এসেছ; হে অধর্মচারী সবাই, আমার কাছ থেকে চলে যাও।
\s5
\v 28 সেই জায়গায় কান্নাকাটি ও দাঁতে দাঁত ঘর্ষণ হবে; তখন তোমরা দেখবে, অব্রাহাম, ইসহাক ও যাকোব এবং ভাববাদী সবাই ঈশ্বরের রাজ্যে আছেন, আর তোমাদের বাইরে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।
\v 29 আর পূর্ব ও পশ্চিম থেকে এবং উত্তর ও দক্ষিণ থেকে লোকরা এসে ঈশ্বরের রাজ্যে বসবে।
\v 30 আর দেখ, যারা শেষের, এমন কোনো কোনো লোক প্রথম হবে, এবং যারা প্রথম, এমন কোনো কোনো লোক শেষে পড়বে। "
\s5
\v 31 সেই সময়ে কয়েক জন ফরীশী কাছে এসে তাঁকে বলল, "চলে যাও, এখান থেকে চলে যাও; কারণ হেরোদ তোমাকে হত্যা করতে চাইছেন।"
\v 32 তিনি তাদের বললেন, তোমরা গিয়ে শিয়ালকে বল, দেখ, আজ ও কাল আমি ভূত ছাড়াচ্ছি, ও রোগীদের সুস্থ করছি, এবং তৃতীয় দিনে আমি আমার কাজ শেষ করব।
\v 33 যাই হোক, আজ, কাল ও পরশু দিনের পর আমাকে চলে যেতে হবে; কারণ এমন হতে পারে না যে, জিরুশালেমের বাইরে আর কোথাও কোনো ভাববাদী বিনষ্ট হয়।
\s5
\v 34 জিরুশালেম, জিরুশালেম, তুমি ভাববাদীদের হত্যা করে থাক, ও তোমার কাছে যাদের পাঠানো হয়, তাদের পাথর মেরে থাক! মুরগি যেমন নিজের বাচ্চাদের তার ডানার নীচে জড়ো করে, তেমনি আমি কত বার তোমার সন্তানদের জড়ো করতে ইচ্ছা করেছি, কিন্তু তোমরা রাজি হলে না।
\v 35 দেখ, তোমাদের সেই ঘর তোমাদের জন্য বাদ হয়ে পড়ে থাকল। আর আমি তোমাদের বলছি, যত দিন না পর্যন্ত তোমরা না বলবে , “ধন্য তিনি, যিনি প্রভুর নামে আসছেন,” তত দিন পর্যন্ত তোমরা আমাকে আর দেখতে পাবে না।"
\s5
\c 14
\s ভোজনের সময় যীশুর শিক্ষা।
\p
\v 1 তিনি এক বিশ্রামবারে প্রধান ফরীশীদের এক জন অধ্যক্ষের বাড়িতে ভোজনে গেলেন, আর তারা তাঁর ওপরে নজর রাখল ।
\v 2 আর দেখ, তাঁর সামনে ছিল এক জন লোক ছিল, যে শরীরে জল জমে যাওয়া রোগে ভুগছিল ।
\v 3 যীশু ধর্মশিক্ষক ও ফরীশীদের জিজ্ঞাসা করলেন, বিশ্রামবারে সুস্থ করা উচিত কি -না? কিন্তু তারা চুপ করে থাকল ।
\s5
\v 4 তখন তিনি তাকে ধরে সুস্থ করে বিদায় দিলেন ।
\v 5 আর তিনি তাদের বললেন," তোমাদের মধ্যে কে আছে, যার সন্তান কিংবা বলদ বিশ্রামবারে কুয়োতে পড়ে গেলে সে তখনই তাকে তুলবে না?"
\v 6 তারা এই সব কথার উত্তর দিতে পারল না ।
\s5
\v 7 আর নিমন্ত্রিত লোকেরা কীভাবে প্রধাণ প্রধাণ আসন বেছে নিচ্ছে, তা দেখে যীশু তাদের একটি শিক্ষা দিলেন;
\v 8 তিনি তাদের বললেন," যখন কেউ তোমাদের বিয়ের ভোজে নিমন্ত্রণ করে, তখন সম্মানিত জায়গায় বসো না; কারণ, তোমাদের থেকে হয়তো অনেক সম্মানিত অন্য কোনো লোককে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে,
\v 9 আর যে ব্যক্তি তোমাকে ও তাকে নিমন্ত্রণ করেছে, সে এসে তোমাকে বলবে, এনাকে জায়গা দাও; আর তখন তুমি লজ্জিত হয়ে নীচু জায়গায় বসতে যাবে।
\s5
\v 10 কিন্তু তুমি যখন নিমন্ত্রিত হও তখন নীচু জায়গায় গিয়ে বসো ; তাতে যে ব্যক্তি তোমাকে নিমন্ত্রণ করেছে, সে যখন আসবে, তোমাকে বলবে, বন্ধু, সম্মানিত জায়গায় গিয়ে বসো ; তখন যারা তোমার সাথে বসে আছে, তাদের সামনে তুমি সম্মানিত হবে।
\v 11 কারণ যে- কেউ নিজেকে উঁচু করে, তাকে নীচু করা হবে, আর যে-কেউ নিজেকে নীচু করে, তাকে উঁচু করা হবে।"
\s5
\v 12 আবার যে ব্যক্তি তাকে নিমন্ত্রণ করেছিল, তাকেও তিনি বললেন," তুমি যখন দুপুরের খাবার কিংবা রাতের খাবার তৈরী কর, তখন তোমার বন্ধুদের, বা তোমার ভাইদের, বা তোমার আত্মীয়দের কিংবা ধনী প্রতিবেশিকে ডেকো না; কারণ তারাও এর বদলে তোমাকে নিমন্ত্রণ করবে, আর তুমি প্রতিদান পাবে।
\s5
\v 13 কিন্তু যখন ভোজ প্রস্তূত কর, তখন গরিব, খোঁড়া ও অন্ধদের নিমন্ত্রণ করো;
\v 14 তাতে আশীর্বাদিত হবে, কারণ তারা তোমার সেই নিমন্ত্রণের প্রতিদান দিতে পারবে না, তাই ধার্মিকদের পুনরুত্থানের সময়ে তুমি এর প্রতিদান পাবে।"
\s5
\v 15 এই সব কথা শুনে, যারা বসেছিল, তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি তাকে বলল," ধন্য সেই ব্যক্তি, যে ঈশ্বরের রাজ্যে ভোজে বসবে।"
\v 16 তিনি তাকে বললেন, "কোনো এক ব্যক্তি বড় ভোজের আয়োজন করে অনেককে নিমন্ত্রণ করলেন।
\v 17 পরে ভোজের সময়ে নিজের দাসদের দিয়ে নিমন্ত্রিতদের বলে পাঠালেন, আসুন, এখন সবই প্রস্তুত হয়েছে।
\s5
\v 18 তখন তারা সবাই একমত হয়ে ক্ষমা চাইতে লাগল। প্রথম জন তাকে বলল, আমি একটা জমি কিনেছি, তা দেখতে যেতে হবে; দয়া করে, আমাকে ক্ষমা কর।
\v 19 আর এক জন বলল, আমি পাঁচ জোড়া বলদ কিনেছি, তাদের পরীক্ষা করতে যাচ্ছি; দয়া করে, আমাকে ক্ষমা কর।
\v 20 আর এক জন বলল, আমি বিয়ে করেছি, এই জন্য যেতে পারছি না।
\s5
\v 21 পরে সেই দাস এসে তার প্রভুকে এইসব কথা জানাল। তখন সেই বাড়ির মালিক রেগে গিয়ে নিজের দাসকে বললেন, এখনই বাইরে গিয়ে শহরের রাস্তায় রাস্তায় ও গলিতে গলিতে যাও, গরিব, খোঁড়া ও অন্ধদের এখানে আন।
\v 22 পরে সেই দাস বলল, প্রভু, আপনার আদেশ মতো তা করা হয়েছে, আর এখনও জায়গা আছে।
\s5
\v 23 তখন প্রভু দাসকে বললেন, বাইরে গিয়ে বড় রাস্তায় রাস্তায় ও পথে পথে যাও, এবং আসবার জন্য লোকদেরকে মিনতি কর, যেন আমার বাড়ি ভরে যায়।
\v 24 কারণ আমি তোমাদের বলছি, ঐ নিমন্ত্রিত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনও আমার এই ভোজের স্বাদ পাবে না।"
\s5
\v 25 একবার প্রচুর লোক যীশুর সঙ্গে যাচ্ছিল; তখন তিনি মুখ ফিরিয়ে তাদের বললেন,
\v 26 "যদি কেউ আমার কাছে আসে, আর নিজের বাবা, মা, স্ত্রী, সন্তান, ভাই ও বোনদের এমন কি, নিজ প্রাণকেও প্রিয় বলে মনে করে, তবে সে আমার শিষ্য হতে পারে না।
\v 27 যে কেউ নিজের ক্রুশ বয়ে নিয়ে আমার পিছনে না আসে, সে আমার শিষ্য হতে পারে না।
\s5
\v 28 তোমাদের মধ্যে যদি কারোর উঁচু ঘর তৈরি করতে ইচ্ছা হয়, সে আগে বসে খরচের হিসাব কি করে দেখবে না, শেষ করবার টাকা তার আছে কি না?
\v 29 কারণ ভিত গাঁথবার পর যদি সে শেষ করতে না পারে, তবে যত লোক তা দেখবে, সবাই তাকে ঠাট্টা করতে শুরু করবে, বলবে,
\v 30 এ ব্যক্তি তৈরি করতে শুরু করেছিল, কিন্তু শেষ করতে পারল না।
\s5
\v 31 অথবা কোনো রাজা অন্য রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধে করতে যাবার আগে বসে কি বিবেচনা করবেন না, যে কুড়ি হাজার সেনা নিয়ে যুদ্ধ করতে আসছে তার বিরুদ্ধে কি দশ হাজার সেনা নিয়ে তার সামনে যেতে পারি?
\v 32 যদি না পারেন, তবে শত্রু দূরে থাকতেই তিনি দূত পাঠিয়ে তিনি তার সাথে সন্ধির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করবেন।
\v 33 ভালো, সেইভাবে তোমাদের মধ্যে যে কেউ নিজের সব কিছু ত্যাগ না করে, সে আমার শিষ্য হতে পারে না।
\s5
\v 34 লবন তো ভালো; কিন্তু সেই লবনেরও যদি স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়, তবে তা আবার কী করে নোনতা করা যাবে?
\v 35 তা না মাটির, না সারের ঢিবির উপযুক্ত; লোকে তা বাইরে ফেলে দেয়। যার শুনবার কান আছে সে শুনুক।"
\s5
\c 15
\s হারান মেষ, হারান সিকি ও হারান পুত্র, এই তিনটি কাহিনি।
\p
\v 1 আর কর আদায়কারী ও খারাপ লোকেরা সবাই যীশুর কথা শোনার জন্য তাঁর কাছে আসছিল।
\v 2 তাতে ফরীশী ও ধর্মশিক্ষকেরা অভিযোগ করে বলতে লাগল," এ ব্যক্তি পাপীদের গ্রহণ করে, ও তাদের সাথে খাওয়া-দাওয়া ও মেলামেশা করে।"
\s5
\v 3 তখন তিনি তাদের এই কাহিনি বললেন।
\v 4 " তোমাদের মধ্যে কোনো এক ব্যক্তি যার একশো মেষ আছে, ও তার মধ্যে থেকে একটী হারিয়ে যায়, তবে সে নিরানব্বইটা মাঠে ছেড়ে দিয়ে সেই একটাকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত কি তার খোঁজ করতে যায় না?
\v 5 আর সেটিকে খুঁজে পেলে সে খুশী হয়ে তাকে কাঁধে তুলে নেয়।
\s5
\v 6 পরে ঘরে এসে বন্ধু বান্ধব ও প্রতিবেশীদের ডেকে বলে, আমার সঙ্গে আনন্দ কর, কারণ আমার যে মেষটি হারিয়ে গিয়েছিল, তা আমি খুঁজে পেয়েছি।
\v 7 আমি তোমাদেরকে বলছি, ঠিক সেইভাবে এক জন পাপী মন ফেরালে স্বর্গে আনন্দ হবে; যারা পাপ থেকে মন ফেরান দরকার বলে মনে করে না, এমন নিরানব্বই জন ধার্মিকের জন্য তত আনন্দ হবে না।
\s5
\v 8 অথবা কোনো এক স্ত্রীলোক, যার দশটি সিকি আছে, সে যদি একটি হারিয়ে ফেলে, তবে প্রদীপ জ্বালিয়ে ঘর ঝাঁট দিয়ে যে পর্যন্ত তা না পায়, ভালো করে খুঁজে দেখে না?
\v 9 আর সেটি খুঁজে পেলে পর সে বন্ধু বান্ধব ও প্রতিবেশীদের ডেকে বলে, আমার সঙ্গে আনন্দ কর, কারণ আমি যে সিকিটি হারিয়ে ফেলেছিলাম, তা খুঁজে পেয়েছি।
\v 10 ঠিক সেইভাবে, আমি তোমাদের বলছি, এক জন পাপী মন ফেরালে ঈশ্বরের দূতগনের উপস্থিতিতে আনন্দ হয়।"
\s5
\v 11 আর তিনি বললেন," এক ব্যক্তির দুটি ছেলে ছিল;
\v 12 ছোটো ছেলেটি তার বাবাকে বলল, বাবা, সম্পত্তির যে অংশ আমার ভাগে পড়ে, তা আমাকে দিয়ে দাও। তাতে তিনি তাদের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ করে দিলেন।
\s5
\v 13 কিছু দিন পরে ছোটো ছেলেটি সব কিছু নিয়ে দূর দেশে চলে গেল, আর সেখানে সে বেনিয়মে জীবন কাটিয়ে নিজের সব টাকা-পয়সা উড়িয়ে দিল।
\v 14 সে সব কিছু খরচ করে ফেললে পর সেই দেশে ভীষণ দূর্ভিক্ষ হল, তাতে সে কষ্টে পড়তে লাগল।
\s5
\v 15 তখন সেই দেশের এক জন লোকের বাড়িতে সে আশ্রয় নিল; আর সে তাকে শূকর চরানোর জন্য নিজের জমিতে পাঠিয়ে দিল;
\v 16 তখন, শূকরে যে শুঁটি খেত, সেই শুঁটি আনন্দের সঙ্গে খেয়ে সে পেট ভরাতো, কারণ কেউই তাকে খাবার দিত না।
\s5
\v 17 কিন্তু সে নিজের ভুল বুঝতে পেরে বলল, আমার বাবার কত চাকরেরা অনেক অনেক খাবার পাচ্ছে, কিন্তু আমি এখানে খিদেতে মরে যাচ্ছি।
\v 18 আমি উঠে আমার বাবার কাছে গিয়ে বলব, বাবা, আমি তোমার ও স্বর্গের বিরুদ্ধে পাপ করেছি;
\v 19 আমি আর তোমার ছেলে নামের যোগ্য নই; তোমার এক জন চাকরের মত আমাকে রাখ।
\s5
\v 20 পরে সে উঠে তার বাবার কাছে আসল। সে দূরে থাকতেই তাকে দেখেই তার বাবার খুব মায়া হল, আর দৌড়িয়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিতে থাকলেন।
\v 21 তখন ছেলেটি বলল, বাবা, আমি তোমার ও স্বর্গের বিরুদ্ধে পাপ করেছি, আমি আর তোমার ছেলে নামের যোগ্য নই।
\s5
\v 22 কিন্তু তার বাবা নিজের চাকরদেরকে বললেন, তাড়াতাড়ি করে সবচেয়ে ভাল জামাটি নিয়ে এস, আর একে পরিয়ে দাও, এবং এর হাতে আংটি ও পায়ে জুতো দাও;
\v 23 আর মোটাসোটা বাছুরটি এনে মার; আমরা খাওয়া-দাওয়া করে আনন্দ করি;
\v 24 কারণ আমার এই ছেলেটি মারা গিয়েছিল, কিন্তু এখন বাঁচলো; সে হারিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু এখন পাওয়া গেল। তাতে তারা আমোদ প্রমোদ করতে লাগল।
\s5
\v 25 তখন তাঁর বড় ছেলেটি মাঠে ছিল; পরে সে আসতে আসতে যখন বাড়ির কাছে পৌঁছালো, তখন বাজনা ও নাচের শব্দ শুনতে পেল।
\v 26 আর সে এক জন চাকরকে কাছে ডেকে জিজ্ঞাসা করল, এ সব কী ?
\v 27 সে তাকে বলল, তোমার ভাই এসেছে, এবং তোমার বাবা মোটাসোটা বাছুরটি মেরেছেন, কারণ তিনি তাকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেয়েছেন।
\s5
\v 28 তাতে সে রেগে গেল, ভিতরে যেতে চাইল না; তখন তার বাবা বাইরে এসে সাধাসাধি করতে লাগলেন।
\v 29 কিন্তু সে তার বাবাকে বলল, দেখ, এত বছর ধরে আমি তোমার সেবা-যত্ন করে আসছি, কখনও তোমার আদেশ অমান্য করি নি, তবুও আমার বন্ধুদের সাথে আমোদ-প্রমোদ করবার জন্য তুমি কখনও একটি ছাগলের বাচ্চাও দাও নি;
\v 30 কিন্তু তোমার এই ছেলে যে, বেশ্যাদের সঙ্গে তোমার টাকা-পয়সা নষ্ট করেছে, সে যখন আসল, তারই জন্য মোটাসোটা বাছুরটি মারলে।
\s5
\v 31 তিনি তাকে বললেন, বাবা, তুমি সবসময় আমার সঙ্গে আছ, আর যা কিছু আমার, সব-ই তোমার।
\v 32 কিন্তু আমাদের আমোদ-প্রমোদ ও আনন্দ করা উচিত, কারণ তোমার এই ভাই মারা গিয়েছিল, এখন বাঁচলো; হারিয়ে গিয়েছিল, এখন পাওয়া গেল।"
\s5
\c 16
\s টাকা-পয়সার বিষয়ে যীশুর উপদেশ।
\p
\v 1 আর তিনি শিষ্যদের ও বললেন," এক জন ধনী লোক ছিল, তার এক প্রধান কর্মচারী ছিল; সে মনিবের টাকা-পয়সা নষ্ট করত বলে তার কাছে অপমানিত হল।
\v 2 পরে সে তাকে ডেকে বলল, তোমার সম্পর্কে এ-কি কথা শুনছি? তোমার কাজের হিসাব দাও, কারণ তুমি আর প্রধান কর্মচারী থাকতে পারবে না।
\s5
\v 3 তখন সেই প্রধান কর্মচারী মনে মনে বলল, কী করব? আমার মনিব তো আমাকে প্রধান কর্মচারী-পদ থেকে ছাড়িয়ে দিচ্ছেন; মাটি কাটবার শক্তি আমার নেই, ভিক্ষা করতে আমার লজ্জা করে।
\v 4 আমার প্রধান কর্মচারী-পদ গেলে লোকে যেন আমাকে তাদের বাড়িতে থাকতে দেয়, এজন্য আমি কী করব, তা জানি।
\s5
\v 5 পরে সে নিজের মনিবের প্রত্যেক ঋণীকে ডেকে প্রথম জন কে বলল, আমার মনিবের কাছে তোমার ধার কত?
\v 6 সে বলল, একশো লিটার অলিভ তেল। তখন সে তাকে বলল, তোমার হিসাবের কাগজটি নাও, এবং তাড়াতাড়ি তাতে পঞ্চাশ লেখ।
\v 7 পরে সে আর এক জনকে বলল, তোমার ধার কত? সে বলল, একশো মণ গম। তখন সে বলল, তোমার কাগজ নিয়ে আশি লেখ।
\s5
\v 8 তাতে সেই মনিব সেই অসৎ প্রধান কর্মচারীর প্রশংসা করল, কারণ সে বুদ্ধিমানের কাজ করেছিল। এই জগতের লোকেরা নিজের জাতির সম্বন্ধে আলোর লোকদের থেকে বেশি বুদ্ধিমান।
\v 9 আর আমিই তোমাদের বলছি, নিজেদের জন্যে অধার্মিকতার টাকা-পয়সা দিয়ে লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব কর, যেন ওটা শেষ হলে তারা তোমাদের সেই চিরকালের থাকবার জায়গায় গ্রহণ করে।
\s5
\v 10 যে অল্প বিষয়ে বিশ্বস্ত, সে অনেক বিষয়েও বিশ্বস্ত; আর যে অল্প বিষয়েও অবিশ্বস্ত, সে অনেক বিষয়ে অবিশ্বস্ত।
\v 11 অতএব তোমরা যদি জগতের ধনে বিশ্বস্ত না হয়ে থাক, তবে কে বিশ্বাস করে তোমাদের কাছে সত্য ধন রাখবে?
\v 12 আর যদি পরের বিষয়ে বিশ্বস্ত না হয়ে থাক, তবে কে তোমাদের নিজের বিষয় তোমাদের দেবে?
\s5
\v 13 কোন চাকর দুই মনিবের দাসত্ব করতে পারে না, কারণ সে হয় এক জনকে ঘৃণা করবে, অন্য জনকে ভালোবাসবে, নয় তো এক জনের প্রতি মনোযোগ দেবে, অন্য জনকে তুচ্ছ করবে। তোমরা ঈশ্বর এবং ধন দুইয়ের দাসত্ব করতে পার না।"
\s5
\v 14 তখন ফরীশীরা, যারা টাকা ভালোবাসতেন, এ সব কথা শুনছিল, আর তারা তাঁকে ঠাট্টা করতে লাগল।
\v 15 তিনি তাহাদের বললেন," তোমরাই তো মানুষের সামনে নিজেদের ধার্মিক দেখিয়ে থাক, কিন্তু ঈশ্বর তোমাদের মনের অবস্থা জানেন; কারণ মানুষের কাছে যা সম্মানিত, তা ঈশ্বরের চোখে ঘৃণার যোগ্য।
\s5
\v 16 বাপ্তিস্মদাতা যোহনের সময় পর্যন্ত মোশির আইনকানুন ও ভাববাদীদের লেখা চলত; সেই সময় থেকে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার হচ্ছে, এবং প্রত্যেক জন আগ্রহী হয়ে জোরের সঙ্গে সেই রাজ্যে প্রবেশ করছে।
\v 17 কিন্তু আইনকানুনের এক বিন্দু বাদ পড়ার চেয়ে বরং আকাশের ও পৃথিবীর লোপ হয়ে যাওয়া সহজ।
\s5
\v 18 যে কেউ নিজের স্ত্রীকে ছেড়ে দিয়ে আর এক জনকে বিবাহ করে, সে ব্যাভিচার করে; এবং যে কেউ স্বামী যাকে ছেড়ে দিয়েছে সেই স্ত্রীকে বিবাহ করে, সে ব্যাভিচার করে।
\s5
\v 19 এক জন ধনবান লোক ছিল, সে বেগুনী রঙের কাপড় ও দামী দামী কাপড় পরতো, এবং প্রতিদিন জাঁকজমকের সাথে আমোদ-প্রমোদ করত।
\v 20 তার দরজার সামনে লাসার নামে এক জন ভিখারীকে রাখা হয়েছিল, তার সারা শরীর ঘায়ে ভরা ছিল,
\p
\v 21 এবং সেই ধনবানের টেবিল থেকে যে গুঁড়াগাঁড়া পড়ত তাই খেয়ে সে পেট ভরাতে চাইত; আবার কুকুরেরাও এসে তার ঘা চেটে দিত।
\s5
\v 22 একদিন ঐ কাঙাল মারা গেল, আর স্বর্গদূতরা এসে তাকে নিয়ে গিয়ে অব্রাহামের কোলে বসালেন,। পরে সেই ধনবানও মারা গেল, এবং তাকে কবর দেওয়া হল।
\v 23 আর পাতালে, যন্ত্রণার মধ্যে, সে চোখ তুলে দূর থেকে অব্রাহামকে ও তার কোলে লাসারকে দেখতে পেল।
\s5
\v 24 তাতে সে চিৎকার করে বলল, পিতা অব্রাহাম, আমাকে দয়া করুন, লাসারকে পাঠিয়ে দিন, যেন সে আঙুলের আগা জলে ডুবিয়ে আমার জিভ ঠান্ডা করে, কারণ এই আগুনে আমি কষ্ট পাচ্ছি।
\s5
\v 25 কিন্তু অব্রাহাম বললেন, মনে কর; তুমি যখন বেঁচেছিলে তখন কত সুখ ভোগ করেছ, আর লাসার কত দুঃখ ভোগ করেছে; এখন সে এখানে সান্ত্বনা পাচ্ছে, আর তুমি কষ্ট পাচ্ছ।
\v 26 আর এছাড়া আমাদের ও তোমাদের মধ্যে এক বিরাট ফাঁক রয়েছে, যেন এখান থেকে তোমাদের কাছে কেউ যেতে না পারে, আবার ওখান থেকে আমাদের কাছে কেউ পার হয়ে আসতে না পারে।"
\s5
\v 27 তখন সে বলল," তবে আমি আপনাকে অনুরোধ করি, পিতা আমার বাবার বাড়িতে ওকে পাঠিয়ে দিন;
\v 28 কারণ আমার পাঁচ ভাই আছে; সে গিয়ে তাদের কাছে সাক্ষ্য দিক, যেন তারাও এই যন্ত্রণার জায়গায় না আসে।
\s5
\v 29 কিন্তু অব্রাহাম বললেন, তাদের কাছে মোশি ও ভাববাদীরা আছেন; তাদেরই কথা তারা শুনুক।"
\v 30 তখন সে বলল," তা নয়, পিতা অব্রাহাম, বরং মৃতদের মধ্যে থেকে যদি কেউ তাদের কাছে যায়, তা হলে তারা মন ফেরাবে "।
\v 31 কিন্তু তিনি বললেন," তারা যদি মোশির ও ভাববাদীদের কথা না শোনে, তবে মৃতদের মধ্যে থেকে কেহ উঠলেও তারা মানবে না। "
\s5
\c 17
\s ক্ষমা ও অন্যান্য বিষয়ে উপদেশ।
\p
\v 1 যীশু তার শিষ্যদের আরও বললেন,"পাপের প্রলোভন আসবে না, এমন হতে পারে না; কিন্তু ধিক তাকে, যার মাধ্যমে তা আসে!
\v 2 এই ছোটদের মধ্যে এক জনকে যদি কেউ পাপের পথে নিয়ে যায়, তবে তার গলায় ভারী পাথর বেঁধে তাকে সমুদ্রে ফেলে দেওয়া বরং তার পক্ষে ভালো ।
\s5
\v 3 তোমরা নিজেদের বিষয়ে সাবধান থাক। তোমার ভাই যদি পাপ করে, তাকে বকুনি দাও; আর সে যদি সেই অন্যায় থেকে মন ফেরায় তবে তাকে ক্ষমা কর।
\v 4 আর যদি সে এক দিনের মধ্যে সাত বার তোমার বিরুদ্ধে অন্যায় করে, আর সাত বার তোমার কাছে ফিরে এসে বলে, আমি এই অন্যায় থেকে মন ফেরালাম, তবে তাকে ক্ষমা কর।"
\s5
\v 5 আর প্রেরিতেরা প্রভুকে বললেন, "আমাদের বিশ্বাস বাড়িয়ে দিন।"
\v 6 প্রভু বললেন, "একটি সরষে দানার মত বিশ্বাস যদি তোমাদের থাকে, তবে, ‘তুমি শিকড়শুদ্ধ উঠে গিয়ে নিজে সমুদ্রে পুঁতে যাও’ একথা তুঁত গাছটিকে বললে ও তোমাদের কথা মানবে।
\s5
\v 7 আর তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যার দাস হাল বয়ে কিংবা ভেড়া চরিয়ে মাঠ থেকে এলে সে তাকে বলবে, ‘তুমি এখনই এসে খেতে বসো ?
\v 8 বরং তাকে কি বলবে না, ‘আমি কী খাব, তার আয়োজন কর, এবং আমি যতক্ষণ খাওয়া-দাওয়া করি, ততক্ষণ কোমর বেঁধে আমার সেবা-যত্ন কর, তার পর তুমি খাওয়া-দাওয়া করবে’?
\s5
\v 9 সেই দাস আদেশ পালন করল বলে সে কি তার ধন্যবাদ করে?
\v 10 সেইভাবে সব আদেশ পালন করলে পর তোমারও বোলো আমারা অযোগ্য দাস, যা করতে বাধ্য ছিলাম, তাই করলাম। "
\v 9 যারা নিজেদের উপরে বিশ্বাস রাখত, মনে করত যে, তারাই ধার্মিক, এবং অন্য সবাইকে তুচ্ছ করত, এমন কয়েকজনকে তিনি এই কাহিনি বললেন।
\v 10 দুই ব্যক্তি প্রার্থনা করার জন্য ধর্মগৃহে গেল; এক জন ফরীশী, আর এক জন কর আদায়কারী।
\s5
\v 11 ফরীশী দাঁড়িয়ে নিজের বিষয়ে এই প্রার্থনা করল, হে ঈশ্বর, আমি তোমার ধন্যবাদ করি যে, আমি অন্য সব লোকের মতো ঠগ, অসৎ ও ব্যাভিচারীদের মতো কিংবা ঐ কর আদায়কারীর মতো নই;
\v 12 আমি সপ্তাহের মধ্যে দুবার উপবাস করি, সমস্ত আয়ের দশমাংশ দান করি।
\s5
\v 13 কিন্তু কর আদায়কারী দূরে দাঁড়িয়ে স্বর্গের দিকে চোখ তুলতেও সাহস পেল না, বরং সে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে বলল, হে ঈশ্বর, আমার প্রতি, এই পাপীর প্রতি দয়া কর।
\v 14 আমি তোমাদের বলছি, এই ব্যক্তি ধার্মিক বলে গণ্য হয়ে নিজ বাড়িতে চলে গেল, ঐ ব্যক্তি ধার্মিক নয়; কারণ যেকেউ নিজেকে উঁচু করে, তাকে নীচু করা যাবে; কিন্তু যে নিজেকে নীচু করে, তাকে উঁচু করা যাবে।
\v 18 এক জন অধ্যক্ষ তাঁকে জিজ্ঞাসা করল," হে সদগুরু, কী করলে আমি অনন্ত জীবনের অধিকারী হব?"
\v 19 যীশু তাকে বললেন," আমাকে সৎ কেন বলছ? এক জন ছাড়া সৎ আর কেউ নেই, তিনি ঈশ্বর।
\v 20 তুমি শাস্ত্রের আদেশ সকল জান, “ব্যভিচার কর না, নরহত্যা কর না, চুরি কর না, মিথ্যা কথা বল না, তোমার পিতামাতা কে সম্মান কর।”
\v 21 সে বলল, ছোট থেকে এইসব পালন করে আসছি।"
\s5
\v 22 এ কথা শুনে যীশু তাকে বললেন, "এখনও একটি বিষয়ে তোমার ভুল আছে; তোমার যা কিছু আছে, সব বিক্রি কর, আর দরিদ্রদের বিতরণ কর, তাতে স্বর্গে ধন পাবে; আর এসো, আমার অনুসরণ কর।"
\v 23 কিন্তু একথা শুনে সে খুব দুঃখিত হল, কারণ সে খুব ধনবান ছিল।
\s5
\v 24 তখন তার দিকে চেয়ে যীশু বললেন," যাদের ধন আছে, তাদের পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা কত কঠিন!
\v 25 ঈশ্বরের রাজ্যে ধনবানের প্রবেশ করার থেকে বরং সুঁচের ছিদ্র দিয়ে উটের প্রবেশ করা সহজ।"
\s5
\v 26 যারা শুনল, তারা বলল, "তবে কার পরিত্রান হতে পারে?"
\v 27 তিনি বললেন, "যা মানুষের কাছে অসাধ্য তা ঈশ্বরের পক্ষে সাধ্য।"
\s5
\v 28 তখন পিতর বললেন," দেখুন, আমারা যা যা নিজের, সে সব ছেড়ে দিয়ে আপনার অনুগামী হয়েছি।"
\v 29 তিনি তাদের বললেন, "আমি তোমাদের সত্য বলছি, এমন কেউ নেই, যে ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য বাড়ি কি স্ত্রী কি ভাইদের কি বাবা-মা কি ছেলেমেয়েদের ত্যাগ করলে,
\v 30 এইকালে তার বহুগুণ এবং আগামী যুগে অনন্ত জীবন পাবে না ।"
\v 35 আর যখন তিনি যিরীহোর কাছে আসলেন, এক জন অন্ধ পথের পাশে বসে ভিক্ষা করছিল;
\v 36 সে লোকদের যাওয়ার শব্দ শুনে জিজ্ঞাসা করল, এর কারণ কী ?
\v 37 লোকে তাকে বলল, নাসরতীয় যীশু সেখান দিয়ে যাচ্ছেন।
\s5
\v 38 তখন সে চিৎকার করে বলল, হে যীশু, দায়ুদ-সন্তান, আমার প্রতি দয়া করুন।
\v 39 যারা আগে আগে যাচ্ছিল, তারা চুপ চুপ বলে তাকে ধমক দিল, কিন্তু সে আরও অধিক চেঁচিয়ে বলতে লাগল, হে দায়ুদ-সন্তান, আমার প্রতি দয়া করুন।
\s5
\v 40 তখন যীশু থেমে গিয়ে তাকে তাঁর কাছে আনতে আদেশ করলেন; পরে সে কাছে আসলে তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কী চাও?
\v 41 আমি তোমার জন্য কী করব? সে বলল, প্রভু, যেন দেখতে পাই।
\s5
\v 42 যীশু তাকে বললেন, দেখ; তোমার বিশ্বাস তোমাকে সুস্থ করল।
\v 43 তাতে সে তক্ষুনি দেখতে পেল, এবং ঈশ্বরের গৌরব করতে করতে তাঁর পিছন পিছন চলল। তা দেখে সব লোক ঈশ্বরের স্তব করল।
\s5
\c 19
\s সক্কেয়ের মন পরিবর্তন।
\p
\v 1 পরে তিনি যিরীহোতে প্রবেশ করে শহরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন।
\v 2 আর দেখ, সক্কেয় নামে এক ব্যক্তি; সে এক জন প্রধান কর আদায়কারী, এবং সে ধনবান ছিল।
\s5
\v 3 আর কে যীশু, সে দেখতে চেষ্টা করছিল, কিন্তু ভিড় থাকাতে দেখতে পারল না, কারণ সে বেঁটে ছিল।
\v 4 তাই সে আগে দৌড়িয়ে গিয়ে তাঁকে দেখবার জন্য একটি সুকমোর গাছে উঠল, কারণ তিনি সেই পথে যাচ্ছিলেন।
\s5
\v 5 পরে যীশু যখন সেই জায়গায় আসলেন, তখন উপরের দিকে চেয়ে তাকে বললেন, সক্কেয়, শীঘ্র নেমে এসো, কারণ আজ তোমার ঘরে আমাকে থাকতে হবে।
\v 6 তাতে সে শীঘ্র নেমে আসল, এবং আনন্দের সাথে তাঁর আতিথ্য করল।
\v 7 তা দেখে সবাই বচসা করে বলতে লাগল, ইনি এক জন পাপীর ঘরে রাত্রি-যাপন করতে গেলেন।
\s5
\v 8 তখন সক্কেয় দাঁড়িয়ে প্রভুকে বলল, প্রভু, দেখুন, আমার সম্পত্তির অর্ধেক আমি গরিবদের দান করি; আর যদি অন্যায় করে কারোর কিছু জিনিস নিয়ে থাকি, তার চারগুণ ফিরিয়ে দেব।
\v 9 তখন যীশু তাকে বললেন, আজ এই ঘরে পরিত্রান এলো; যেহেতু এ ব্যক্তিও অব্রাহামের সন্তান।
\v 10 কারণ যা হারিয়ে গিয়েছিল, তার খোঁজ ও পরিত্রান করতে মানবপুত্র এসেছেন।
\v 11 যখন তারা এইসব কথা শুনছিল, তখন তিনি একটি কাহিনিও বললেন, কারণ তিনি জিরুশালেমের কাছে এসেছিলেন; আর তারা অনুমান করছিল যে, ঈশ্বরের রাজ্যের প্রকাশ তখনই হবে।
\v 12 অতএব তিনি বললেন, ভদ্রবংশীয় এক ব্যক্তি রাজপদ ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন বলে দুরদেশে গেলেন।
\s5
\v 13 আর তিনি নিজের দশ জন চাকরকে ডেকে দশটি মুদ্রা দিয়ে বললেন, আমি যে পর্যন্ত না আসি, এ দিয়ে ব্যবসা কর।
\v 14 কিন্তু তাঁর প্রজারা তাকে ঘৃণা করত, তারা তাঁর পিছনে লোক পাঠিয়ে দিল, বলল, আমাদের ইচ্ছা নয় যে, এ ব্যক্তি আমাদের উপরে রাজত্ব করে।
\v 15 পরে তিনি রাজপদ প্রাপ্ত হয়ে যখন ফিরে আসলেন, তখন, যাদেরকে টাকা দিয়েছিলেন, সেই দাসদেরকে তাঁর কাছে ডেকে আনতে বললেন, যেন তিনি জানতে পারেন, তারা ব্যবসায়ে কে কত লাভ করেছে।
\s5
\v 16 তখন প্রথম ব্যক্তি কাছে এসে বলল, প্রভু, আপনার মুদ্রা থেকে আর দশ মুদ্রা হয়েছে।
\v 17 তিনি তাকে বললেন, ধন্য! উত্তম দাস, তুমি অতি অল্প বিষয়ে বিশ্বস্ত হলে; এজন্য দশটা শহরের উপরে কর্তৃত্ব কর।
\s5
\v 18 দ্বিতীয় ব্যক্তি এসে বলল, প্রভু, আপনার মুদ্রা থেকে আর পাঁচ মুদ্রা হয়েছে।
\v 19 তিনি তাকেও বললেন, তুমিও পাঁচ শহরের কর্তা হও।
\s5
\v 20 পরে আর এক জন এসে বলল, প্রভু, দেখুন, এই আপনার মুদ্রা; আমি এটা রুমালে বেঁধে রেখেছিলাম;
\v 21 কারণ আমি আপনার সম্বন্ধে ভীত ছিলাম, কারণ আপনি কঠিন লোক, যা রাখেননি, তা তুলে নেন, এবং যা বোনেননি, তা কাটেন।
\s5
\v 22 তিনি তাকে বললেন, দুষ্ট দাস, আমি তোমার মুখের প্রমাণে তোমার বিচার করব। তুমি না জানতে, আমি কঠিন লোক, যা রাখিনা তাই তুলে নিই, এবং যা বুনিনা তাই কাটি?
\v 23 তবে আমার টাকা পোদ্দারদের কাছে কেন রাখনি? তা করলে আমি এসে সুদের সাথে তা আদায় করতাম।
\s5
\v 24 আর যারা কাছে দাঁড়িয়েছিল, তিনি তাদের বললেন, এর কাছ থেকে ঐ মুদ্রা নাও, এবং যার দশ মুদ্রা আছে, তাকে দাও।
\v 25 তারা তাঁকে বলল, প্রভু, ওর যে দশটি মুদ্রা আছে।-
\s5
\v 26 আমি তোমাদের বলছি, যার আছে, তাকে দেওয়া যাবে; কিন্তু যার নেই, তার যা আছে, তাও তার কাছ থেকে নেওয়া যাবে।
\v 27 কিন্তু আমার এই যে শত্রুরা যারা চাইনি যে, আমি তাদের উপরে রাজত্ব করি, তাদের এখানে আন, আর আমার সামনে হত্যা কর।
\v 28 এই সব কথা বলে তিনি তাদের আগে আগে চললেন, জেরুশালেমের দিকে উঠতে লাগলেন।
\s5
\v 29 পরে যখন জৈতুন নামক পর্বতের পাশে বৈৎফগী ও বৈথনিয়ার কাছে আসলেন, তখন তিনি দুই জন শিষ্যকে পাঠিয়ে দিলেন, বললেন,
\v 30 ঐ সামনের গ্রামে যাও, সেখানে প্রবেশ করামাত্র একটি গাধার বাচ্চাকে বাঁধা দেখতে পাবে, যাতে কোন মানুষ কখনও বসেনি; সেটি খুলে আন।
\v 31 আর যদি কেউ তোমাদের জিজ্ঞাসা করে, এটি কেন খুলছো? তবে এইভাবে বলবে, এতে প্রভুর প্রয়োজন আছে।
\s5
\v 32 তখন যাদের পাঠানো হল, তারা গিয়ে, তিনি যেমন বলেছিলেন, সেইরকমই দেখতে পেলেন।
\v 33 যখন তারা গাধার বাচ্চাটিকে খুলছিলেন, তখন মালিকেরা তাদেরকে বলল, গাধার বাচ্চাটিকে খুলছো কেন?
\v 34 তারা বললেন, এতে প্রভুর প্রয়োজন আছে।
\v 35 পরে তারা সেটিকে যীশুর কাছে নিয়ে আসলেন, এবং তার পিঠে নিজেদের কাপড় পেতে তার উপরে যীশুকে বসালেন।
\v 36 পরে যখন তিনি যেতে লাগলেন, লোকেরা নিজের নিজের কাপড় রাস্তায় পেতে দিতে লাগল।
\s5
\v 37 আর তিনি জৈতুন পর্বত থেকে নামবার কাছাকাছি জায়গায় এসেছেন, এমন সময়ে, সেই শিষ্যেরা যে-সব পরাক্রম-কাজ দেখেছিল, সেই সবের জন্য আনন্দের সাথে চিৎকার করে ঈশ্বরের প্রশংসা করে বলতে লাগল,
\v 38 “ধন্য সেই রাজা, যিনি প্রভুর নামে আসছেন; স্বর্গে শান্তি এবং উর্দ্ধলোকে মহিমা।”
\s5
\v 39 তখন লোকদের মধ্যে থেকে কয়েক জন ফরীশী তাঁকে বলল, গুরু, আপনার শিষ্যদের ধমক দিন।
\v 40 তিনি উত্তর করলেন, আমি তোমাদের বলছি, এরা যদি চুপ করে থাকে, পাথর সব চেঁচিয়ে উঠবে।
\s5
\v 41 পরে যখন তিনি কাছে আসলেন, তখন শহরটি দেখে তার জন্য ক্রন্দন করলেন,
\v 42 বললেন, তুমি, তুমিই যদি আজকের দিনে, যা যা শান্তিজনক, তা বুঝতে! কিন্তু এখন সেসব তোমার দৃষ্টি থেকে গোপন থাকল।
\s5
\v 43 কারণ তোমার উপরে এমন সময় আসবে, যে-সময়ে তোমার শত্রুরা তোমার চারদিকে দেয়াল বাঁধবে, তোমাকে ঘিরে রাখবে, তোমাকে সবদিকে অবরোধ করবে,
\v 44 এবং তোমাকে ও তোমার মধ্যবর্তী তোমার লোকদের ভূমিসাৎ করবে, তোমার মধ্যে পাথরের উপরে পাথর থাকতে দেবে না; কারণ তোমার ঈশ্বরের আগমনের সময় তুমি বোঝো নি।
\s5
\v 45 পরে তিনি ধর্মগৃহে প্রবেশ করলেন, এবং বিক্রেতাদের বাইরে বের করে দিতে শুরু করলেন,
\v 46 তাহাদের বললেন, লেখা আছে, “আমার গৃহ প্রার্থনা-গৃহ হবে,” কিন্তু তোমরা এটা “ডাকাতদের আড্ডাখানা” করে তুলেছ।
\s5
\v 47 আর তিনি প্রতিদিন ধর্মগৃহে উপদেশ দিতেন। আর প্রধান যাজকেরা ও অধ্যাপকরা এবং লোকদের প্রধানেরাও তাঁকে মেরে ফেলার চেষ্টা করতে লাগল;
\v 48 কিন্তু কীভাবে তা করবে তার কোনো উপায় তারা খুঁজে পেল না, কারণ লোকেরা সবাই একমনে তাঁর কথা শুনত।
\s5
\c 20
\ms জেরুশালেমে যীশুর উপদেশ l
\v 1 একদিন যীশু ধর্মগৃহে লোকদের উপদেশ দিচ্ছেন ও সুসমাচার প্রচার করছেন, এর মধ্যে প্রধান যাজকেরা ও ধর্মশিক্ষকরা প্রাচীনদের সঙ্গে এসে উপস্থিত হলো, এবং তাকে বলল,আমাদের বলো,তুমি কী ক্ষমতায় এই সব করছ?
\v 2 তোমাকে যে এই ক্ষমতা দিয়েছে, সেই বা কে?
\s5
\v 3 তিনি উত্তর করে তাদের বললেন, আমিও তোমাদের একটি কথা জিজ্ঞাসা করি, আমাকে বল;
\v 4 যোহনের বাপ্তিস্ম স্বর্গ থেকে হয়েছিল, না মানুষ থেকে?
\s5
\v 5 তখন তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করল, বলল, যদি বলি, স্বর্গ থেকে, তা হলে এ বলবে, তোমরা কেন তাকে বিশ্বাস করনি?
\v 6 আর যদি বলি, মানুষ থেকে, তবে লোকেরা সবাই আমাদের পাথর মারবে; কারণ তাদের ধারণা হয়েছে যে, যোহন ভাববাদী ছিলেন l
\s5
\v 7 তারা উত্তর করল, জানি না, কোথা থেকে l
\v 8 যীশু তাদের বললেন, তবে আমিও কী ক্ষমতায় এ সব করছি, তোমাদের বলবো নাl
\s গৃহকর্তা ও কৃষকদের গল্প
\s5
\v 9 পরে তিনি লোকদের এই গল্পকথা বলতে লাগলেন; কোনো ব্যক্তি আঙ্গুরের বাগান করেছিলেন, পরে তা কৃষকদের কাছে জমা দিয়ে অনেক দিনের জন্য অন্য দেশে চলে গেলেন l
\v 10 পরে সঠিক সময়ে কৃষকদের কাছে এক দাসকে পাঠালেন, যেন তার আঙ্গুরক্ষেতের ফলের অংশ তাকে দেয়; কিন্তু কৃষকেরা তাকে মারধর করে খালি হাতে বিদায় করল l
\s5
\v 11 পরে তিনি আর এক দাসকে পাঠালেন, তারা তাকেও মারধর ও অপমান করে খালি হাতে বিদায় করল l
\v 12 পরে তিনি তৃতীয় দাসকে পাঠালেন, তারা তাকেও আহত করে বাইরে ফেলে দিল l
\s5
\v 13 তখন আঙ্গুরক্ষেতের কর্তা বললেন, আমি কী করব? আমার প্রিয় ছেলেকে পাঠাব; হয় তো তারা তাকে সম্মান করবে;
\v 14 কিন্তু কৃষকেরা তাঁকে দেখে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল, এই ব্যক্তিই উত্তরাধিকারী; এস, আমরা একে হত্যা করি, যেন অধিকার আমাদেরই হয় l
\s5
\v 15 পরে তাকে আঙ্গুরক্ষেতের বাইরে ফেলে হত্যা করল l এখন আঙ্গুরক্ষেতের মালিক তাদের কী করবেন?
\v 16 তিনি এসে এই কৃষকদের বিনষ্ট করবেন, এবং জমি অন্য লোকদের দেবেন l এই কথা শুনে তারা বলল, এমন না হোক l
\s5
\v 17 কিন্তু তিনি তাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, তবে যা লেখা আছে তার অর্থ কী, “যে পাথরটিকে গাঁথকেরা অগ্রাহ্য করেছে, তাই-ই ঘরের কোনের প্রধান পাথর হয়ে উঠলো? ”
\v 18 সেই পাথরের উপরে যে পড়বে, সে ভেঙ্গে যাবে; কিন্তু সেই পাথর যার উপরে পড়বে, তাকে চুরমার করে ফেলবে l
\s5
\v 19 সেই সময়ে অধ্যাপকরা ও প্রধান যাজকেরা তার উপরে হস্তক্ষেপ করতে চেষ্টা করল; আর তারা লোকদের ভয় করল; কারণ তারা বুঝেছিল যে, তিনি তাদেরই বিষয়ে সেই গল্প বলেছিলেন l
\s শাসনকর্তাদের জন্য কর্তব্য বিষয়ে শিক্ষা
\v 20 তখন তারা তার উপরে নজর রেখে, এমন কয়েকজন গুপ্তচর পাঠিয়ে দিল, যারা ছদ্মবেশী ধার্মিক সাজবে, যেন তার কথা ধরে তাকে রাজদ্বারে ও রাজ্যপালের কাছে সমর্পণ করতে পারে l
\s5
\v 21 তারা তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, হে গুরু, আমরা জানি, আপনি সঠিক কথা বলেন ও সঠিক শিক্ষা দেন, কারোর মুখ চেয়ে কথা বলেন না, কিন্তু সত্যভাবে ঈশ্বরের পথের বিষয়ে শিক্ষা দিচ্ছেন l
\v 22 কৈসরকে কর দেওয়া আমাদের উচিত কি না?
\s5
\v 23 কিন্তু তিনি তাদের চালাকি বুঝতে পেরে বললেন,
\v 24 আমাকে একটি দীনার (মুদ্রা) দেখাও;এতে কার মূর্তি ও নাম লেখা আছে?
\s5
\v 25 তারা বলল, কৈসরের, তখন তিনি তাদের বললেন, তবে যা যা কৈসরের, কৈসরকে দাও, আর যা ঈশ্বরের, ঈশ্বরকে দাও l
\v 26 এতে তারা লোকদের সামনে তাঁর কথার কোনো ত্রূটি ধরতে পারল না, বরং তাঁর উত্তরে আশ্চর্যবোধ করতে লাগল l
\s পরকালের বিষয়ে শিক্ষা
\s5
\v 27 আর সদ্দুকীদের যারা প্রতিবাদ করে বলে, পুনরুত্থান নেই, তাদের কয়েকজন কাছে এসে তাকে জিজ্ঞাসা করল,
\v 28 "হে গুরু, মোশি আমাদের জন্য লিখেছেন, কারোর ভাই যদি স্ত্রীকে রেখে মারা যায়, আর তার সন্তান না থাকে, তবে তার ভাই সেই স্ত্রীকে বিয়ে করবে, ও নিজের ভাইয়ের জন্য বংশবৃদ্ধি করবে l"
\s5
\v 29 ভালো, সাতটি ভাই ছিল; প্রথম জন একটি স্ত্রীকে বিয়ে করল, আর সে সন্তান না রেখে মারা গেল l
\v 30 পরে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাই সেই স্ত্রীকে বিয়ে করল;
\v 31 এইভাবে সাতজনই সন্তান না রেখে মারা গেল l
\v 32 শেষে সেই স্ত্রীও মারা গেল l
\v 33 অতএব পুনরুত্থানে সে তাদের মধ্যে কার স্ত্রী হবে? তারা সাতজনই তো তাকে বিয়ে করেছিল l
\s5
\v 34 যীশু তাদের বললেন, এই জগতের সন্তানেরা বিয়ে করে এবং বিবাহিতা হয় l
\v 35 কিন্তু যারা সেই জগতের এবং মৃতদের মধ্যে থেকে পুনরুত্থানের অধিকারী হবার যোগ্য বলে গণ্য হয়েছে, তারা বিয়ে করা এবং বিবাহিত হয় না l
\v 36 তারা আর মরতেও পারে না, কারণ তারা দূতদের সমান, এবং পুনরুত্থানের সন্তান হওয়ায় ঈশ্বরের সন্তান l
\s5
\v 37 আবার মৃতেরা যে উত্থাপিত হয়, এটা মোশিও ঝোপের বৃত্তান্তে দেখিয়েছেন; কারণ তিনি প্রভুকে "অব্রাহামের ঈশ্বর, ইসহাকের ঈশ্বর ও যাকোবের ঈশ্বর " বলেন l
\v 38 ঈশ্বর তো মৃতদের ঈশ্বর নন, কিন্তু জীবিতদের; কারণ তাঁর সামনে সবাই জীবিত l
\s5
\v 39 তখন কয়েকজন অধ্যাপক বলল,"হে গুরু, আপনি ভালো বলেছেন!"
\v 40 বাস্তবে সেই থেকে তাকে আর কোনো কথা জিজ্ঞাসা করতে তাদের সাহস হলো না l
\s যীশুর শত্রুরা নিরুত্তর হ
\s5
\v 41 আর তিনি তাদের বললেন, লোকে কেমন করে খ্রীষ্টকে দায়ূদের সন্তান বলে?
\v 42 দায়ূদ তো আপনি গীতপুস্তকে বলেন, "প্রভু আমার প্রভুকে বললেন, তুমি আমার ডানদিকে বসো,
\v 43 যতক্ষণ না আমি তোমার শত্রুদের তোমার পায়ের তলায় না রাখি l"
\v 44 অতএব দায়ূদ তাঁকে প্রভু বলেন; তবে তিনি কীভাবে তাঁর সন্তান?
\s5
\v 45 যখন সবই শুনছিল তখন তিনি নিজের শিষ্যদের বললেন,
\v 46 "অধ্যাপকদের থেকে সাবধান, তারা লম্বা লম্বা কাপড় পরে বেড়াতে চায়, এবং হাটেবাজারে লোকদের মঙ্গলবাদ, সমাজগৃহে প্রধান প্রধান আসন এবং ভোজে প্রধান প্রধান জায়গা ভালোবাসে;
\v 47 তারা বিধবাদের গৃহ দখল করে; এবং লোকদের দেখাবার জন্য বড় বড় প্রার্থনা করে, তারা বিচারে আরও বেশি শাস্তি পাবে l
\s5
\c 21
\ms সত্যিকারের দানের বিষয়ে শিক্ষা
\v 1 পরে তিনি চোখ তুলে দেখলেন, ধনবানেরা ভাণ্ডারে নিজের নিজের দান রাখছে l
\v 2 আর তিনি দেখলেন এক গরিব বিধবা সেখানে দুটি পয়সা রাখছে;
\v 3 তখন তিনি বললেন, আমি তোমাদের সত্য বলছি, এই গরিব বিধবা সবার থেকে বেশি দান রেখেছে l
\v 4 কারণ এরা সবাই নিজের নিজের বাড়তি টাকা থেকে কিছু কিছু দানের মধ্যে রাখল, কিন্তু এ নিজের অনাটন সত্ত্বেও এর যা কিছু ছিল, সবই রাখল l
\s জিরুশালেমের বিনাশ ও নিজের দ্বিতীয় আগমনের বিষয়ে শিক্ষা
\m
\s5
\v 5 আর যখন কেউ কেউ ধর্মগৃহের বিষয়ে বলছিলেন, ওটা কেমন সুন্দর সুন্দর পাথরে ও উত্সর্গীকৃত জিনিসে সুশোভিত, তিনি বললেন,
\v 6 "তোমরা এই যে-সব দেখছ, এমন সময় আসছে, যখন এর একখানি পাথর অন্য পাথরের উপরে থাকেবে না, সমস্তই ধ্বংস হবে l"
\s5
\v 7 তারা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন,"হে গুরু, তবে এ-সব ঘটনা কখন হবে? আর যখন এসব ঘটনা ঘটবে তখন তার চিহ্নই বা কি?"
\v 8 তিনি বললেন, দেখ, ভ্রান্ত হয়ও না; কারণ অনেকে আমার নাম ধরে আসবে, বলবে, আমিই তিনি ও সময় নিকটবর্তী; তোমরা তাদের পিছনে যেও না l
\v 9 আর যখন তোমরা যুদ্ধের ও গণ্ডগোলের কথা শুনবে, ভয় পাবে না, কারণ প্রথমে এইসব ঘটবেই ঘটবে কিন্তু তখনই শেষ না l
\s5
\v 10 পরে তাদের বললেন, জাতির বিরুদ্ধে জাতি ও রাজ্যের বিরুদ্ধে রাজ্য উঠবে l
\v 11 বিশাল বিশাল ভূমিকম্প এবং জায়গায় জায়গায় দুর্ভিক্ষ ও মহামারী হবে, আর আকাশে ভয়ঙ্কর লক্ষণ এবং মহৎ চিহ্ন হবে l
\s5
\v 12 কিন্তু এইসব ঘটনার আগে লোকেরা তোমাদের বন্দি করবে, তোমাদের নির্যাতন করবে, সমাজগৃহে ও কারাগারে সমর্পণ করবে; আমার নামের জন্য তোমাদের রাজাদের ও শাসনকর্তাদের সামনে আনা হবে l
\v 13 সাক্ষ্যের জন্য এইসব তোমাদের প্রতি ঘটবে l
\s5
\v 14 অতএব মনে মনে তৈরি থেকো যে, কী উত্তর দিতে হবে, তার জন্য আগে চিন্তা করবে না l
\v 15 কারণ আমি তোমাদের এমন কথা ও বুদ্ধি দেব যে, তোমাদের বিপক্ষেরা কেউ প্রতিরোধ করতে কি উত্তর দিতে পারবে না l
\s5
\v 16 আর তোমরা বাবা-মা, ভাই,আত্মীয় ও বন্ধুদের দ্বারা সমর্পিত হবে এবং তোমাদের কাউকে কাউকেও তারা মেরে ফেলবে l
\v 17 আর আমার নামের জন্য তোমরা সবার ঘৃণার পাত্র হবে l
\v 18 কিন্তু তোমাদের মাথার একটা চুল নষ্ট হবে না l
\v 19 তোমরা নিজেদের ধৈর্যে নিজেদের প্রাণরক্ষা করবে l
\s5
\v 20 আর যখন তোমরা জেরুশালেমকে সৈন্যসামন্ত দিয়ে ঘেরা দেখবে, তখন জানবে যে, তার ধ্বংস নিকটবর্তী l
\v 21 তখন যারা যিহূদিয়ায় থাকে, তারা পাহাড়ি অঞ্চলে পালিয়ে যাক এবং যারা শহরের মধ্যে থাকে, তারা বাইরে যাক; আর যারা গ্রামাঞ্চলে থাকে, তারা শহরে না আসুক l
\v 22 কারণ তখন প্রতিশোধের সময়, যে সব কথা লেখা আছে সেসব পূর্ণ হবার সময় l
\s5
\v 23 হায়!, সেই সময়ে গর্ভবতী ও স্তন্যদাত্রী স্ত্রীলোকদের ভয়ঙ্কর দুর্দশা! কারণ দেশে মহাসংকট এবং এই জাতির ওপর ক্রোধ নেমে আসবে l
\v 24 লোকেরা তরবারির আঘাতে মারা পড়বে; এবং বন্দি হয়ে সকল জাতির মধ্যে সমর্পিত হবে; আর জাতিদের সময় সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত জিরুশালেম সব জাতির কাছে পদদলিত হবে l
\s5
\v 25 আর সূর্যে,চাঁদে ও তারকামন্ডলে নানা চিহ্ন দেখা যাবে, এবং পৃথিবীতে সমস্ত জাতি কষ্টে ভুগবে, তারা সুমদ্রের ও ঢেউয়ের গর্জনে উদ্বিগ্ন হবে l
\v 26 ভয়ে এবং পৃথিবীতে যা যা ঘটবে তার আশঙ্কায়, মানুষেরা অজ্ঞান হয়ে যাবে; কারণ আকাশের সব শক্তি বিচলিত হবে l
\s5
\v 27 আর সেই সময়ে তারা মানবপুত্রকে পরাক্রম ও মহাপ্রতাপের সঙ্গে মেঘযোগে করে আসতে দেখবে l
\v 28 কিন্তু এসব ঘটনা শুরু হলে তোমরা উপরের দিকে তাকিও l মাথা তোল, কারণ তোমাদের মুক্তি আসন্ন l
\s5
\v 29 আর তিনি তাদেরকে একটি গল্প বললেন, ডুমুর গাছ ও আর সব গাছ দেখ;
\v 30 যখন সেগুলির নতুন পাতা গজায়, তখন তা দেখে তোমরাই নিজেরাই বুঝতে পার যে, এখন গরমকাল নিকটবর্তী l
\v 31 সেইভাবে তোমরাও যখন এইসব ঘটছে দেখবে, তখন জানবে, ঈশ্বরের রাজ্য নিকটবর্তী l
\s5
\v 32 আমি তোমাদের সত্য বলছি, যে পর্যন্ত এসবপূর্ণ না হয়, সেই পর্যন্ত এইকালের লোকদের মৃত্যু হবে না l
\v 33 আকাশের ও পৃথিবীর বিনাশ হবে, কিন্তু আমার বাক্যের বিনাশ কখনও হবে না l
\s5
\v 34 কিন্তু নিজেদের বিষয়ে সাবধান থেকো, রোগে ও ভোগবিলাসে এবং কাজের চিন্তায় তোমাদের মন যেন আচ্ছন্ন না হয়, আর সেই দিন হঠাৎ ফাঁদের মতো তোমাদের ওপরে এসে পড়বে;
\v 35 কারণ সেই দিন সমস্ত পৃথিবীর লোকের উপরে আসবে l
\s5
\v 36 কিন্তু তোমরা সবসময়ে জেগে থেকো এবং প্রার্থনা করো, যেন এই যেসব ঘটনা ঘটবে, তা এড়াতে এবং মানবপুত্রের সামনে দাঁড়াতে, শক্তিমান হও l
\s5
\v 37 আর তিনি প্রতিদিন ধর্মগৃহে উপদেশ দিতেন এবং প্রতিরাতে বাইরে গিয়ে জৈতুন নামে পর্বতে গিয়ে থাকতেন l
\v 38 আর সব লোক তাঁর কথা শুনবার জন্য খুব ভোরে ধর্মগৃহে তাঁর কাছে আসত l
\v 2 আর প্রধান যাজকেরা ও অধ্যাপকেরা কীভাবে তাঁকে হত্যা করতে পারে, তারই চেষ্টা করছিল, কারণ তারা লোকদের ভয় করত l
\s ঈস্কোরিয়োতীয় যিহূদার বিশ্বাসঘাতকতা l
\s5
\v 3 আর শয়তান ঈস্কোরিয়োতীয় নামে যিহূদার ভিতরে প্রবেশ করল, এ সেই বারো জনের একজন l
\v 4 তখন সে গিয়ে প্রধান যাজকদের ও সেনাপতিদের সাথে কথাবার্তা বলল, কীভাবে তাঁকে তাদের হাতে সমর্পণ করতে পারবে l
\s5
\v 5 তখন তারা আনন্দিত হল ও তাকে টাকা দিতে প্রতিজ্ঞা করল l তাতে সে রাজি হল এবং
\v 6 জনতার নজরের বাইরে তাঁকে ধরিয়ে দেবার সুযোগ খুঁজতে লাগল l
\s নিস্তারপর্ব ও প্রভুর ভোজ পালন
\s5
\v 7 পরে খামিহীন রুটির দিন, অর্থাৎ যে দিন নিস্তারপর্বের মেষশাবক বলি দিতে হত, সেই দিন আসল l
\v 8 তখন তিনি পিতর ও যোহনকে পাঠিয়ে দিয়ে বললেন, তোমরা গিয়ে নিস্তারপর্বের ভোজ প্রস্তূত কর, আমরা ভোজন করব l
\v 9 তারা বললেন, কোথায় প্রস্তূত করব?
\s5
\v 10 আপনার ইচ্ছা কী ? তিনি তাদেরকে বললেন, দেখ, তোমরা সবাই শহরে ঢুকলে এমন এক ব্যক্তি তোমাদের সামনে পড়বে, যে ব্যক্তি এক কলসি জল নিয়ে আসছে; তোমরা তার পিছন পিছন, যে বাড়িতে সে ঢুকবে, সেখানে যাবে l
\v 11 আর তোমরা বাড়ির মালিককে বলবে, গুরু আপনাকে বলছেন, যেখানে আমি আমার শিষ্যদের সাথে নিস্তারপর্বের ভোজ গ্রহণ করি, সেই অতিথিশালা কোথায়?
\s5
\v 12 তাতে সে তোমাদের সাজানো একটি ওপরের বড় ঘর দেখিয়ে দেবে;
\v 13 সেই জায়গায় প্রস্তূত কর l তারা গিয়ে, তিনি যেরকম বলেছিলেন, সেই রকম দেখতে পেলেন; আর নিস্তারপর্বের ভোজ প্রস্তূত করলেন l
\s5
\v 14 পরে সময় হলে তিনি ও প্রেরিতেরা একসঙ্গে ভোজে অংশ গ্রহণ করলেন l
\v 15 তখন তিনি তাদের বললেন, আমার দুঃখভোগের আগে তোমাদের সাথে আমি এই নিস্তারপর্বের ভোজ ভোজন করতে আমি খুব ইচ্ছা করছি;
\v 16 কারণ আমি তোমাদের বলছি, যে পর্যন্ত ঈশ্বরের রাজ্যে এ পূর্ণ না হয়, সেই পর্যন্ত আমি এ আর ভোজন করব না l
\s5
\v 17 পরে তিনি পানপাত্র নিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে বললেন, এটা নাও, এবং নিজেদের মধ্যে ভাগ কর;
\v 18 কারণ আমি তোমাদের বলছি, যে পর্যন্ত ঈশ্বরের রাজ্যের আগমন না হয়, এখন থেকে সেই পর্যন্ত আমি আঙ্গুর ফলের রস পান করব না l
\s5
\v 19 পরে তিনি রুটি নিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে ভাঙ্গলেন, এবং তাদের দিলেন, বললেন, এ আমার স্মরণে কর l
\v 20 আর সেইভাবে তিনি ভোজন শেষ হলে পানপাত্রটি নিয়ে বললেন, এই পানপাত্র আমার রক্তে নতুন নিয়ম, যে রক্ত তোমাদের জন্য বাহিত হয় l
\s5
\v 21 কিন্তু দেখ, যে ব্যক্তি আমাকে সমর্পণ করছে, তার হাত আমার সঙ্গে টেবিলের উপরে রয়েছে l
\v 22 কারণ যেমন নির্ধারিত হয়েছে সেই অনুসারেই মানবপুত্র যাচ্ছেন, কিন্তু ধিক সেই ব্যক্তিকে, যার মাধ্যমে তিনি সমর্পিত হন l
\v 23 তখন্ তারা একে অপরকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন, তবে আমাদের মধ্যে এ কাজ কে করবে?
\s5
\v 24 আর তাদের মধ্যে এই নিয়ে তর্ক শুরু হল যে, তাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ বলে গণ্য l
\v 25 কিন্তু তিনি তাদের বললেন, জাতিদের রাজারাই তাদের উপরে প্রভুত্ব করে, এবং তাদের শাসনকর্তারাই "উপকারক" বলে আখ্যাত হয় l
\s5
\v 26 কিন্তু তোমরা সেই রকম হয়ও না; বরং তোমাদের মধ্যে যে শ্রেষ্ঠ, সে ছোটোর মত হোক; এবং যে প্রধান, সে দাসের মত হোক l
\v 27 কারণ, কে শ্রেষ্ঠ? যে ভোজনে বসে না পরিবেশন করে? যে ভোজনে বসে সেই কি না? কিন্তু আমি তোমাদের মধ্যে দাসের মত আছি l
\s5
\v 28 তোমরাই আমার সব পরীক্ষায় তো আমার সঙ্গে রয়েছ;
\v 29 আর আমার পিতা যেমন আমার জন্য নির্ধারণ করেছেন, আমিও তেমনি তোমাদের জন্য এক রাজ্য নির্ধারণ করছি,
\v 30 যেন তোমরা আমার রাজ্যে আমার সঙ্গে ভোজনপান কর; আর তোমরা সিংহাসনে বসে ইস্রায়েলের বারো বংশের বিচার করবে l
\s5
\v 31 শিমোন, শিমোন, দেখ, গমের মত চেলে বের করার জন্য শয়তান তোমাদের নিজের বলে চেয়েছে;
\v 32 কিন্তু আমি তোমার জন্য প্রার্থনা করেছি, যেন তোমাদের বিশ্বাসে ভাঙ্গন না ধরে; আর তুমিও একবার ফিরলে পর তোমার ভাইদের সুস্থির করও l
\s5
\v 33 তিনি তাকে বললেন, প্রভু, আপনার সঙ্গে আমি কারাগারে যেতে এবং মরতেও রাজি আছি l
\v 34 তিনি বললেন, পিতর আমি তোমাকে বলছি, যে পর্যন্ত তুমি আমাকে চেন না বলে তিনবার অস্বীকার করবে, সেই পর্যন্ত আজ মোরগ ডাকবে না l
\s5
\v 35 আর তিনি তাদের বললেন, আমি যখন থলি, ঝুলি ও জুতো ছাড়া তোমাদের পাঠিয়ে ছিলাম, তখন কি কিছুরই অভাব হয়েছিল? তারা বললেন কিছুই না l
\v 36 তখন তিনি তাদের বললেন, এখন যার থলি আছে, সে তা নিয়ে যাক, সেই ভাবে ঝুলিও নিয়ে নিক; এবং যার নেই, সে নিজের পোষাক বিক্রি করে তলোয়ার কিনুক l
\s5
\v 37 কারণ আমি তোমাদের বলছি, এই যে কথা লেখা আছে,"আর তিনি অধর্মীদের সঙ্গে গণ্য হলেন" তা আমাতে পূর্ণ হতে হবে; কারণ আমার বিষয়ে যা, তা পূর্ণ হচ্ছে l
\v 38 তখন তারা বললেন, প্রভু, দেখুন, দুটি তলোয়ার আছে l তিনি তাদের বললেন, এই যথেষ্ট l
\s গেৎশিমানী বাগানে যীশুর করুন দুঃখ প্রকাশ l
\s5
\v 39 পরে তিনি বাইরে এসে নিজের নিয়ম অনুসারে জৈতুন পর্বতে গেলেন, এবং শিষ্যরাও তার পিছন পিছন গেলেন l
\v 40 সেই জায়গায় আসলে পর তিনি তাদের বললেন, তোমরা প্রার্থনা কর, যেন প্রলোভনে না পড় l
\s5
\v 41 পরে তিনি তাদের থেকে কিছু দুরে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে প্রার্থনা করতে লাগলেন, বললেন,
\v 42 পিতা যদি তোমার ইচ্ছা হয়, আমার থেকে এই পানপাত্র দূর কর; তবুও আমার ইচ্ছা নয়, তোমারই ইচ্ছা পূর্ণ হোক
\s5
\v 43 তখন স্বর্গ থেকে এক দূত দেখা দিয়ে তাঁকে সবল করলেন l
\v 44 পরে তিনি করুন দুঃখে মগ্ন হয়ে আরো এক মনে প্রার্থনা করলেন; আর তার ঘাম যেন রক্তের আকারে বড় বড় ফোঁটা হয়ে জমিতে পড়তে লাগল l
\s5
\v 45 পরে তিনি প্রার্থনা করে উঠলে পর শিষ্যদের কাছে এসে দেখলেন, তারা দুঃখের জন্য ঘুমিয়ে পড়েছে,
\v 46 আর তাদের বললেন, কেন ঘুমাচ্ছ ? ওঠ, প্রার্থনা কর, যেন প্রলোভনে না পড় l
\s যীশু শত্রুদের হাতে বন্দি হলেন l
\s5
\v 47 তিনি কথা বলছেন, এমন সময় দেখ, অনেক লোক এবং যার নাম যিহূদা - সেই বারো জনের মধ্যে একজন - সে তাদের আগে আগে আসছে; সে যীশুকে চুম্বন করবার জন্য তাঁর কাছে আসল l
\v 48 কিন্তু যীশু তাকে বললেন, যিহূদা, চুম্বনের মাধ্যমে কি মানবপুত্রকে সমর্পণ করছ?
\s5
\v 49 তখন কী কী ঘটবে, তা দেখে যারা তাঁর কাছে ছিলেন, তারা বললেন, প্রভু আমরা কি তলোয়ারের আঘাত করব?
\v 50 আর তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি মহাযাজকের দাসকে আঘাত করে তার ডান কান কেটে ফেললেন l
\v 51 কিন্তু যীশু উত্তর করলেন, এই পর্যন্ত শান্ত হও l পরে তিনি তার কান স্পর্শ করে তাকে সুস্থ করলেন l
\s5
\v 52 আর তার বিরুদ্ধে যে প্রধান যাজকেরা, ধর্মগৃহের সেনাপতি ও প্রাচীনেরা এসেছিল, যীশু তাদের বললেন, লোকে "যেমন দস্যুর বিরুদ্ধে যায়, তেমনি খড়গ ও লাঠি নিয়ে কি তোমরা আসলে?
\v 53 আমি যখন প্রতিদিন ধর্মগৃহে তোমাদের সঙ্গে ছিলাম, তখন আমায় স্পর্শও করনি; কিন্তু এই তোমাদের সময় এবং অন্ধকারের অধিকার l"
\s পিতর যীশুকে তিনবার অস্বীকার করেন l
\s5
\v 54 পরে তারা তাঁকে ধরে নিয়ে গেল, এবং মহাযাজকের বাড়িতে আনলো ; আর পিতর দুরে থেকে পিছন পিছন চললেন l
\v 55 পরে লোকেরা উঠোনের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে একসঙ্গে বসলে পিতর তাদের মধ্যে বসলেন l
\s5
\v 56 তিনি সেই আলোর কাছে বসলে এক দাসী তাকে দেখে তার দিকে এক নজরে চেয়ে বলল, এ ব্যক্তি ওর সঙ্গে ছিল l
\v 57 কিন্তু তিনি অস্বীকার করে বললেন, না, নারী! আমি ওকে চিনি না l
\v 58 একটু পরে আর একজন তাকে দেখে বলল, তুমিও তাদের একজন l পিতর বললেন, না, আমি নই l
\s5
\v 59 ঘন্টাখানেক পরে আর একজন জোর দিয়ে বলল, সত্যি, এ ব্যক্তিও তাঁর সঙ্গে ছিল, কারণ এ গালীলীয় লোক l
\v 60 তখন পিতর বললেন, দেখ, তুমি কী বলছ, আমি বুঝতে পারছি না l তিনি কথা বলছিলেন, আর অমনি মোরগ ডেকে উঠল l
\s5
\v 61 আর প্রভু মুখ ফিরিয়ে পিতরের দিকে নজর দিলেন; তাতে প্রভু এই যে কথা বলেছিলেন,"আজ মোরগ ডাকবার আগে তুমি তিনবার আমাকে অস্বীকার করবে l" তা পিতরের মনে পড়ল l
\v 62 আর তিনি বাইরে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন l
\s যাজকদের ও রাজ্যপালের সামনে যীশুর বিচার l
\s5
\v 63 আর যে লোকেরা যীশুকে ধরেছিল, তারা তাঁকে ঠাট্টা ও মারধর করতে শুরু করল l
\v 64 আর তাঁর চোখ ঢেকে জিজ্ঞাসা করল, ভাববাণী বল্ দেখি,"কে তোকে মারলো ?"
\v 65 আর তারা নিন্দা করে তার বিরুদ্ধে আরো অনেক কথা বলতে লাগল l
\s5
\v 66 যখন দিন হল, তখন লোকদের প্রাচীন নেতারা, প্রধান যাজকেরা ও ধর্মশিক্ষক একসঙ্গে মিলিত হল, এবং নিজেদের সভার মধ্যে তাঁকে নিয়ে এসে বলল, তুমি যদি সেই খ্রীষ্ট হও, তবে আমাদের বল l
\v 67 তিনি তাদের বললেন,"যদি তোমাদের বলি, তোমরা বিশ্বাস করবে না;
\v 68 আর যদি তোমাদের জিজ্ঞাসা করি, কোনো উত্তর দেবে না;"
\s5
\v 69 কিন্তু এখন থেকে মানবপুত্র সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ডান পাশে বসে থাকবেন l
\v 70 তখন সবাই বলল, তবে তুমি কি ঈশ্বরের পুত্র? তিনি তাদের বললেন, তোমরাই তো বলছ যে,"আমিই সেই l"
\v 71 তখন তারা বলল," আর সাক্ষ্যে আমাদের কী প্রয়োজন? আমরা নিজেরাই তো তাঁর মুখে শুনলাম l"
\s5
\c 23
\v 1 পরে তারা সবাই উঠে তাঁকে পীলাতের কাছে নিয়ে গেল l
\v 2 আর তারা তাঁর উপরে দোষ দিয়ে বলতে লাগল, আমরা দেখতে পেলাম যে, এই ব্যক্তি আমাদের জাতিকে বিপথে নিয়ে যাচ্ছে, কৈসরকে কর দিতে বারণ করে, আর বলে যে, আমি সেই খ্রীষ্ট রাজা l
\s5
\v 3 তখন পীলাত তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমিই কি যিহূদিদের রাজা? তিনি তাকে উত্তর করে বললেন, তুমি বললে l
\v 4 তখন পীলাত প্রধান যাজকদের ও লোকদের উদ্দেশে বললেন, আমি এই ব্যক্তির কোনো দোষ পাচ্ছি না l
\v 5 কিন্তু তারা আরও জোর করে বলতে লাগল, এ ব্যক্তি সমস্ত যিহূদিয়ায় এবং গালীল থেকে এই জায়গা পর্যন্ত শিক্ষা দিয়ে লোকদের ক্ষেপিয়ে তুলছে l
\s5
\v 6 এই শুনে পীলাত জিজ্ঞাসা করলেন, এ ব্যক্তি কি গালীলীয়?
\v 7 পরে যখন তিনি জানতে পারলেন, ইনি হেরোদের অঞ্চলের লোক, তখন তাঁকে হেরোদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন, কারণ সেইসময় তিনি জিরুশালেমে ছিলেন l
\s5
\v 8 যীশুকে দেখে হেরোদ খুব আনন্দিত হলেন, কারণ তিনি তাঁর বিষয়ে শুনেছিলেন, এই অনেক দিন থেকে তাঁকে দেখতে ইচ্ছা করেছিলেন, এবং তাঁর অলৌকিক কোনো চিহ্ন দেখবার আশা করতে লাগলেন l
\v 9 তিনি তাঁকে অনেক কথা জিজ্ঞাসা করলেন, কিন্তু যীশু তাকে কোনো উত্তর দিলেন না l
\v 10 আর প্রধান যাজকরা ও ধর্মশিক্ষকেরা দাঁড়িয়ে প্রবলভাবে তাঁর উপরে দোষারোপ করছিল l
\s5
\v 11 আর হেরোদ ও তাঁর সেনারা তাঁকে তুচ্ছ করলেন ও ঠাট্টা করলেন এবং দামী পোষাক পরিয়ে তাঁকে পীলাতের কাছে পাঠিয়ে দিলেন l
\v 12 সেইদিন থেকে হেরোদ ও পীলাত দুজনে বন্ধু হয়ে উঠলেন, কারণ আগে তাদের মধ্যে শত্রুতা ছিল l
\s5
\v 13 পরে পীলাত প্রধান যাজকরা, তত্ত্বাবধায়ক ও লোকদের একসঙ্গে ডেকে তাদের বললেন,
\v 14 তোমরা এ ব্যক্তিকে আমার কাছে এই বলে এনেছ যে, এ লোককে বিপথে নিয়ে যায়; আর দেখ, আমি তোমাদের সামনে বিচার করলেও, তোমরা এর উপরে যেসব দোষ দিচ্ছ, তার মধ্যে এই ব্যক্তির কোনো দোষ দেখতে পেলাম না l
\s5
\v 15 আর হেরোদও পাননি, কারণ তিনি একে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন; আর দেখ, এ ব্যক্তি প্রাণদণ্ডের যোগ্য কিছুই করেনি l
\v 16 অতএব আমি একে শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দেব l
\v 17 (ঐ পর্বের সময় তাদের জন্য এক জনকে ছেড়ে দিতেই হত l)
\s5
\v 18 কিন্তু তারা দলবদ্ধ হয়ে সবাই চিৎকার করে বলল, একে দূর কর, আমাদের জন্য বারাব্বাকে ছেড়ে দাও l
\v 19 শহরের মধ্যে দাঙ্গা ও মানুষ হত্যার দায়ে সেই ব্যক্তি কারাবদ্ধ হয়েছিল l
\s5
\v 20 পরে পীলাত যীশুকে মুক্ত করবার ইচ্ছায় আবার তাদের কাছে কথা বললেন l
\v 21 কিন্তু তারা চেঁচিয়ে বলতে লাগল, ক্রুশে দাও, ওকে ক্রুশে দাও l
\v 22 পরে তিনি তৃতীয় বার তাদের বললেন, কেন? এ কী অপরাধ করেছে? আমি মৃত্যু দণ্ডের যোগ্য কোনো দোষই পাইনি l অতএব একে শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দেব l
\s5
\v 23 কিন্তু তারা খুব জোরে বলতে লাগল, যেন তাকে ক্রুশে দেওয়া হয়; আর তারা আরো জোরে চিৎকার করল l
\v 24 তখন পীলাত তাদের ইচ্ছা অনুসারে করতে আদেশ দিলেন;
\v 25 দাঙ্গা ও মানুষ হত্যার দায়ে কারাবদ্ধ যে ব্যক্তিকে তারা চাইল, তিনি তাকে ছেড়ে দিলেন, কিন্তু যীশুকে তাদের ইচ্ছায় সমপর্ন করলেন l
\s যীশুর ক্রুশারোপণ ও মৃত্যু l
\s5
\v 26 পরে তারা তাঁকে নিয়ে যাচ্ছে, এর মধ্যে শিমোন নামে একজন কুরীনীয় লোক গ্রাম থেকে আসছিল, তারা তাকে ধরে তার কাঁধে ক্রুশ রাখল, যেন সে যীশুর পিছন পিছন তা নিয়ে যায় l
\s5
\v 27 আর অনেক লোক তাঁর পিছন পিছন চলল; এবং অনেকগুলি স্ত্রীলোক ছিল, তারা তাঁর জন্য হাহাকার ও কান্নাকাটি করছিলেন l
\v 28 কিন্তু যীশু তাদের দিকে ফিরে বললেন,"ওগো জিরুশালেমের মেয়েরা, আমার জন্য কেঁদো না, বরং নিজেদের এবং নিজের নিজের সন্তানদের জন্য কাঁদ l"
\s5
\v 29 কারণ দেখ, এমন সময় আসছে যেসময় লোকে বলবে, ধন্য সেই স্ত্রীলোকেরা, যারা বন্ধ্যা, যাদের গর্ভ কখনো সন্তান প্রসব করেনি, যাদের স্তন কখনো শিশুদের পান করায়নি l
\v 30 সেই সময় লোকেরা পর্বতগণকে বলতে শুরু করবে, আমাদের উপরে পড়; এবং পাহাড়গুলোকে বলবে, আমাদের ঢেকে রাখো l
\v 31 কারণ লোকেরা সরস গাছের প্রতি যদি এমন করে, তবে শুকনো গাছে কি না ঘটবে?
\s5
\v 32 আরও দুজন অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ড দেবার জন্য তাঁর সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল l
\s5
\v 33 পরে মাথার খুলি নামে জায়গায় নিয়ে গিয়ে তারা সেখানে তাঁকে এবং সেই দুজন অপরাধীকে ক্রুশে দিল, একজনকে তার ডান পাশে ও অপরজনকে বাম পাশে রাখল l
\v 34 তখন যীশু বললেন, পিতা, এদের ক্ষমা কর, কারণ এরা কী করছে , তা জানেনা l পরে তারা তাঁর জামা-কাপড়গুলি নিজেদের মধ্যে ভাগ করল l
\s5
\v 35 লোকেরা দাঁড়িয়ে দেখছিল l যিহূদী নেতারা তাঁকে ব্যঙ্গ করে বলতে লাগল, ওই ব্যক্তি অন্য লোককে রক্ষা করত, যদি ও ঈশ্বরের সেই খ্রীষ্ট, তাঁর মনোনীত হয়, তবে নিজেকে রক্ষা করুক,
\s5
\v 36 আর সেনারাও তাঁকে ঠাট্টা করল, তাঁর কাছে অম্লরশ নিয়ে বলতে লাগল,
\v 37 তুমি যদি যিহূদিদের রাজা হও, তবে নিজেকে রক্ষা কর,
\v 38 আর তাঁর উপরে ফলকে এই লেখা ছিল,"এ যিহূদীদের রাজা l"
\s5
\v 39 আর যে দুজন অপরাধীকে ক্রুশে ঝোলানো হয়েছিল, তাদের মধ্যে এক জন তাঁকে নিন্দা করে বলতে লাগল, তুমি নাকি সেই খ্রীষ্ট? নিজেকে ও আমাদের রক্ষা কর l
\v 40 কিন্তু অন্যজন উত্তর দিয়ে তাকে ধমক দিয়ে বলল, তুমি কি ঈশ্বরকে ভয় কর না? তুমিও তো একই শাস্তি পাচ্ছ l
\v 41 আর আমরা যে শাস্তি পাচ্ছি তা ন্যায্য; কারণ যা যা করেছি, তারই যোগ্য শাস্তি পাচ্ছি; কিন্তু ইনি অন্যায় কাজ কিছুই করেন নি l
\s5
\v 42 পরে সে বলল, যীশু, আপনি যখন নিজের রাজ্যে আসবেন, তখন আমাকে মনে করবেন l
\v 43 তিনি তাকে বললেন, আমি তোমাকে সত্যি বলছি, আজই তুমি আমার সঙ্গে পরমদেশে যাবে l
\s5
\v 44 তখন বেলা প্রায় বারোটা আর তিনটা পর্যন্ত সারা দেশ অন্ধকারময় হয়ে থাকল l
\v 45 সূর্যের আলো থাকলো না, আর মন্দিরের পর্দাটা মাঝামাঝি চিরে ভাগ হয়ে গেল l
\s5
\v 46 আর যীশু খুব জোরে চিৎকার করে বললেন, পিতা, তোমার হাতে আমার আত্মা সমর্পণ করলাম; আর এই বলে তিনি প্রাণ ত্যাগ করলেন l
\v 47 যা ঘটল, তা দেখে শতপতি ঈশ্বরের গৌরব করে বললেন, সত্যিই, এই ব্যক্তি ধার্মিক ছিলেন l
\s5
\v 48 আর যেসব লোক এই দৃশ্য দেখার জন্য এসেছিল, তারা এই সব দেখে বুক চাপড়াতে-চাপড়াতে ফিরে গেল l
\v 49 আর তাঁর পরিচিত সবাই এবং যে স্ত্রীলোকেরা তাঁর সঙ্গে গালীল থেকে এসেছিলেন তারা দুরে এই সব দেখছিলেন l
\s যীশুর সমাধি l
\s5
\v 50 আর দেখ, যোষেফ নামে এক ব্যক্তি ছিলেন, তিনি মন্ত্রী, এক সৎ ধার্মিক লোক,
\v 51 এইব্যক্তি ওদের পরিকল্পনাতে ও কাজে সম্মত ছিলেন না; তিনি অরিমাথিয়া শহরের লোক; তিনি ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য অপেক্ষা করছিলেন l
\s5
\v 52 এব্যক্তি পীলাতের কাছে গিয়ে যীশুর মৃতদেহ চাইলেন;
\v 53 পরে তা নামিয়ে সরু চাদরে জড়ালেন, এবং পাথরে খোদাই করা এমন এক কবরের মধ্যে তাকে রাখলেন, যাতে কখনো কাউকে রাখা হয়নি l
\s5
\v 54 সেই দিন আয়োজনের দিন এবং বিশ্রামবার প্রায় শুরু হয়ে গিয়েছিল l
\v 55 আর যে-স্ত্রীলোকেরা তাঁর সাথে গালীল থেকে এসেছিলেন, তারা পিছন পিছন গিয়ে সেই কবর এবং কীভাবে তাঁর দেহ রাখা যায়, তা দেখলেন;
\v 56 পরে ফিরে গিয়ে সুগন্ধি দ্রব্য ও তেল প্রস্তূত করলেন l
\s5
\c 24
\ms যীশুর পুনরুত্থান ও স্বর্গে গমন l
\v 1 সপ্তাহের প্রথম দিন তারা খুব ভোরে উঠে ঐ কবরের কাছে এলেন, যে সুগন্ধি দ্রব্য প্রস্তূত করেছিলেন তা নিয়ে আসলেন;
\v 2 আর দেখলেন, কবর থেকে পাথরটা সরানো রয়েছে,
\v 3 কিন্তু ভিতরে গিয়ে প্রভু যীশুর দেহ দেখতে পেলেন না l
\s5
\v 4 তারা এই বিষয়ে ভাবছেন, এমন সময়ে, দেখ, উজ্জ্বল পোষাক পরা দুজন পুরুষ তাদের কাছে দাঁড়ালেন l
\v 5 তখন তারা ভয় পেয়ে মাটির দিকে মুখ নীচু করলে সেই দুই ব্যক্তি তাদের বললেন, মৃতদের মধ্যে জীবিতের খোঁজ করছ কেন?
\s5
\v 6 তিনি এখানে নেই, কিন্তু উঠেছেন l গালীলে থাকতে তিনি তোমাদের যা বলেছিলেন, তা মনে কর;
\v 7 তিনি তো বলেছিলেন, মানবপুত্রকে পাপী মানুষদের হাতে সমর্পিত হতে হবে, ক্রুশারোপিত হতে এবং তৃতীয় দিনে উঠতে হবে l
\s5
\v 8 তখন তাঁর সেই কথাগুলি তাদের মনে পড়ল;
\v 9 আর তারা কবর থেকে ফিরে গিয়ে সেই এগারো জনকে ও অন্য সবাইকে এই সব খবর দিলেন l
\v 10 এরা মগ্দলীনী মরিয়ম, যোহানা ও যাকোবের মা মরিয়ম; আর এদের সঙ্গে অন্য স্ত্রীলোকরাও প্রেরিতদের এই সব কথা বললেন l
\s5
\v 11 কিন্তু এই সব কথা তাদের কাছে গল্পের মত মনে হল; তারা তাদের কথায় বিশ্বাস করলেন না l
\v 12 তা সত্ত্বেও পিতর উঠে গিয়ে কবরের কাছে দৌড়ে গেলেন এবং নীচু হয়ে ভালো করে দেখলেন, শুধু কাপড় পরে রয়েছে; আর যা ঘটেছে, তাতে অবাক হয়ে নিজের জায়গায় ফিরে গেলেন l
\s5
\v 13 আর দেখ, সেই দিন তাদের দুজন জেরুশালেম থেকে সাত মাইল দুরে ইম্মায়ূ নামে গ্রামে যাচ্ছিলেন,
\v 14 এবং তারা ঐ সব ঘটনার বিষয়ে একে-অপরে কথা-বার্তা বলছিলেন l
\s5
\v 15 তারা কথা-বার্তা ও একে-অপরে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন, এমন সময়ে যীশু নিজে এসে তাদের সঙ্গে সঙ্গে যেতে লাগলেন;
\v 16 কিন্তু তাদের চোখ বন্ধ হয়েছিল, তাই তাঁকে চিনতে পারলেন না l
\s5
\v 17 তিনি তাদের বললেন, তোমরা চলতে চলতে একে-অপরে যে সব কথা বলাবলি করছ, সে সব কী ? তারা বিষন্ন ভাবে দাঁড়িয়ে থাকলেন l
\v 18 পরে ক্লিয়পা নামে তাদের এক জন উত্তর করে তাঁকে বললেন, আপনি কী একা জিরুশালেমে বাস করছেন, আর এই কয়েক দিনের মধ্যে সেখানে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা জানেন না?
\s5
\v 19 তিনি তাদেরকে বললেন, কী কী ঘটনা? তারা তাঁকে বললেন, নাসরতীয় যীশুর বিষয়ে ঘটনা, যিনি ঈশ্বরের ও সব লোকের সামনে ও কাজে ও কথায় মহান ভাববাদী ছিলেন;
\v 20 আর কীভাবে প্রধান যাজকেরা ও আমাদের ধর্মশিক্ষক প্রাণদণ্ডের আদেশের জন্য তাকে সমর্পণ করলেন, ও ক্রুশে দিলেন l
\s5
\v 21 কিন্তু আমরা আশা করছিলাম যে, তিনি সেই ব্যক্তি, যিনি ইস্রায়েলকে মুক্ত করবেন l আর এসব ছাড়া আজ তিনদিন হচ্ছে, এসব ঘটেছে l
\s5
\v 22 আবার আমাদের কয়েকজন স্ত্রীলোক আমাদের অবাক করলেন; তারা ভোরে তাঁর কবরের কাছে গিয়েছিলেন,
\v 23 আর তাঁর দেহ দেখতে না পেয়ে এসে বললেন, স্বর্গদূতেরও দেখা পেয়েছি, এবং তাঁরা বলেন, তিনি জীবিত আছেন l
\v 24 আর আমাদের সঙ্গীদের যারা কবরের কাছে গিয়েছিল, তারাও সেই স্ত্রীলোকেরা যেমন বলেছিলেন, তেমনি দেখতে পেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁকে দেখতে পান নি l
\s5
\v 25 তখন তিনি তাদের বললেন, হে অবুঝরা, এবং ভাববাদীরা যে সব কথা বলেছেন, সেইসবে বিশ্বাস করতে পার না
\v 26 খ্রীষ্টের কী প্রয়োজন ছিল না যে, এই সব দুঃখভোগ করেন ও নিজের মহিমায় প্রবেশ করেন?
\v 27 পরে তিনি মোশি থেকে ও সমস্ত ভাববাদী থেকে শুরু করে সব পুস্তকে তাঁর নিজের বিষয়ে যে সব কথা আছে, তা তাদের বুঝিয়ে দিলেন l
\s5
\v 28 পরে তারা যেখানে যাচ্ছিলেন, সেখানে সেই গ্রামের কাছে আসলেন; আর তিনি দুরে যাবার ভাব দেখালেন l
\v 29 কিন্তু তারা অনুরোধ করে বললেন, আমাদের সঙ্গে থাকুন, কারণ সন্ধ্যা হয়ে আসল, বেলা প্রায় চলে গেছে l তাতে তিনি তাদের সঙ্গে থাকার জন্য গৃহে ঢুকলেন l
\s5
\v 30 পরে যখন তিনি তাদের সঙ্গে খাবার খেতে বসলেন, তখন রুটি নিয়ে ধন্যবাদ করলেন, এবং ভেঙ্গে তাদের দিতে লাগলেন l
\v 31 অমনি তাদের চোখ খুলে গেল, তারা তাঁকে চিনতে পারলেন, আর তিনি তাদের থেকে অদৃশ্য হলেন l
\v 32 তখন তারা পরস্পরকে বললেন, পথের মধ্যে যখন তিনি আমাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, আমাদের কাছে শাস্ত্রের অর্থ বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, তখন আমাদের ভিতরে আমাদের হৃদয় কি উদ্দীপ্ত হয়ে উঠছিল না?
\s5
\v 33 আর তারা সেই সময়েই উঠে জিরুশালেমে ফিরে গেলেন; এবং সেই এগারো জনকে ও তাদের সঙ্গীদের একসঙ্গে দেখতে পেলেন;
\v 34 তারা বললেন, প্রভু নিশ্চয় উঠেছেন, এবং শিমোনকে দেখা দিয়েছেন l
\v 35 পরে সেই দুজন পথের ঘটনার বিষয়ে, এবং রুটি ভাঙ্গার সময় তারা কীভাবে তাঁকে চিনতে পেরেছিলেন, এই সব বিষয়েও বললেন l
\s5
\v 36 তারা একে-অপর এই কথা-বার্তা বলছেন, ইতিমধ্যে তিনি নিজে তাদের মাঝে দাঁড়ালেন, ও তাদের বললেন , তোমাদের শান্তি হোক l
\v 37 এতে তারা খুব ভয় পেয়ে মনে করলেন, ভুত দেখছি l
\s5
\v 38 তিনি তাদের বললেন, কেন উদ্বিগ্ন হচ্ছ? তোমাদের মনে সন্দেহ জাগছে কেন?
\v 39 আমার হাত ও আমার পা দেখ, এ আমি নিজে; আমাকে স্পর্শ কর, আর দেখ; কারণ আমায় যেমন দেখছ, আত্মার এইরকম হাড়-মাংস নেই l
\v 40 এই বলে তিনি তাদের হাত ও পা দেখালেন l
\s5
\v 41 তখনও তারা এত আনন্দিত হয়েছিল যে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না ও অবাক হচ্ছিল, তাই তিনি তাদের বললেন, তোমাদের কাছে এখানে কি কিছু খাবার আছে?
\v 42 তখন তারা তাঁকে একটি ভাজা মাছ দিলেন l
\v 43 তিনি তা নিয়ে তাদের সামনে খেলেন l
\s5
\v 44 পরে তিনি তাদের বললেন, তোমাদের সঙ্গে থাকতে থাকতে আমি তোমাদের যা বলেছিলাম, আমার সেই কথা এই, মোশির ব্যবস্থায় এবং ভাববাদীদের পুস্তকে এবং গীতসংহিতায় আমার বিষয়ে যা যা লেখা আছে, সে সব অবশ্য পূর্ণ হবে l
\s5
\v 45 তখন তিনি তাদের বুদ্ধি খুলে দিলেন, যেন তারা শাস্ত্র বুঝতে পারে,
\v 46 আর তিনি তাদের বললেন, এই কথা লেখা আছে যে, খ্রীষ্ট দুঃখভোগ করবেন, এবং তৃতীয় দিনে মৃতদের মধ্যে থেকে উঠবেন;
\v 47 আর তাঁর নামে পাপ মোচনের জন্য অনুশোচনার কথা সব জাতির কাছে প্রচারিত হবে - জিরুশালেম থেকে শুরু করা হবে l
\s5
\v 48 তোমরাই এ সবের সাক্ষী l
\v 49 আর দেখ আমার পিতা যা প্রতিজ্ঞা করেছেন, তা আমি তোমাদের কাছে পাঠাচ্ছি; কিন্তু যে-পর্যন্ত উপর থেকে আসা শক্তি না পাও, সেই পর্যন্ত তোমরা ঐ শহরে থাক l
\s5
\v 50 পরে তিনি তাদের বৈথনিয়া পর্যন্ত নিয়ে গেলেন; এবং হাত তুলে তাদের আশীর্বাদ করলেন l
\v 51 পরে এইরকম হল, তিনি আশীর্বাদ করতে করতে তাদের থেকে আলাদা হলেন এবং স্বর্গে যেতে লাগলেন l
\s5
\v 52 আর তারা তাঁকে প্রনাম করে মহানন্দে জিরুশালেমে ফিরে গেলেন;